রবিবার, ২৩ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

সেতু ভেঙে ১১ জন নিহত

ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রায় সর্বনাশ, বউভাতের আনন্দ রূপ নিল কান্নায়

মাদারীপুর ও বরগুনা প্রতিনিধি

সেতু ভেঙে ১১ জন নিহত

বরগুনায় সেতু ভেঙে ডুবে যায় মাইক্রোবাস -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বরগুনার আমতলীতে গতকাল দুপুরে কনের বাড়ি থেকে বরের বাড়িতে বউভাত খেতে যাওয়ার পথে মাইক্রোবাস ঝুঁঁকিপূর্ণ আয়রন ব্রিজ ভেঙে ১১ জন নিহত ও নিখোঁজ রয়েছেন চারজন। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস এবং ইউপি চেয়ারম্যান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদের মধ্যে একই পরিবারের সাতজন। নিহতরা হলেন মাদারীপুর শিবচর উপজেলার ভদ্রাসন ইউনিয়নের সোহেলের বেপারীর স্ত্রী রাইতি (৩০), রুমি বেগম (৪০), ফরিদা বেগম (৪০), মুন্নি বেগম (৪০), তাহিয়া (৭), তাসদিয়া (১১), ফাতেমা বেগম (৪০)। এ ছাড়া আমতলীর দক্ষিণ তক্তাবুনিয়ার জহিরুল ইসলামের স্ত্রী জাকিয়া এবং কন্যা রিদি (৫)।

ময়নাতদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। মাইক্রোবাসটিতে চালক ছাড়া ১৫ যাত্রী ছিলেন বলে জানা গেছে। উপজেলার হলদিয়া ও চাওড়া ইউনিয়নের ঝুঁকিপূর্ণ ওই সংযোগ সেতুটি ভেঙে একটি মাইক্রোবাস ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক খালে পড়ে গিয়ে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় নারী ও শিশুসহ ১১ জনের লাশ উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে। জানা যায়, আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের হলদিয়া গ্রামের মনির হাওলাদার তার মেয়েকে বিয়ে দেন। গতকাল দুপুরে মনির হাওলাদারের নিকটআত্মীয়রা একটি মাইক্রোবাস ও একটি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে চেপে মেয়ের জামাই বাড়িতে বৌভাত খেতে যাওয়ার পথে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিন্টু মল্লিক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মনির হাওলাদারের নিকটাত্মীয়রা তার মেয়ের শ্বশুরবাড়ি আমতলী যাওয়ার পথে ব্রিজটি ভেঙে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এখন পর্যন্ত ১১টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। দুজন আহত ও চারজন নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ পেয়েছি। আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, ব্রিজ ভেঙে মাইক্রোবাস খালে পড়ার ঘটনায় নয়জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মাইক্রোবাসটি এখনো পানির নিচে রয়েছে। বরগুনার আমতলীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১১ জনের মধ্যে সাতজনই মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার ভদ্রাসন ইউনিয়নের সাহাপাড়া এলাকার। এ এলাকার সাবেক সেনা সদস্য মাহাবুবর রহমান সবুজের পরিবারের সদস্য তারা। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, খালাতো বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় পরিবারের সাত সদস্য হারান শিবচর উপজেলার ভদ্রাসন ইউনিয়নের সাহাপাড়া এলাকার সাবেক সেনা সদস্য মাহাবুবুর রহমান সবুজ। সবুজ ওই এলাকার ফজলুর রহমান খানের ছেলে। দুর্ঘটনার খবর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

এলাকাবাসী ভিড় জমান মাহাবুবুর রহমান সবুজের বাড়িতে। ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান। মাহাবুবুর রহমান সবুজ জানান, শিবচর থেকে তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা খালাতো বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বরগুনার উদ্দেশে রওনা দেন। গতকাল দুপুরে আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার সময় মাহাবুব ও তার পরিবারের সদস্যদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি লোহার ব্রিজ ভেঙে খালে পড়ে যায়। নিহতদের আত্মীয় শুক্কুর আলী নামের এক যুবক বলেন, বুধবার বিয়ের অনুষ্ঠানে তারা বরগুনা গেছিল। আজ (গতকাল) দুপুরে ব্রিজ ভেঙে সেখানে খালে পড়ে যায় তাদের মাইক্রোবাসটি। মাহাবুবের মা, ভাইয়ের স্ত্রী ও মামার পরিবারের সাত সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। দুলাল মাতুব্বর নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, পুরো গ্রামের মানুষ শোকে স্তব্ধ। আমরা খবর পেয়ে মাহাবুবের বাড়িতে এসেছি। ওদের পরিবারের কেউ বাড়িতে নেই। সবাই ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছিল। এখন বাড়িতে কেউ নেই। ভদ্রাসন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রহিম বেপারী বলেন, আমরা খবর পেয়েই বাড়িতে এসেছি। আসলে এত বড় দুর্ঘটনায় আমরা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছি। এখন তাদের লাশ বাড়িতে আনার প্রস্তুতি চলছে বলে খবর পেয়েছি।’ শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ‘আমি বিষয়টি জেনেছি। খুবই মর্মান্তিক ঘটনা।

সর্বশেষ খবর