শিরোনাম
রবিবার, ২৩ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগ ৭৬ বছরে

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগ ৭৬ বছরে

৭৬ বছরে পড়ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দলটির ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ ২৩ জুন। দীর্ঘ উত্থানপতনের ধারাবাহিকতায় দলটি টানা চার মেয়াদে রাষ্ট্রক্ষমতায় রয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস পর দলীয় ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ‘প্লাটিনাম জয়ন্তী’ উদ্যাপন করছে আওয়ামী লীগ। গত সাড়ে সাত দশক ধরে আওয়ামী লীগের পথচলা ছিল গৌরবোজ্জ্বল। দীর্ঘ এ পথচলায় সংগঠনটি বাঙালি জাতির অধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সব প্রতিবন্ধকতা জয় করে সফলতার মুকুটে সংযুক্ত করেছে একের পর এক পালক। পৃথিবীর খুব কম সংগঠন আছে যারা ধারাবাহিক সাফল্য নিয়ে ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করার সৌভাগ্য অর্জন করেছে। অনুরূপভাবে গৌরব, সাফল্য ও অর্জনের সঙ্গে আওয়ামী লীগ তার প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী ও সুবর্ণজয়ন্তী পালনের বিরল সৌভাগ্যের অধিকারী।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলির ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেছিল দলটি। সে দলই আজকের আওয়ামী লীগ। প্রতিষ্ঠার ছয় বছরের মাথায় দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরের বছর ১৯৫৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিল হয়। সে কাউন্সিলেই দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দ বাদ দেওয়া হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দলটির জন্ম মোটেই সুখকর ছিল না। ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন রোজ গার্ডেনে নতুন দল গঠন করার বিষয়টি জানাজানি হলে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ভীত হয়ে পড়ে। ওই সম্মেলন কেন্দ্র করে মওলানা ভাসানীকে গ্রেফতার করার আশঙ্কা দেখা দেয়। তখন নতুন সংগঠন গড়ে তোলার দায়িত্বশীলরা মওলানা ভাসানীকে আত্মগোপনে রাখার ব্যবস্থা করেন এবং সম্মেলনের অন্তত দুই দিন আগে তাঁকে রোজ গার্ডেনে নিয়ে আসা হয়। এরপর আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি, শামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক এবং কারাবন্দি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যুগ্মসম্পাদক করে নতুন রাজনৈতিক দল আওয়ামী মুসলিম লীগ আত্মপ্রকাশ করে। পরদিন ২৪ জুন ঢাকার আরমানিটোলা ময়দানে প্রকাশ্য জনসভার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের যে আন্দোলনের কর্মসূচি শুরু হয়, দীর্ঘ ৭৫ বছরে তার বিরাম নেই। বহু ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্যে কখনো বিরোধী দলে, কখনো সরকারে থেকে দেশ গঠনে অনন্য অবদান রেখে চলেছে মাটি ও মানুষের রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে যে ছয় দফা দেওয়া হয়, সেটিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের প্রথম পদক্ষেপ বলে মনে করা হয়। এরপর ১৯৬৯ সালে গণ অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের ভূমিকার কারণে দলটি এ অঞ্চলের নেতৃত্বে চলে আসে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দলের অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিপুল বিজয় এনে দেয়। সে বিজয়ের ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয় এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে সেনাবাহিনীর একদল বিপথগামী সদস্য। তাঁর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় তখন প্রাণে বেঁচে যান। এরপর ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। দীর্ঘ ২১ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসে ১৯৯৬ সালে। সে সরকার পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ করে ক্ষমতা ছাড়ে। এরপর ২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে পুনরায় ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ টানা চার মেয়াদের ক্ষমতায় রয়েছে। পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে যে দলটির প্রতিষ্ঠা, সে দল পেয়েছে সুরম্য ১০ তলা নিজস্ব কেন্দ্রীয় কার্যালয়। আওয়ামী লীগই একমাত্র দল, যাদের বাংলাদেশের ইতিহাসে টানা চার মেয়াদসহ পঞ্চম দফায় সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। দলটির সভানেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সুযোগ্য, প্রাজ্ঞ, কৌশলী ও সাহসী নেতৃত্বের কারণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল আওয়ামী লীগ একটানা চতুর্থ বারের মতো রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। আজ কোথায় দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ-৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই দিনে এ প্রশ্ন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব বাঙালির। সবাই একবাক্যে স্বীকার করেছেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই, তাঁর বিকল্প একমাত্র তিনিই। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথপরিক্রমায় অনেক অশ্রু, ত্যাগ আর রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি ফিরে পায় ‘ভাত ও ভোটের অধিকার’; দীর্ঘ স্বৈরশাসনের অবসানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে ও সুদক্ষ রাষ্ট্র পরিচালনায় সুশাসন, স্থিতিশীল অর্থনীতি, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, উন্নয়নে গতিশীলতা, ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিক্ষার প্রসার, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, কর্মসংস্থান, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, খাদ্যনিরাপত্তা, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুগান্তকারী উন্নয়নের ফলে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হয়েছে।

দীর্ঘ রাজনৈতিক পথপরিক্রমায় অনেক ঘাতপ্রতিঘাত, চড়াই-উতরাই ও প্রাসাদসম ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দলটি আজ এ দেশের গণমানুষের ভাবভাবনার ধারকবাহকে পরিণত হয়েছে। জন্মের পর থেকে অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে ঐতিহ্যবাহী দলটি মানুষের বিপুল সমর্থনে বেঁচে আছে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে।

কর্মসূচি : আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলীয়ভাবে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-আজ সূর্যোদয়ক্ষণে দলের কেন্দ্রীয় ও দেশব্যাপী কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং সকাল ৭টায় ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে রক্ষিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধানিবেদন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন, বেলুন ও পায়রা ওড়ানোর মধ্য দিয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন।

সকাল সাড়ে ১০টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করা হবে। আজ বিকাল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলের পক্ষ থেকে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতির বক্তব্য দেবেন।

দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার গৌরবোজ্জ্বল ৭৫তম বার্ষিকীতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনসহ কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়োপযোগী কর্মসূচির মাধ্যমে যথাযথ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের জেলা, উপজেলাসহ সব স্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর