সোমবার, ২৪ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

সরানো হলো সেই মতিউরকে

নেই এনবিআর ও সোনালী ব্যাংকে, দুদকের তিন সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠন

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরানো হলো সেই মতিউরকে

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমানের দুর্নীতি তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একজন উপ-পরিচালকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি এরই মধ্যে তদন্ত শুরু করেছে। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন। তিনি বলেন, গত ৪ জুন মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্তের সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্তের পর দুদকের উপ-পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেনকে প্রধান করে একটি অনুসন্ধান কমিটি করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান ও উপ-সহকারী পরিচালক সাবিকুন নাহার। তারা কাজ শুরু করেছেন। এর আগে সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদ থেকে মতিউর রহমানকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের সভায় তিনি যোগ দেননি। সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী সাংবাদিকদের জানান, মতিউর রহমান আর কখনো সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সভায় আসবেন না। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মতিউর রহমানকে তিন বছরের জন্য সোনালী ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগ দিয়েছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি তার মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার কথা। এ ছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্টের পদ থেকে মতিউর রহমানকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। জনস্বার্থে জারিকৃত এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে। কেন এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, প্রজ্ঞাপনে তা উল্লেখ করা হয়নি। কোরবানি দেওয়ার জন্য রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদিক এগ্রো থেকে ১২ লাখ টাকায় একটি ছাগল কিনে আলোচনায় আসেন মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর ইফাতের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্কই নেই বলে দাবি করেন মতিউর রহমান। আর ইফাত দাবি করেছিলেন, তিনি কোনো ছাগল কেনেননি। জানা গেছে, সাদিক এগ্রো থেকে একটি ছাগল ছাড়াও ঢাকার কয়েকটি খামার ও একটি হাট থেকে এ বছর ৭০ লাখ টাকার গরু কিনেছেন ইফাত। গত বছরও কিনেছিলেন ৬০ লাখ টাকার পশু। আলোচিত ইফাত পাখি পুষতে পছন্দ করেন। আড়াই লাখ টাকার পাখি ছাড়াও তার ঘরে মিসরের বাজরিগার পাখি, অস্ট্রেলিয়ার গালা কাকাতুয়াসহ নানা প্রজাতির বিড়ালও রয়েছে। মতিউর পরিবারের দেশে-বিদেশে অঢেল সম্পদ, নামিদামি ব্র্যান্ডের গাড়ি। ময়মনসিংহের ভালুকায় বিশাল জুতার কারখানা। গাজীপুরে পিকনিক ও শুটিং স্পট। নরসিংদী শ্বশুরবাড়িতে রাজকীয় বাড়ি, রায়পুরায় রিসোর্ট। ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোতে রয়েছে অসংখ্য প্লট-ফ্ল্যাট এবং মতিউরের দুই স্ত্রীর নামে বেনামে সম্পদ রয়েছে।

মতিউরের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্তে নেমেছে দুদক : এনবিআর কর্মকর্তা ড. মো. মতিউর রহমানের ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের ঝালপাজা মৌজায় একটি শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে গ্লোবাল সুজ লিমিটেড নামে রয়েছে বিশাল এক জুতার ফ্যাক্টরি। এখানে প্রায় ৩০০ বিঘা জমিজুড়ে রয়েছে গ্লোবাল সুজ লিমিটেড কারখানা, বাগানবাড়ি, দেশি-বিদেশি ফলের বাগান ও ফসলি জমি। শুধু ভালুকা নয়; গাজীপুরের পূবাইলেও রয়েছে মতিউর রহমানের বিশাল সাম্রাজ্য। পূবাইলের খিলগাঁওয়ের টঙ্গী ঘোড়াশাল সড়কের দক্ষিণ পাশে বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে তুলেছেন আপন ভুবন পিকনিক অ্যান্ড শুটিং স্পট। পূবাইল ইউনিয়ন ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, পূবাইলের খিলগাঁও মৌজায় ড. মো. মতিউর রহমানের নামে ৩৬৫৬ নম্বর জোতে ০.২৭০০ একর (২৭ শতাংশ) এবং একই মৌজায় ৪২৪৯ নম্বর জোতে ০.১৪৪০ একর (১৪ শতাংশ) ভূমির নামজারি রেকর্ড রয়েছে। এ ছাড়া মো. মতিউর রহমান, তার স্ত্রী লায়লা কানিজ ও মেয়ে ফারজানা রহমানের নামে খিলগাঁও মৌজায় ৩৫৫৭ নম্বর জোতে ০.৪৮১৬ একর (৪৮ শতাংশ), একই মৌজায় ৩৬৫২ নং জোতে ড. মো. মতিউর রহমানের স্ত্রী লায়লা কানিজ ও পুত্র আহমেদ তৌফিকুর রহমান (অর্ণব)- এর নামে ০.৪৫১৬২৫ একর (৪৫ শতাংশ) ভূমির নাম জারির তথ্য পাওয়া যায়। চারটি নামজারিতে মোট এক একর ৩৪ শতাংশ জমি। এখানেই শেষ নয় মতিউর রহমানের আমলনামা। মতিউর রহমানের বাড়ি বরিশালের মুলাদী উপজেলায়। ওই এলাকায় বাড়িঘর ছাড়াও তার নামে প্রায় ১ হাজার ৫০০ বিঘা জমি রয়েছে। নরসিংদীর মরজালে তার স্ত্রী উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকীর নামে ১০০ বিঘা জমির ওপর রয়েছে ওয়ান্ডার পার্ক অ্যান্ড ইকো রিসোর্ট। তার মেয়ে ফারজানা ইসপিতার নামে মরজাল বাসস্ট্যান্ড ও আশপাশ এলাকায় ১০ বিঘা জমি রয়েছে। এ ছাড়াও ছেলে আহম্মদ তৌফিক অনুদ ও মেয়ে ফারজানা ইসপিতার নামে কমপক্ষে ৫০ বিঘা জমি রয়েছে। নাটোরের সিংড়ায় ২০ বিঘা জমি রয়েছে। স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকীর নামে নরসিংদীর রায়পুরায় মরজালে ৪ বিঘা জমির ওপর রয়েছে সুরম্য অট্টালিকা। শুধু তাই নয়, রাজধানীর অভিজাত এলাকায় মতিউর, তার স্ত্রী-সন্তান, আত্মীয়দের নামে-বেনামে ৪০টি প্লট আছে। গুলশান-২ এ শাহাবুদ্দিন পার্কের উল্টো দিকে একটি ভবনে চারটি ফ্ল্যাট আছে। গুলশানের একটি ভবনে রয়েছে আটটি ফ্ল্যাট। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই ও যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে বিপুল পরিমাণ সম্পদ।

সর্বশেষ খবর