সোমবার, ২৪ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

মিয়ানমারের ইয়াবা বিকল্প রুটে

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এবং আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষের মধ্যেও থেমে নেই ইয়াবা পাচার। বরং টেকনাফের বিকল্প রুটেই আসছে ইয়াবার ঢল। বর্তমানে সীমান্তবর্তী ছয় জেলার শতাধিক পয়েন্ট দিয়ে আসছে মাদকের চালান। বাংলাদেশে মাদকের চালান পাচারের নেপথ্যে কাজ করছে বাংলাদেশ-ভারত এবং মিয়ানমারের ত্রিদেশীয় দুর্গম পাহাড়ি এলাকা ‘ব্ল্যাক ট্রায়াঙ্গেল’ সক্রিয় ২০ বিচ্ছিন্নবাদী ও শতাধিক মিলিশিয়া বাহিনী। দেশের সীমান্ত এলাকার অপরাধ নিয়ে গবেষণা করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চট্টগ্রাম মহানগর অঞ্চলের উপপরিচালক হুমায়ন কবির খোন্দকার। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের কক্সবাজার অংশের মিয়ানমার এলাকায় সংঘাতপূর্ণ হওয়ায় বিকল্প রুট ব্যবহার করে আসছে মাদকের চালান। মাদক পাচারে নেপথ্য ভূমিকা রাখছে ‘ব্ল্যাক ট্রায়াঙ্গেল’-এ সক্রিয় বিচ্ছিন্নবাদী ও মিলিশিয়া গ্রুপগুলো।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমানে মিয়ানমার থেকে ভারত হয়েই বাংলাদেশে প্রবেশ করছে ইয়াবার চালান। এক্ষেত্রে তারা মাদকের পুরনো সাত আন্তর্জাতিক রুটকে ব্যবহার করছে। মূলত মিয়ানমারের কক্সবাজারের ওপারে সংঘাত বেড়ে যাওয়ায় এ রুটগুলো ব্যবহারের হার বেড়েছে।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশে ইয়াবা পাচারের হট স্পট হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের কক্সবাজারের মিয়ানমার অংশ সংঘাতপূর্ণ হয়ে ওঠায় পরিবর্তন হয়েছে ইয়াবা পাচারের রুট। টেকনাফ অংশ দিয়ে ইয়াবার চালান তুলনামূলকভাবে কমে এলেও ইয়াবা পাচারের ঢল নেমেছে ছয় জেলার সীমান্ত এলাকায়। এ জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং ফেনী সীমান্ত এলাকায়। এ ছয় জেলার সীমান্ত এলাকার শতাধিক এলাকা মাদক প্রবেশের হট স্পটে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বান্দরবান জেলার নাইক্ষংছড়ি উপজেলার ফুতলী, লম্বাশিয়া, ভালুরখাইয়া, চাকঢালাদৌছড়ি, উত্তরপাড়া এবং বাইশফাঁড়ি। খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়, মাটিরাঙা এবং পানছড়ি উপজেলার রামগড় উপজেলার বল্টুরাম, সোনাইপুল, মহামুন, কাশিয়ারি, লাচাড়ীপাড়া। মাটিরাঙা উপজেলার লক্ষীছড়ি, দইল্যা, ওয়াশো, ছাদিয়াবাড়ী, ছলিটাছড়া, অযোধ্যা, সফিটিলা, বেলছড়ি, শান্তিপুড়, করল্যাছড়ি, আমতলী, তবলছড়ি, দেয়ানবাজার, দরপাশাবাড়ী, আছালং, ভগবানটিলা, বান্দরসিং, সীমানাপাড়া, রূপসেনপাড়া, নন্দকুমার, ছনখোলা, কচুছড়ি, বোদ্ধমনি, পিহাইট, নারাইছড়ি, লোগাং, দুদকছড়া, পুচগাং, বাপ্পীমোড় এবং বাবুড়াপাড়া। ফেনীর চার উপজেলার ৩২ পয়েন্ট। যার মধ্যে ফেনী সদর উপজেলার জের কাচার, বরাইরা, ধর্মপুর, জোয়ার কাচার, কাজিরবাগ, গীতাবাড়ী। ফুলগাজী উপজেলার পেঁচিবাড়িয়া, তারাকুচা, খাজুরিয়া, গোসাইপুর, বসন্তপুর, নোয়াপুর, জামমুড়া, মনতলা এবং কমুয়া। পশুরাম উপজেলার গুথুমা, অলকা, বিলোনিয়া, ধানকুড়া, সুবারবাজার, বাজেশপুর, জয়ন্তীনগর, বাঁশপদুয়া, কেথরাংগা। ছাগলনাইয়া উপজেলার মধুগ্রাম, দেবপুর, যশপুর, ছয়ঘরিয়া, সোনাপুর, দারোগারহাট, চম্পকনগর এবং অলিনগর। কুমিল্লা জেলায় রয়েছে ৩৬ পয়েন্ট। যার মধ্যে রয়েছে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সাহেবের টিলা, নোয়াপাড়া, বসন্তপুর, আদর্শ গ্রাম, কালিকাপুর, নাটাপাড়া, শ্যামনগর, মতিয়াতলি, কালিশপুর, সুজাতপুর এবং ধনমুড়ি। বুড়িচং উপজেলার চড়ানল, নবীয়াবাদ, হায়দরাবাদ, ভবের মুড়া, আনন্দপুর দক্ষিণ এবং গুচ্ছগ্রাম। আদর্শ সদর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর, পস্তরখিল, গোলাবাড়ী, নোয়াপাড়া, কটকবাজার, শাহপুর কাম্বারা টিলা, দলকিয়া এবং গাজীপুর। সদর দক্ষিণ উপজেলার একবালিয়া, কনেশতলা, ধনপুর, রাজেশপুর এবং বিরাহিমপুর। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সালদা নদী, নারায়ণপুর, তেঁতাভূমি, আশাবাড়ী এবং হরিমঙ্গল। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার চার উপজেলার ৩৪ পয়েন্ট। এ পয়েন্টগুলোর মধ্যে রয়েছে বিজয়নগর উপজেলার সিংগারবিল, বিষ্ণপুর, নোয়াবাদী, নলগড়িয়া, ইকরতলী, সেজামুড়া, কামালমুড়া, চাঁদপুর, কালাছড়া, হরখপুর। আখাউড়া উপজেলার আজমপুর, কল্যাণপুর, হিরাপুর, আবদুল্লাপুর, চানপুর, আনোয়ারাপুর, কুড়িপাইকা, সেনারবাগি, মিনারকোট, কাইয়াতলা, জয়নগর এবং সৈয়দপুর। কসবা উপজেলার অস্টজঙ্গল, কাশিনাথপুর, কালিকাপুর, গোসাইপুর, গঙ্গনগর, তারাপুর, রাহতখোলা, চাটুয়াখোলা, গোসাইপুর, কৈয়াপনিয়া, তারাপুর এবং আকবপুর। ইয়াবা পাচারের রুটগুলোতে সক্রিয় রয়েছে বাংলাদেশ-ভারত এবং মিয়ানমারের ত্রিদেশীয় দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ‘ব্ল্যাক ট্রায়াঙ্গেল’ সক্রিয় বিচ্ছিন্নবাদী সংগঠনগুলো। ব্ল্যাক ট্রায়াঙ্গেল নিয়ন্ত্রণ করে কমপক্ষে ২০ বিচ্ছিন্নবাদী সংগঠন ও শতাধিক মিলিশিয়া গ্রুপ। যার মধ্যে রয়েছে বিচ্ছিন্নবাদী সংগঠনের একটি কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। এ ছাড়াও রয়েছে আরকান আর্মি (এএ), টাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাট অ্যালাইন্স আর্মি (এমএনডিএএ)। তাদের সহযোগী সংগঠন হিসেবে রয়েছে কাচিন ন্যাশনাল অর্গারেশন (কেএলও), ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্মেন্ট, কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (কেআইএ) এবং ইউনাইটেড ওয়াহ স্টেট আর্মি (ইউডব্লিউএসএ), কাচিন ডিফেন্স আর্মি (কেডিআই), কাচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (সিএনএফ), আরকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা), চিন ন্যাশনাল আর্মি, চিন ডিফেন্স ফোর্স (সিডিএফ), চিন লিবারেশন আর্মি, মিজু ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এমএনএফ) অন্যতম।

সর্বশেষ খবর