শিরোনাম
সোমবার, ২৪ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

শতাধিক পয়েন্ট লালমনিরহাটে

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

লালমনিরহাট সীমান্তে ঈদ ঘিরে মাদক ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে দেদার মাদক ব্যবসা করছেন মাদক কারবারিরা। মাসিক কিংবা সাপ্তাহিক মাসোহারায় প্রশাসনের সহযোগিতায় লালমনিরহাট সীমান্ত দিয়ে আসা মাদকগুলো ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। এখানেই শেষ নয়, জেলার পাড়ায় পাড়ায় গড়ে ওঠা চায়ের দোকান, গালামালের দোকানে হাত বাড়ালেই মিলছে ফেনসিডিল, হেরোইন, আফিম, মদ, ইয়াবা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্বলতায় মাদক কারবারিরা প্রকাশ্যে ব্যবসা করছে। লালমনিরহাট সীমান্তের অন্তত ১০০ পয়েন্ট দিয়ে অবাধে আসছে ফেনসিডিল। সীমান্তের গ্রামগুলোর বাসিন্দারা জানান, সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ হাজার বোতল ফেনসিডিল দেশে প্রবেশ করছে। এসব মাদক পুলিশের সহায়তায় যাচ্ছে রাজধানী ঢাকায়। মাদকবিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের মতে, জেলায় মাদক সেবনকারীর সংখ্যা ৩ লাখেরও ওপরে। তার মধ্যে নারী মাদক সেবনকারীর সংখ্যা রয়েছে ৪ হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে কলেজপড়ুয়া ছাত্রীরাও রয়েছেন। প্রতিদিন ফেনসিডিলের চাহিদা ১২ থেকে ১৫ হাজার বোতল বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। জেলায় ৫০০ মাদক কারবারি নিয়ন্ত্রণ করে এ ব্যবসা। এদের সবার নাম রয়েছে পুলিশের খাতায়। এদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা নেয় পুলিশ। মাসোহারা দিতে দেরি হলে মাদক মামলায় হতে হয় হাজতবাস। পুলিশ প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দ্রুত বাস, ট্রাক, ট্রেনসহ বিভিন্ন যানবাহনে ছড়িয়ে পড়ে দেশের আনাচে-কানাচে। মাদক কারবারিদের কাছে নিরাপদ রুট ট্রেন। মাদক আসে সীমান্তের মোগলহাট, কুলাঘাট, ফুলবাড়িঘাট, আদিতমারীর দুর্গাপুর, কালীগঞ্জের চামটা, লতাবর, লোহাকুচি, বলাইরহাট, চন্দ্রপুর, বুড়িরহাট, গোড়ল, তালুক দুলালী, হাতিবান্ধার দইখাওয়া, সিঙ্গিমারী, জাওরানী, উত্তর সিঙ্গিমারী, বড়খাতা, গোতামারী, উত্তর গোতামারী, পাটগ্রামের বুড়িমারী, মৃগলীবাড়ি, পানবাড়ী, দহগ্রাম, ঝালাঙ্গী, শমসেরনগর, বাউরা, ধবলগুড়ি, কুচলিবাড়ী, ধবলসুতিসহ বিভিন্ন পথে। সীমান্তের বাসিন্দারা জানান, সন্ধ্যা হলেই দৌড়ঝাঁপ শুরু হয় মাদক চোরাচালানিদের। গোড়ল গ্রামের শিক্ষক মনিরুজ্জামান জানান, চোরাচালানিদের দৌড়ঝাঁপে রাতে ঘুমাতে পারি না। সীমান্তবাসী প্রতিবাদ করলেই তাদের বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় জেলহাজতে। পুলিশ-মাদক কারবারির মধ্যে সখ্য খুবই।

জেলার সীমান্তবর্তী একাধিক ইউপি চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পুলিশের মাসোহারা বাণিজ্য বন্ধ না হলে সীমান্ত দিয়ে মাদক আসা বন্ধ হবে না। তাদের নিয়োগকৃত সোর্সের মাধ্যমে নিয়মিত মাসোহারা ওঠান প্রশাসনের লোকজন। তাই মাদক বন্ধ করতে হলে আগে পুলিশকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এদিকে এসব মাদক তিস্তা সেতু, কাকিনা মহিপুর সেতু, তিস্ত ব্যারাজ, খুনিয়াগাছ ঘাটসহ একাধিক পয়েন্ট দিয়ে পাচার হয়। অভিযোগ রয়েছে, এসব এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা অর্ধেক মাদক জমা দিয়ে বাকি মালামাল সোর্সের মাধ্যমে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এ ধরনের ঘটনা লালমনিরহাটে ঘটছে প্রতিনিয়ত। লালমনিরহাট শহরের বাবুপাড়া, সাহেবপাড়া, ওয়ারলেস কলোনি, শাহজাহান কলোনি, টিউময়েলপাড়া, কাজী কলোনি, শসান কলোনি, বিএনপি কলোনি, সুরকীমিল কলোনি, নবাবেরহাট, নয়ারহাট, সুকানদীঘি, নামাটারী, পানির ট্যাংকি, বানভাসামোড়, ফুলগাছ রেলগেট, পুকুরপাড়, গোশালা বাজার এলাকা মাদকে সয়লাব। এ ছাড়াও কুলাঘাট, মোগলহাট, খুনিয়াগাছ, সাপ্টীবাড়ি, বড়বাড়ী, মহেন্দ্রনগর, তিস্তা, গোকুন্ডা, মোস্তফি এলাকাও মাদকের এলাকা বলে পরিচিত। শহরে প্রতিটি ফেনসিডিল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায় পাওয়া যায়। নেশার টাকা জোগাড় করতে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানিসহ নানা অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে মাদকসেবীরা। একাধিক মাদক কারবারি জানান, পুলিশকে টাকা দিয়ে ব্যবসা করি। মাসে মাসে মাসোহারা দিতে হয়। মাসোহারার টাকা না দিলে গ্রেফতার করে চালান দেয়। ঘাটে ঘাটে পয়সা না দিলে এ ব্যবসা হয় না। জেলা জজ কোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট আকমল হোসেন জানান, পুলিশ মামলার চার্জশিট ও দুর্বল সাক্ষী দেওয়ায় আসামিরা আদালত থেকে বেরিয়ে এসে আবার মাদক কারবারে জড়াচ্ছে। মাদক বন্ধ করতে হলে পুলিশকে কঠোর হতে হবে বলেও জানান এ আইনজীবী। লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। বিজিবির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারাও কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

সর্বশেষ খবর