মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

তিস্তা গঙ্গার পানি নিয়ে ফের আপত্তি মমতার

কলকাতা প্রতিনিধি

তিস্তা গঙ্গার পানি নিয়ে ফের আপত্তি মমতার

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন আর গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি নবায়ন বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার একতরফা সিদ্ধান্ত নিলে দেশজুড়ে তুমুল আন্দোলন করা হবে। মমতা গতকাল রাজ্য সরকারের সচিবালয় নবান্নে স্থানীয় সরকার সংস্থা ও উন্নয়ন বিভাগের পর্যালোচনা সভায় বৈঠকে বক্তৃতা করছিলেন। মমতা অভিযোগ করেন, বাংলাকে না জানিয়েই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশের কাছে পানি বিক্রি করতে চাইছে। তিনি হুঁশিয়ারি করে বলেন, কেন্দ্র যদি একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নেয় তবে তার প্রতিবাদে গোটা দেশজুড়ে তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। তিনি জানান, এ বিষয়ে তিনি দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীকে একটা কড়া চিঠিও পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গত শনিবার দিল্লি সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে ১০ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। ওইদিন দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা দেন, তিস্তা উন্নয়ন প্রকল্প সমীক্ষার ব্যাপারে ভারতের একটি কারিগরি দল খুব শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবে। ২০২৬ সালের গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। তার নবায়নের জন্য উভয় দেশের কারিগরি বিশেষজ্ঞরা আলোচনা শুরু করবেন। নবান্নের বৈঠকে মমতা ব্যানার্জি বলেন, একদিকে কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার পানি বিক্রি করে দিচ্ছে। সিকিম যখন তিস্তা নদীর ওপর ১৪টা হাইড্রো পাওয়ার (জলবিদ্যুৎ) করেছে তখন তারা (কেন্দ্র সরকার) চোখে দেখেনি। আর এখন বলছে সব পানি দিয়ে দাও। কিন্তু দিতে তো আপত্তি নেই। আমার থাকলে তো দেব। আমরা বাংলাদেশকে যথেষ্ট ভালোবাসি। তাদের জন্য আমরা ছিটমহল করে দিয়েছি। আমি নিজে যখন রেলমন্ত্রী ছিলাম তখন ভারত-বাংলাদেশ রেলওয়ে সার্ভিস করে দিয়েছি। বাস সার্ভিস পরিষেবা চালু করেছি। আমি বন্ধুত্ব করতে চাই কিন্তু বাংলাকে বিক্রি করে দেওয়ার স্বার্থে নয়। মমতা বলেন, ‘পানির আরেক নাম জীবন। ওরা (কেন্দ্র) জানে না যে, উত্তরবঙ্গের একাংশের মানুষ আগামী দিনে খাবার পানি পাবে না। তিস্তায় পানি নেই। ভাবছে গায়ের জোরে উত্তরবঙ্গ থেকে জিতেছি বলে উত্তরবঙ্গের মানুষকে বঞ্চিত করব।’ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বাংলাকে বঞ্চনা ও ভাতে মারার অভিযোগ করে মমতা ব্যানার্জি বলেন, বাংলাকে শেষ করে দেওয়ার জন্য ভাতে মারা চক্রান্ত চলছে। আবার বলছে তিস্তার পানি দেবে। যেন মনে হচ্ছে ওরা সব মহারাজ! মহাধিপতি হয়ে গেছে। নির্বাচন শেষ হওয়ার পর লোকসভা সদস্যদের এখনো পর্যন্ত শপথ অনুষ্ঠান হলো না। এরই মধ্যে আমাদের না জানিয়ে বাংলার পানি বিক্রি করে দিল! মমতার অভিমত, ‘বাংলাকে বঞ্চনা এবং বাংলার পানি বিক্রি দেওয়ার অর্থ হলো- আগামী দিন গঙ্গার ভাঙন আরও বাড়বে, মানুষের ঘরবাড়ি পানির নিচে তলিয়ে যাবে। এমনিতে ফারাক্কায় ড্রেজিং করে না। ফলে কলকাতা বন্দর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, লাখ লাখ মানুষের জীবিকা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’ গঙ্গা চুক্তি নিয়ে কেন্দ্রকে নিশানা করে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস প্রধানের অভিযোগ, ফারাক্কা নিয়ে আবার চুক্তি নবীকরণ হচ্ছে কিন্তু আমাদের জানানো হয়নি। বাংলাকে বাদ দিয়ে আগেই এ বিষয়গুলোকে নিয়ে বৈঠক হয়েছে। আর ফারাক্কা চুক্তির কারণে আমরা ১৯৯৬ সাল থেকে কষ্ট ভোগ করছি। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে আমাদের যে রুপি দেওয়ার কথা ছিল তা দেওয়া হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাটের ওপর দিয়ে বয়ে চলা আত্রেয়ী নদীর ওপর বাংলাদেশের তরফে তাদের সীমানায় বাঁধ দেওয়া নিয়েও কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশেরও সমালোচনা করেছেন মমতা। তিনি বলেন, আত্রেয়ী নদী দিয়ে একটা সময় পানি আসত। যার ফলে বালুরঘাটে তথা গোটা দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মানুষ সেই পানি পেত। কিন্তু চীনকে দিয়ে বাংলাদেশ সেখানে একটা বাঁধ তৈরি করে পুরো পানিটা বন্ধ করে দিয়েছে। আমি বারবার চিঠি দিয়ে এর প্রতিবাদ করেছি। বলেছি যে, আমাদের পানি এপারে আসা বন্ধ করে দিয়েছে কিন্তু তা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তিনি জানান, গোটা বিষয়ের ওপর পশ্চিমবঙ্গের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করে তিনি দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কড়া চিঠি দিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর