মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

হুমকি স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি : এডিটরস গিল্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুলিশ সদস্যদের অস্বাভাবিক সম্পদ অর্জন বিষয়ক প্রতিবেদন নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সম্পাদকদের সংগঠন এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশ। গতকাল এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, গণমাধ্যমকে ঢালাওভাবে দোষারোপ করে দেওয়া এমন বিবৃতি সমাজে স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি হুমকির পরিবেশ তৈরি করে। এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশের সভাপতি মোজাম্মেল বাবু স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি দেশের সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার অস্বাভাবিক সম্পদের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বেশ কিছু প্রতিবেদন প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে দেশের সব গণমাধ্যমের সম্পাদক বরাবর চিঠি দিয়েছে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। এ চিঠিতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে কোনো ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন ও সাংবাদিকতার নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণের কথা বলা হয়েছে যা সরাসরি সাংবাদিকতায় হস্তক্ষেপ। ব্যক্তির দায় কোনো বাহিনীর নয় বলা হলেও এখানে সরাসরি ব্যক্তির দায়ই পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন নিল। বিবৃতিতে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ত্যাগ, জঙ্গিবাদ দমনে পুলিশের সাহসী ভূমিকা, যুদ্ধাপরাধের বিচারের সময় পুলিশ সদস্যদের ওপর স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির আক্রমণ, করোনার সময় পুলিশের মানবিক আচরণসহ যাবতীয় ইতিবাচক কাজ গণমাধ্যমে সবসময়ই প্রকাশিত হয়েছে, এখনো হচ্ছে। কিন্তু সরকারের দায়িত্বশীল পদে কর্মরত থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এমন সম্পদ অর্জন হলে তার তথ্য অনুসন্ধান করে পেশাদারিত্বের সঙ্গে তা প্রকাশের কাজটিও নিশ্চয়ই করবে গণমাধ্যম।

এতে আরও বলা হয়, এসব প্রতিবেদনে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে প্রতিবাদ দিতে পারেন, প্রেস কাউন্সিলেও অভিযোগ করতে পারেন। কিন্তু ঢালাওভাবে দোষারোপ করে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন যে বক্তব্য দিয়েছে তা স্বাধীন গণমাধ্যম ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা চর্চার প্রতি অযৌক্তিক ও অশোভন আক্রমণ।

পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতি প্রত্যাহার চায় ক্র‌্যাব : গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র‌্যাব)। গতকাল এক বিবৃতিতে ক্র‌্যাব এ দাবি জানায়। বিবৃতিতে ক্র‌্যাব সভাপতি কামরুজ্জামান খান ও সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে পুলিশের কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার অস্বাভাবিক সম্পদের মালিক হওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে এই সংবাদ প্রকাশ হয়েছে বলে আমরা মনে করি না। সাংবাদিকরা সবসময় দায়িত্বশীল এবং তথ্যভিত্তিক সংবাদ প্রকাশ করে থাকেন। সম্প্রতি পুলিশের সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়ে এসব সংবাদ তারই ধারাবাহিকতা। সংবাদ প্রকাশের পর বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সম্প্রতি বিবৃতি দিয়ে যে ভাষায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে, তা স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থি। ওই বিবৃতির মধ্য দিয়ে কতিপয় কর্মকর্তার ব্যক্তিগত দুর্নীতি উৎসাহিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে সাংগঠনিক পর্যায়ে পারস্পরিক দোষারোপ করা যৌক্তিক নয়। দেশের স্বার্থে সাংবাদিক ও পুলিশ অপরাধ এবং অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে একসঙ্গে কাজ করে আসছেন। আগামী দিনেও একই সঙ্গে কাজ করবে।

ক্র‌্যাব সবসময় সংগঠনের সদস্যদের পেশাদারিত্বকে সম্মান করে, সেই সঙ্গে সদস্যদের আত্মমর্যাদা, নিরাপত্তা ও স্বার্থসংরক্ষণে কাজ করে। ক্র‌্যাব সদস্যদের প্রতিটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বরাবরই সত্য উঠে আসে, যা সব মহলে প্রশংসিত। বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যনির্ভর প্রতিবেদন প্রকাশ করে ক্র‌্যাব সদস্যরা নিয়মিত পুরস্কৃত হচ্ছেন। পেশাদার সাংবাদিকদের সম্মান ও আত্মমর্যাদা রক্ষায় সবসময় গুরুত্ব দিয়ে থাকে ক্র‌্যাব।

সংগঠনটির ভাষ্য, দুর্নীতি-অনিয়মের অনুসন্ধান এবং ক্ষমতার অপব্যবহার উন্মোচন করাও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার কাজ বলে মনে করে ক্র‌্যাব। বাধা-বিপত্তির মুখেও সাংবাদিক সমাজ তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করে যাবে। স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ বিঘ্নিত হয়, এমন বক্তব্য দেওয়া থেকে সবাইকে বিরত থাকার আহ্বান জানায় ক্র‌্যাব। কারণ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও স্বাধীন সাংবাদিকতার অধিকার বাংলাদেশের সংবিধানেই স্বীকৃত।

 

সর্বশেষ খবর