বুধবার, ২৬ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত

খালেদা জিয়ার মুক্তি ইস্যুতে মাঠে নামছে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

খালেদা জিয়ার মুক্তি ইস্যুতে মাঠে নামছে বিএনপি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারের মূল লক্ষ্যই হলো বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতির বাইরে রাখা। সে কারণেই তাঁকে একটি মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। এটি একেবারই মিথ্যা মামলা। এর সঙ্গে বেগম জিয়ার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাঁর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

গতকাল রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সরকারের কোনো কৃতিত্ব  নেই জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যা করেছি আমরাই করেছি, পরিবার-দল করেছে। আমরা বিদেশ থেকে ডাক্তার নিয়ে এসেছিলাম। এটি সমাধান নয়। একমাত্র সমাধান, যেখানে তাঁর সঠিক চিকিৎসা হবে, সেখানে পাঠানো। তিনি আরও বলেন, পরিবারের আবেদনে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর সব ব্যবস্থা হয়েছিল। ফাইনালি আবেদনটি যখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে যায়, প্রধানমন্ত্রী তখন রিজেক্ট করেন। বিভিন্ন মিশনে আমরা চিঠি দিয়েছিলাম। তারা চেষ্টা করেছে। তারা বলেছে, স্যরি, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) শুনবেন না। তিনি জানান, বেগম খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিস। তখন ডাক্তাররা বলেছিলেন- লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই, যা বাংলাদেশে সম্ভব নয়। 

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি সৃষ্টি হয়েছে দেশের সার্বভৌমত্বের স্বার্থে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে যা করা প্রয়োজন, বিএনপি তা-ই করবে। একটি কথা পরিষ্কার করে বলি, আমাদের আন্দোলন কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে নয়, এ সরকারের বিরুদ্ধে। ভারতের কাছ থেকে দাবি আদায়ে সরকার সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হচ্ছে। পানির হিস্সা নিয়ে আলোচনা না করেই চুক্তি করে যাচ্ছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, কানেকটিভিটি আমার দেশের স্বার্থে হবে। নিজ দেশের স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে হবে না। তিস্তার পানিকে বাদ দিয়ে কোনো চুক্তি হবে না। সরকার পানির বিষয়ে কিছু করছে না, সীমান্ত হত্যা নিয়ে কিছুই বলছে না। প্রধানমন্ত্রীর সফরে ভারতের সঙ্গে হওয়া চুক্তিগুলোতে কোথায় বাংলাদেশের স্বার্থ রয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন বিএনপির মহাসচিব। বিএনপি ভারতের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে- সরকারি দলের এমন মন্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমরা বিক্রি হলে তো সরকারেই থাকতাম। সরকারপ্রধান তো আগেই বলেছেন, আমি ভারতকে সবকিছু উজাড় করে দিয়েছি। উজাড় করে দিয়ে তো তিনি রেজাল্ট পাচ্ছেন। এবারও সব উজাড় করে দিয়ে এসেছেন, আবার রেজাল্ট পাবেন।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত : রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। ২৪ ঘণ্টা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখার পর সোমবার তাঁকে সিসিইউর সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ক্যাবিনে স্থানান্তর করা হয়। হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানোর পর তাঁর শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে বলে গতকাল জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ৭৯ বছর বয়সি খালেদা জিয়া হৃদযন্ত্রের জটিলতা ছাড়াও ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, ফুসফুস, লিভার, কিডনি সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন। অসুস্থতা বাড়লে শুক্রবার রাতে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। রবিবার তাঁর হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানো হয়।

্এদিকে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলের মিডিয়া সেল সূত্রে জানা গেছে, গত রাত পৌনে ৯টার দিকে হাসপাতালে পৌঁছান মির্জা ফখরুল।

দোয়া মাহফিল : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করেছে শ্যামপুর-কদমতলী থানা বিএনপি। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আ ন ম সাইফুল ইসলামের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এতে উপস্থিত ছিলেন মহানগর দক্ষিণ বিএনপি নেতা সাবেক কাউন্সিলর হাজী মোজাম্মেল হোসেন, ইমতিয়াজ আহমেদ টিপু, শুভ সিকদার, নাসির মোল্লা, সেলিম গফুর, মো. নজরুল ইসলাম প্রমুখ।

গ্যাটকো মামলায় খালেদা জিয়ার অব্যাহতির শুনানি চলছে : গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অব্যাহতির আবেদনের ওপর শুনানি চলছে। গতকাল ঢাকার কেরানীগঞ্জ কারাগারে অবস্থিত তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালতের (অস্থায়ী) বিচারক আলী হোসাইনের আদালতে এ বিষয়ে আংশিক শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। তবে খালেদা জিয়া অসুস্থ থাকায় এদিন (গতকাল) শুনানি পেছানোর আবেদন করেছিলেন তাঁর আইনজীবীরা। কিন্তু আদালত এদিনই অভিযোগ শুনানি করতে বলেন। এরপর আংশিক শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তী শুনানির জন্য আদালত আগামী ১০ জুলাই দিন ধার্য করেছেন। বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী হান্নান ভুইঁয়া এসব তথ্য জানান।

জানা যায়, মামলার চার্জশিটভুক্ত ২৪ আসামির মধ্যে ৯ জন ইতোমধ্যে মারা গেছেন। এ ছাড়া এর মধ্যে এই মামলার ১৫ জন আসামির মধ্যে ১৪ জনের অব্যাহতির বিষয়ে শুনানি শেষ হয়েছে। গত ২৪ জানুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার অব্যাহতি চেয়ে শুনানি শুরু হয়।

২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী চারদলীয় জোট সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় এ মামলা করেন। পরের বছর ১৩ মে খালেদা জিয়াসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে এ মামলার অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গ্যাটকোকে ঢাকার কমলাপুর অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) ও চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পাইয়ে দিয়ে রাষ্ট্রের ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৬ টাকার ক্ষতি করেছেন।

চলমান এ মামলায় খালেদা জিয়া ছাড়া অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন, সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান কমোডর জুলফিকার আলী, প্রয়াত মন্ত্রী কর্নেল (অব.) আকবর হোসেনের স্ত্রী জাহানারা আকবর, দুই ছেলে ইসমাইল হোসেন সায়মন ও এ কে এম মুসা কাজল, এহসান ইউসুফ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক সদস্য এ কে রশিদ উদ্দিন আহমেদ, গ্যাটকো পরিচালক শাহজাহান এম হাসিব, সৈয়দ তানভির আহমেদ ও সৈয়দ গালিব আহমেদ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান এ এস এম শাহাদত হোসেন, বন্দরের সাবেক পরিচালক (পরিবহন) এ এম সানোয়ার হোসেন এবং বন্দরের সাবেক সদস্য লুৎফুল কবীর।

সর্বশেষ খবর