শিরোনাম
বুধবার, ২৬ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
আইনি জালে দুই প্রভাবশালী

বেনজীরের সাত পাসপোর্ট ১৫ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বেনজীরের সাত পাসপোর্ট ১৫ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদের নামে সাতটি পাসপোর্টের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তার পাসপোর্টগুলো যাচাই-বাছাই করতে পাসপোর্ট অধিদফতরের দুজন অতিরিক্ত মহাপরিচালক, দুজন পরিচালক, উপপরিচালক এবং সহকারী পরিচালকসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্বরত অন্তত ১৫ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সংস্থাটি।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের উপপরিচালক হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি টিম।

দুদক সূত্র জানায়, বেনজীরের নামে থাকা কয়েকটি পাসপোর্টের নম্বর হলো- E0017616, AA1073252, BC0111070, BM0828141 ও 800002095। এ ছাড়া তার আরও দুটি পাসপোর্ট আছে। বেনজীর তার পুলিশ পরিচয় পাসপোর্টে আড়াল করেছেন। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তিনি সরকারি চাকরিজীবী পরিচয়ে নীল রঙের অফিশিয়াল পাসপোর্ট করেননি। সুযোগ থাকার পরও নেননি লাল পাসপোর্ট। এমনকি বেসরকারি চাকরিজীবী পরিচয়ে সাধারণ পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রেও আশ্রয় নিয়েছেন নজিরবিহীন জালিয়াতির। কিন্তু নবায়নের সময় ধরা পড়লে নবায়ন কার্যক্রম আটকে দেয় পাসপোর্ট অধিদফতর। সে সময় তিনি র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) থাকায় চিঠি দেওয়া হয় র‌্যাব সদর দফতরে। তবে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে এসব ম্যানেজ করেন তিনি। পাসপোর্ট অফিসে না গিয়েই নেন বিশেষ সুবিধা। এদিকে দুর্নীতি ও বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বেনজীর ও তার পরিবার গত ২৩ ও ২৪ জুন দুদকে হাজির না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে অভিযোগের লিখিত বক্তব্য জমা দেন। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে বেনজীর আহমেদকে গত ৬ জুন ও স্ত্রী জীশান মীর্জা এবং দুই মেয়েকে ৯ জুন প্রথম দফায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে দুদক। বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও র?্যাবের ডিজি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। দুদকের অনুসন্ধানে এখন পর্যন্ত বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে ঢাকায় মোট ১২টি ফ্ল্যাট, বিভিন্ন জেলায় ৬৯৭ বিঘা জমি, ১৯টি কোম্পানির শেয়ার, ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ৩৩টি ব্যাংক হিসাব ও তিনটি বিও হিসাবের (শেয়ার ব্যবসার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত। আদালতের ওই আদেশ আসার আগেই গত ৪ মে বেনজীর আহমেদ দেশ ছাড়েন বলে জানা গেছে।

দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, বেনজীর আহমেদ পুলিশ বাহিনীর বড় পদে থেকেও পাসপোর্ট নিয়েছেন বেসরকারি চাকরিজীবী হিসেবে, যা সরকারি চাকরিবিধি ও পাসপোর্ট আইনে অপরাধ। সূত্র জানায়, বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা জব্দ করা জমি বিক্রি, হস্তান্তর বন্ধে আদালতের আদেশের কপি সংশ্লিষ্ট জেলা রেজিস্ট্রার ও সংশ্লিষ্ট সাব রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠানো হয়েছে। জমি অন্য কারোর নামে যাতে নামজারি না করা হয়, সেজন্য আদালতের রায়ের কপি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট এসিল্যান্ড অফিসে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া কোম্পানির মালিকানা হস্তান্তর বন্ধে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদফতরে আদালতের ওই আদেশ পাঠানো হয়। একই সঙ্গে ব্যাংকে জমা থাকা টাকা উত্তোলন বন্ধে অবরুদ্ধের আদেশ সোনালী ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।

গত ২৩ ও ২৬ মে তাদের নামীয় ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি, বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৩টি হিসাব জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে ৬২৭ বিঘা জমি ক্রোক করে তা দেখভালের জন্য রিসিভার নিয়োগ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিকালে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ ও সচিব খোরশেদা ইয়াসমীনের কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা। তবে তারা দুজনই বিষয়টি এড়িয়ে যান। তদন্ত কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদে পাসপোর্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন। 

দুদকের উপ-পরিচালক আকতারুল ইসলাম জানান, দুদকের একটি দল পাসপোর্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

সর্বশেষ খবর