শিরোনাম
বুধবার, ২৬ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র

কয়লা আমদানির দরপত্র মূল্যায়নে শুনানি আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কয়লা আমদানি ও সরবরাহের দরপত্র প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগে একটি আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়ামের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ (বুধবার) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আইএমইডিতে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। সূত্র জানায়, গত সোমবার প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির (সিপিজিসিবিএল) সচিবকে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) মূল্যায়ন প্যানেলের প্রধান ফারুক হোসেন চিঠি পাঠান। চিঠিতে কয়লা ক্রয় প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানকে দরপত্র সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র, ক্রয় পরিকল্পনা, বিজ্ঞাপন, দরপত্র, পুনর্মূল্যায়ন প্রতিবেদন এবং অভিযোগের লিখিত প্রতিউত্তর নিয়ে শুনানিতে অংশ নিতে বলা হয়।  শুনানির প্যানেলে থাকবেন মূল্যায়ন প্যানেল-২ এর চেয়ারম্যান মো. এনামুল কবির, অবসরপ্রাপ্ত বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন, এফবিসিসিআই পরিচালক আবুল কাশেম খান, অবসরপ্রাপ্ত সচিব ফারুক হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ নুরুজ্জামান এবং এফবিসিসিআই পরিচালক নাদিয়া বিনতে আমীন। এর আগে গত ১৩ জুন সিপিজিসিবিএলকে শুনানিতে অংশ নেওয়ার জন্য প্রথমবার চিঠি দেয় আইএমইডি। ওই চিঠিতে বলা হয়, একটি আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়ামের পক্ষে জনৈক জালাল উদ্দিন মাতারবাড়ী প্রকল্পে কয়লা সরবরাহে দরপত্র প্রক্রিয়ায় নীতিমালা ভেঙে ‘বিশেষ সুবিধা’ পেতে অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। মূল্যায়ন বিভাগে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ জুন সব পক্ষের অংশগ্রহণে শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে আরেকটি চিঠিতে শুনানির দিন একদিন এগিয়ে আনা হয়। এদিকে গত ১১ জুন এক চিঠির মাধ্যমে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কয়লা আমদানি ও সরবরাহের দরপত্র প্রক্রিয়ায় কোনো প্রকার চুক্তি সম্পাদন না করতে নির্দেশনা দিয়েছিল আইএমইডি। চিঠিতে বলা হয়েছিল, পাবলিক প্রকিউরম্যান বিধি মালা-২০০৮ অনুযায়ী সরকার কর্তৃক গঠিত রিভিউ প্যানেল হতে একটি আপিল চলমান থাকায় বিধিমালা অনুযায়ী চুক্তি সম্পাদনের নোটিস জারি করা হতে বিরত থাকার অনুরোধ করা হলো। সম্প্রতি দরপত্র প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অভিযোগ জমা দিয়েছেন দরপত্রে অংশ নেওয়া একটি আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়াম। একই কনসোর্টিয়াম সম্প্রতি আইএমইডিতেও সংশ্লিষ্ট দরপত্র পুনর্মূল্যায়নের জন্য আবেদন করেন। দরপত্র অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর সূত্রে জানা গেছে, দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী দেশি-বিদেশি চার প্রতিষ্ঠান যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রস্তাবনা দাখিল করলেও ‘আর্থিক সক্ষমতা নেই’ অজুহাতে প্রথমেই তিন প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২৭ মে কারিগরি কমিটির সভায় চারটি কনসোর্টিয়ামের সবটির আর্থিক প্রস্তাবনা বাতিল হয়। সর্বশেষ ৩১ মে সিপিজিসিবিএলের বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জাতীয় গুরুত্ব বিবেচনায় বাতিলকৃত ইউনিক সিমেন্ট কনসোর্টিয়ামকে নিয়ে সমঝোতা করার অনুমোদন দেওয়া হয়। যদিও প্রকল্প কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতায় বাতিল হওয়া তিন কনসোর্টিয়ামের একটি গত ২৯ মে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে দরপত্র পুনর্মূল্যায়নের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি কোনো উত্তর পায়নি। দরপত্রের প্রাথমিক শর্তানুযায়ী, কমপক্ষে ১২ মিলিয়ন মেট্রিক টন কয়লা আমদানির অভিজ্ঞতার শর্ত উল্লেখ ছিল, যা কয়লা আমদানি সংশ্লিষ্ট দরপত্রের জন্য একটি প্রাসঙ্গিক শর্ত। কিন্তু একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠানকে অনৈতিক সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে উক্ত শর্তটি শিথিল করে ১২ মিলিয়ন মেট্রিক টন লোহা, সার, কেমিক্যাল, সিমেন্ট অথবা খাদ্য শস্য আমদানির অভিজ্ঞতাকে যোগ্যতা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা একটি অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করে।

উল্লেখ্য, কয়লা আমদানি দরপত্রের অনিয়মের পাশাপাশি নানা অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। এর মধ্যে সম্প্রতি মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য সাধারণ কিছু ‘হ্যান্ড টুলস’ আমদানিতে বড় ধরনের অনিয়মের বিষয় উঠে এসেছে। এতে ছোট ছোট পাইপ কাটার, হাতুড়ি, মেটালসহ মোট ১৯টি সাধারণ যন্ত্রপাতি কিনতে হাজার গুণ পর্যন্ত বেশি মূল্য ধরা হয়েছে।

জানা গেছে, একটি পাইপ কাটারের দাম ধরা হয়েছে ৪৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। যেটার সাধারণ বাজারমূল্য সর্বসাকুল্যে ৭ হাজার টাকা। একটি হাতুড়ির দাম ধরা হয়েছে ৯১ হাজার টাকা। যেটার বাজার মূল্য ৮৩৪ টাকা। গত ৯ জানুয়ারি সিপিজিসিবিএলের অনুকূলে জার্মানি থেকে ৩৪৪.৫ কিলোগ্রাম ওজনের একটি চালান আসে। এই চালানের আমদানিমূল্য মোট ২.৭৫ কোটি টাকা। যেখানে দুটি পাইপ কাটারের দাম দেখানো হয়েছে ৯২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা।

সর্বশেষ খবর