বুধবার, ২৬ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গা ইস্যুর সমাধান অত্যন্ত কঠিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

রোহিঙ্গা ইস্যুর সমাধান অত্যন্ত কঠিন

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধান লিউ জিয়ানচাও বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে অনেক কথাবার্তা হচ্ছে। কিন্তু এটার সমাধান করা যে কত কঠিন সেটা আমি জানি। গতকাল রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ : সিপিসি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সংলাপ’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।

সেমিনারে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধি, কূটনীতিক, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের মতামত জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন চীন সফরের আগে দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়ন ও পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে তাদের মতামত শোনেন লিউ জিয়ানচাও।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন, সদ্য ভারত সফর শেষ করে আসা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে চার দিনের সফরে চীন যাবেন। এ সফরে ব্যবসা, বিনিয়োগসহ পারস্পরিক সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করবেন তিনি। ধারাবাহিকভাবে দুই আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রীর সফর সম্পর্কে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, চীন ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক যেমনই হোক, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই দুই দেশের সঙ্গে সম্পর্কের কাঠামো পৃথক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, শিক্ষা খাতে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতার বিষয়ে একটি পাইলট প্রকল্প চালু করা যেতে পারে। কারণ চীন প্রাথমিক ও কারিগরি শিক্ষায় বিপ্লব করেছে। বাংলাদেশের দশটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিয়ে একটি পাইলট প্রকল্প হতে পারে। ফ্রান্স ও জার্মানিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নে এ ধরনের উদ্যোগ দেখা যায়। পাশাপাশি গবেষণা, স্বাস্থ্যসেবায় একসঙ্গে কাজ করতে পারে। বাংলাদেশ ও চীনের কিছু ট্র্যাডিশনাল ওষুধের প্রচলন আছে। এগুলোকে আরও প্রমোট করা যায়। সাবেক রাষ্ট্রদূত সাব্বির আহমেদ চৌধুরী চীনকে ‘আগামী বিশ্বের নেতা’ হিসাবে তুলে ধরে বলেন, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন। বিশ্বে আগামী দিনে যে কোনো পরিবর্তন আনার সক্ষমতা তাদের রয়েছে। সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে কূটনীতিক দূরত্ব কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে চীনের যে ভূমিকা, বাংলাদেশ সেটাকে উৎসাহিত করে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা ইস্যুতেও চীনের গুরুত্বপূর্ণ কূটনীতিক ভূমিকা প্রত্যাশা করে বাংলাদেশ।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের ভালো বন্ধুরাষ্ট্র হিসাবে চীন সরকার এই সমস্যার সমাধানে তাদের সক্ষমতা কাজে লাগাবে বলে আশা করছি।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, এই বৈঠক থেকে চারটি বিষয়ে প্রশ্ন রাখতে চাই। চীনা কর্তৃপক্ষ এখানে সরাসরি উত্তর দিতে না চাইলে নাও দিতে পারেন। তা হচ্ছে- কৌশলগত সহযোগিতা, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, বার্মা অ্যাক্ট এবং তিস্তা প্রকল্প নিয়ে আপনাদের বক্তব্য শুনতে চাই। লিউ জিয়ানচাও বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরে এখানে আলোচ্য সব বিষয় আলোচনা করা হবে বলে আমি আশা রাখি। আমি চীনে গিয়েও বিষয়গুলো নিয়ে আমার সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করব, যাতে আমরা সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ ও সুযোগগুলো খুঁজে বের করতে পারি। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, শিক্ষা, যোগাযোগ, গণপরিবহন, প্রযুক্তিগত সহযোগিতার বিষয়ে আরও বিস্তারিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে অনেক কথাবার্তা হচ্ছে। কিন্তু এটার সমাধান করা যে কত কঠিন সেটা আমি জানি। তিনি আরও বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরে আওয়ামী লীগের একটি জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি দল চীন সফর করবে। সেখানে এসব নিয়ে আরও ব্যাপক আলোচনা হবে। অন্যদের মধ্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাম্যবাদী দলের মহাসচিব দিলীপ বড়ুয়া, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর