শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি

--- আলী ইমাম মজুমদার

কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, যারা অপরাধী তাদের বাছাই করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। ঠিকমতো কঠোর বিচার হলে অনেকেই ভয় পেত। যারা পালিয়ে যায় তাদের অনুপস্থিতিতে বিচার হতে পারে, সাজা হতে পারে। যেন অন্যরা দুর্নীতি করতে ভয় পায়। দুর্নীতি কমাতে সরকারি কর্মকর্তাদের হলফনামা বাধ্যতামূলক বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব কথা জানান।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এমপি সাহেবরা যেটা বলেছেন সেটার ব্যবস্থা অলরেডি আছে। এখানে ভিন্ন ফরম্যাটে আছে সেটা কার্যকরের ব্যবস্থা করা জরুরি। এ বিষয়ে সরকারের সদিচ্ছা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আইনগত ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন আছে। দরকার হলে আরও সম্প্রসারণ করা যায়।

সরকারি কর্মচারীরা প্রতিবছর রাজস্ব বোর্ডে আয়কর বিবরণীর সঙ্গে সম্পদ বিবরণী দেয়। এর মধ্যে ১৬ লাখ কর্মচারীর  অনুসন্ধান হয়তো করা সম্ভব নয়। ১৬০০ কর্মচারীর অনুসন্ধানও করতে পারবে না অন্তত ১৬০ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে পারে। তারা কীভাবে কতটুকু সম্পদ বৃদ্ধি করল, সব হিসাব ঠিক আছে কি না তা দেখা অসম্ভব কোনো কাজ নয়। হাজার হাজার লোকের জন্য হলফনামা করলে সেটি যাচাই বাছাই করতে আরও ৫টি মন্ত্রণালয় লাগবে। এসব না করে বাছাই করে যারা অপরাধী হিসেবে বিবেচিত-চিহ্নিত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। দুর্নীতিবাজদের অনেকেই চিনে জানে। এনবিআরের সদস্য মতিউর যে কোটি কোটি টাকার মালিক তারও কিন্তু ওপর মহলের প্রভাব ছিল। এর আগেও কয়েকবার তাকে নিয়ে তদন্ত হয়েছে। এখানে দুর্নীতি দমন কমিশনকে দোষ দিয়েও লাভ নেই।

আলী ইমাম মজুমদার বলেন, দুর্নীতি রোধে অনেক কিছু করা যায়, অনেক কিছু আছেও। দুর্নীতির দিকে না তাকালে এত কিছু লাগে না। পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর এত সম্পদ একদিনে করেননি। গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর দুই জেলায় সম্পদ করেছেন। সরকারের বিভিন্ন জায়গা থেকে এ সংক্রান্ত রিপোর্ট দিয়েছে কি না জানি না। না দিলে এটা তাদের ব্যর্থতা। একটি পত্রিকার রিপোর্টের আগে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সরকারের রাজনৈতিক উইং আছে, রাজনৈতিক দল আছে, দলের স্থানীয় সভাপতি সেক্রেটারি আছেন, এমপি আছেন তারাও দেখার কথা। অস্বাভাবিক সম্পদ যা স্বাভাবিক দুর্নীতির মধ্যেও পড়ে না। যেহেতু সে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করেছে তাকে কে ঠেকাত। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, হলফনামার কথা বলছেন কিন্তু সাবেক ভূমিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিদেশে হাজার কোটি টাকার সম্পদ নির্বাচনের হলফনামায় উল্লেখ করেননি। এ ক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি নির্বাচন কমিশন। এ সম্পদের উৎস কিংবা বিদেশে টাকা পাচার সম্পর্কে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

প্রসঙ্গক্রমে আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ঝিনাইদহের এমপি যিনি মারা গেছেন উনার পেশার দিকে তাকালে দেখা যায় তিনি কত কোটি কোটি টাকার মালিক। তিনি তার সব সম্পদ হলফনামায় উল্লেখ করেছেন কি? এমপিরা মনে করলে এবং আইন দরকার হলে আরও করা যেতে পারে। তবে যিনি বলেছেন হলফনামা করার তিনি হয়তো ভালো বাকিদের কি অবস্থা? এমপিদের মধ্যে দুর্নীতির মতো অপরাধের সঙ্গে কারা জড়িত আছে সেটাও দেখা দরকার। এই যে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে দিচ্ছে না, ইচ্ছে করে ঋণ খেলাপি হচ্ছে। এ ঋণ খেলাপি এক সময় হতো দুর্ঘটনাবশত। ব্যবসা বাণিজ্য নষ্ট হয়ে গেলে সমস্যায় পড়লে কেউ কেউ হয়তো ঋণ খেলাপি হতো। তবুও ব্যাংক উদ্ধারের চেষ্টা করত। এখন ঋণ খেলাপি হচ্ছে অভ্যাসগত। ঋণ নিয়ে আর দেবেই না। এটা কি দুর্নীতি নয়? যারা দিচ্ছে না এবং যে ব্যাংকাররা এ ঋণ দিচ্ছে তাদের শাস্তি হওয়া উচিত মনে করেন সাবেক এই মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ লাখ কোটি টাকার বেশি। এসব দোষী ব্যক্তিকে বিচারের আওতায় আনা দরকার।

দুর্নীতি বন্ধ করতে করণীয় জানতে চাইলে বলেন, সমাজের মধ্যে যতক্ষণ পর্যন্ত অসৎ উপায়ে অর্জিত অর্থ ভোগ করার সুযোগ থাকবে, ভোগ করতে গিয়ে যতক্ষণ বাধা বিপত্তি না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত এ দুর্নীতির প্রবণতা বন্ধ করা যাবে না। প্রতিটি দেশেই আইন থাকে। সব দেশেই অসৎ লোকদের সবাই ধরা পড়ে না, তবে যারা ধরা পড়ে কঠিন শাস্তি হয়। সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়, জেল হয় ইত্যাদি। আমরাও যদি এমন কিছু দেখতাম এমন শাস্তি হয়েছে তাহলে প্রবণতা কমত। তিনি আরও বলেন, পুলিশের আইজিপির নামে প্রথম রিপোর্ট এলো ৩১ মার্চ। মে মাসের মাঝামাঝি দুদক নড়েচড়ে বসল আর মে মাসের প্রথম দিকে নাকি দেশের বাইরে চলে গেল। একটা খবর আসার পর তার সব ব্যাংক হিসাব সাময়িকভাবে লেনদেন বন্ধ ও দেশত্যাগে নিষেজ্ঞা দেওয়া যেত পারত বলে তিনি মনে করেন।

সর্বশেষ খবর