শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

হেলিকপ্টার অভিযানে দুই আসামি গ্রেফতার

ভারতে এমপি আনার খুন রহস্য

নিজস্ব প্রতিবেদক ও ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

হেলিকপ্টার অভিযানে দুই আসামি গ্রেফতার

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার ঘটনায় আরও দুই আসামিকে খাগড়াছড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতাররা হলো- মো. মোস্তাফিজুর রহমান ফকির ও ফয়সাল আলী সাজী। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে পুলিশের একাধিক দল খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড়ে হেলিকপ্টার দিয়ে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। এরা দুজনই একটি মন্দিরে হিন্দু পরিচয়ে লুকিয়ে ছিল। অন্যদিকে, চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় গ্রেফতার আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদ ওরফে গ্যাস বাবুকে নিয়ে হত্যার আলামত এবং মুঠোফোন উদ্ধারে অভিযান চালালেও কোনো আলামত উদ্ধার করতে পারেনি। গতকাল দুপুরে ঝিনাইদহ শহরের পায়রা চত্বরসংলগ্ন গাঙ্গুলি হোটেলের পেছনে একটি পুকুর এবং ঝিনাইদহ স্টেডিয়ামের পাশের আরেকটি পুকুরে তল্লাশি চালায় গোয়েন্দা পুলিশ। তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশের ভাষ্য, এই হত্যাকান্ডে সরাসরি যুক্ত ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান ও ফয়সাল আলী সাজী। তারা খুনের আগে ২ মে কলকাতায় গিয়েছিলেন এবং দেশে ফিরেন ১৯ মে। এরপর ২১ মে এ ঘটনায় শিমুল ভূঁইয়া, তার ভাতিজা তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমান গ্রেফতার হয়। তখন মোস্তাফিজুর ও ফয়সাল আত্মগোপনে চলে যান।

ঢাকায় ফিরে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, গত ২৩ মে থেকে গ্রেফতার দুজন খাগড়াছড়ির একটি কালী মন্দিরে শিমুল রায় ও পলাশ রায় নামে আত্মগোপনে ছিলেন। মঙ্গলবার আমরা তাদের অবস্থান সম্পর্কে অবগত হই। এই দুজনের অবস্থান ছিল শিমুল ভূইয়ার পরবর্তী স্থানে। গ্রেফতারের পরপরই তারা নিজেদের জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে। পুলিশ বলছে, এমপি আনার খুনের খবর প্রকাশের পর থেকেই ক্রমাগত অবস্থান পরিবর্তন করছিলেন মোস্তাফিজুর ও ফয়সাল। তাঁদের ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় খাগড়াছড়িতে দুজনের অবস্থানের বিষয়টি জানতে পারে। পরে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদও হেলিকপ্টারযোগে খাগড়াছড়িতে যান।

ডিবি পুলিশ বলছে, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদের সঙ্গে শিমুল ভুইয়ার যোগাযোগ হয়েছিল মুঠোফোনে। সেই মুঠোফোন উদ্ধারের জন্য অভিযান চালানো হয়েছে। এই মুঠোফোন পাওয়া গেলে হত্যাকান্ডের অনেক তথ্যই বেরিয়ে আসবে। অবশ্য মুঠোফোন না পাওয়ায় আবার উদ্ধার অভিযান হবে কি না, তা বলতে পারেননি দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তারা।

এদিকে, গতকাল বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে জেলা কারাগার থেকে আসামি কাজী কামাল আহমেদকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ঝিনাইদহ শহরের পায়রা চত্বর এলাকায় আনা হয়। সেখানে গাঙ্গুলি হোটেলের পেছনে একটি পুকুরের কাছে তাকে নিয়ে যান পুলিশ সদস্যরা। এ সময় পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে কামাল আহমেদের সঙ্গে কথা বলেন পুলিশ ও ডিবি কর্মকর্তারা। এরপর জেলেদের পুকুরে নামিয়ে দেওয়া হয়, যা দেখতে চারদিকে উৎসুক জনতা ভিড় করেন।

অভিযান শুরুর ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ একটি বিশেষ হেলিকপ্টারে ঝিনাইদহ বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামে পৌঁছান। সেখান থেকে গাঙ্গুলি হোটেলের পেছনে চলা অভিযানস্থলে যান। হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, ঝিনাইদহে বাবুকে নিয়ে উদ্ধার অভিযান হয়েছে। যে মুঠোফোনে তিনি শিমুল ভুইয়ার সঙ্গে ছবি বিনিময় ও কথোপকথন করেছিলেন, সেটি উদ্ধারের জন্যই ছিল মূলত এই অভিযান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা ভালো মানুষকে হয়রানি করব না। তবে অভিযুক্ত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

পরে ঝিনাইদহ স্টেডিয়ামের পাশের আরেকটি পুকুরে মুঠোফোন উদ্ধারে অভিযান চালানো হয়। সেখানেও জাল দিয়ে টানা হলে কয়েকটি ছোট মাছ ছাড়া কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। কিছুক্ষণ অভিযানের পর তা স্থগিত করা হয়। এর আগে মঙ্গলবার গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কাজী কামাল আহমেদকে ঝিনাইদহ কারাগারে আনা হয়। উল্লেখ্য, গত ১৩ মে কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে খুন হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম। খুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১২ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে ডিবি। এই মামলায় ১৪ জুন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন কাজী কামাল আহমেদ।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র বলছে, ভারতের কলকাতার ফ্ল্যাটে খুন করার আগে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের ওপর চেতনানাশক প্রয়োগ করা হয়। এরপর তাকে বালিশচাপা দেয়। পরে তার পোশাক খুলে ছবি তোলেন খুনিরা। সেই ছবি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পাঠানো হয় কাজী কামাল আহমেদের ফোনে।

সর্বশেষ খবর