শুক্রবার, ২৮ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
দুর্নীতিকাণ্ডে তোলপাড়

হঠাৎ প্রকাশ্যে মতিপত্নী লায়লা

যোগ দিলেন উপজেলা পরিষদের বৈঠকে সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়িয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ

নরসিংদী প্রতিনিধি

হঠাৎ প্রকাশ্যে মতিপত্নী লায়লা

বৈঠকে অংশ নেন মতিউর রহমানের স্ত্রী লায়লা কানিজ

ছাগলকান্ডের বিতর্কিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য ড. মতিউর রহমানের স্ত্রী উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকী টানা ১৪ দিন পর জনসম্মুখে এলেন। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে গতকাল       বেলা ১১টায় উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে আসেন লাকী। ওই সময় উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা এবং বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট সম্পর্কিত দুটি প্রস্তুতি সভায় অংশ নেন তিনি। তখন সেখানে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে বিরক্তি প্রকাশ করেন তিনি। সাংবাদিকদের সভা কক্ষে যেতে নিষেধ করা হয়। ওই সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে বেলা ১টার দিকে একটি কালো পাজেরো গাড়িতে করে উপজেলা থেকে বের হয়ে যান চেয়ারম্যান লাকী। এ সময় অফিসের বাইরে তার বিপুল সংখ্যক কর্মী-সমর্থক উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি লায়লা কানিজ লাকী। এ সময় লাকীকে বলতে শোনা যায়, পাছে লোকে কত কিছুই বলবে। তাতে আমার কোনো কিছু আসবে যাবে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্রে জানা যায়, একটি গোপন সভায় তিনি বলেছেন, ঢাকার জাতীয় পত্রিকা ও টিভির বড় বড় সাংবাদিকসহ নরসিংদীর সাংবাদিকদের কিনেই রায়পুরা উপজেলা পরিষদে এসেছি। তারা আর কিছু করতে পারবে না। সব থেমে যাবে। উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকী আশুগঞ্জের ওজানভাটি নামক একটি রেস্তোরাঁয় রায়পুরার ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে অনির্ধারিত গোপন বৈঠককালে এসব কথা বলেন বলে সূত্র জানায়। এর আগে গত ঈদের তিন দিন আগে সর্বশেষ ১৩ জুন অফিস করেছেন লায়লা কানিজ। ছাগলকান্ডের পর থেকেই উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ জনসম্মুখে আসেননি। বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি তাকে, গতকালও সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান এই জনপ্রতিনিধি। সরকারি তিতুমীর কলেজের সহযোগী অধ্যাপকের চাকরি  ছেড়ে ২০২২ সালে রাজনীতিতে এসেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান হন লায়লা কানিজ। আছেন  জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে। ছাগলকান্ডের পর তার নামে থাকা সম্পদের বিবরণ শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। এদিকে লাকীর নির্বাচনি হলফনামা থেকে জানা গেছে, বাৎসরিক আয়, বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্ট-দোকান ও অন্যান্য ভাড়া  থেকে ৯ লাখ ৯০ হাজার, কৃষিখাত থেকে ১৮ লাখ, শেয়ার-সঞ্চয়পত্র-ব্যাংক আমানতের লভ্যাংশ থেকে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৫০০, উপজেলা চেয়ারম্যানের সম্মানী বাবদ ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৭৫, ব্যাংক সুদ থেকে ১ লাখ ১৮ হাজার ৯৩৯ টাকার তার সম্পদ। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার জমা রয়েছে ৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। কৃষি জমির পরিমাণ ১৫৪ শতাংশ, অকৃষি জমির মধ্যে রয়েছে রাজউকে পাঁচ কাঠা, সাভারে সাড়ে ৮ কাঠা, গাজীপুরে ৫ কাঠা, গাজীপুরের পুবাইলে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ ও ২ দশমিক ৯০ শতাংশ, গাজীপুরের খিলগাঁওয়ে ৫ শতাংশ ও ৩৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ, গাজীপুরের বাহাদুরপুরে ২৭ শতাংশ, গাজীপুরের মেঘদুবীতে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ, গাজীপুরের ধোপাপাড়ায় ১৭ শতাংশ, রায়পুরায় ৩৫ শতাংশ, ৩৫ শতাংশ ও ৩৩ শতাংশ, রায়পুরার মরজালে ১৩৩ শতাংশ, সোয়া ৫ শতাংশ, ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ২৬ দশমিক ২৫ শতাংশ ও ৪৫ শতাংশ, শিবপুরে ২৭ শতাংশ ও ১৬ দশমিক ১৮ শতাংশ, শিবপুরের যোশরে সাড়ে ৪৪ শতাংশ, নাটোরের সিংড়ায় ১ একর ৬৬ শতাংশ জমি।  এ ছাড়াও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট  আপিলাত ট্রাইব্যুনালের সাবেক সদস্য ড. মো. মতিউর রহমানের বাড়ি বরিশালের মুলাদীতে ১৫০০ বিঘা জমি রয়েছে। গাজীপুরে ১০০ বিঘা জমির ওপর আপন ভুবন নামে একটি রিসোর্ট রয়েছে। নরসিংদীর মরজালে লায়লা কানিজ লাকীর নামে ৪০ বিঘা জমির ওপর ওয়ান্ডার পার্ক নামে একটি পার্ক রয়েছে। তার মেয়ে ফারজানা ইসপিতার নামে মরজাল বাসস্ট্যান্ড ও আশপাশ এলাকায় ১০ বিঘা জমি রয়েছে। এ ছাড়াও ছেলে আহম্মদ তৌফিক অনুদ ও মেয়ে ফারজানা ইসপিতার নামে কমপক্ষে ৫০ বিঘা জমি রয়েছে। ময়মনসিংহের ভালুকায় রয়েছে জুতার কারখানা। নাটোরের সিংড়ায় ২০ বিঘা জমি রয়েছে। এ ছাড়াও গাজীপুরের পুবাইলে একাধিক রিসোর্টসহ বিস্তৃত পরিমাণ জমি রয়েছে। এ ছাড়া লাকীর নামে নরসিংদীর রায়পুরায় মরজালে ৪ কানি জমির ওপর আলিশান বাড়ি রয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মতিউর, তার স্ত্রী, সন্তান, আত্মীয়দের নামে এবং বেনামে ৪০টি প্লট আছে। গাজীপুরে মতিউরের জুতার ফ্যাক্টরি, তিনি নিজেই যার চেয়ারম্যান। গুলশান-২ এ শাহবুদ্দিন পার্কের উল্টোদিকে আনোয়ার ল্যান্ডমার্কের একটি ভবনে চারটি ফ্ল্যাট আছে। ফ্ল্যাটগুলোর মূল্য প্রতিটি ৫ কোটি টাকার নিচে নয়। গুলশানের শান্তা  প্রোপার্টিজের একটি ভবনে আটটি ফ্ল্যাট। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই ও আমেরিকায় বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক মতিউর দম্পতি। ছাগলকান্ডে ভাইরালের পর একে একে বেরিয়ে আসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য ড. মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী লায়রা কানিজ লাকীসহ তার পরিবারের সদস্যদের অবৈধ অঢেল সম্পদ ও টাকার খবর। পরে দুদকসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে ড. মতিউর রহমান মাথা ন্যাড়া করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখ্য, মতিউরের দ্বিতীয় সংসারের ছেলের ১৫ লাখ টাকায় কোরবানির ছাগল কিনতে গিয়ে আলোচনায় আসে পুরো পরিবার।

সর্বশেষ খবর