শুক্রবার, ২৮ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
আওয়ামী লীগ নেতা হত্যা

দলীয় নেতাদের দায়ী করলেন শাহরিয়ার পাল্টা জবাব মেয়রের

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

দলীয় নেতাদের দায়ী করলেন শাহরিয়ার পাল্টা জবাব মেয়রের

রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ নেতা হত্যায় দলীয় নেতাদের দায়ী করলেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। গতকাল বেলা ১১টায় বাঘা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নিহত বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুলের নামাজে জানাজায় অংশ নিয়ে তিনি এ অভিযোগ করেন। এ খুনের মদতদাতা হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আসাদুজ্জামান আসাদ ও বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাভলুর নাম উল্লেখ করেন শাহরিয়ার আলম। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা জবাব দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন। গতকাল সিটি করপোরেশনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে পাল্টা জবাব দেন। শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আমি খুব পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, খুনি আক্কাস, খুনি মেরাজ। তাদের পেছনের মদতদাতা আছে। দুই বছর আগে আক্কাস বহিষ্কৃৃত হয়েছিল আওয়ামী লীগ থেকে। খায়রুজ্জামান লিটন নিজের মুখে এখানে, এস এম কামাল (আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক) বলে গিয়েছিলেন সে বহিষ্কৃত। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, তৃণমূলের আওয়ামী লীগ অত্যন্ত হতাশাগ্রস্ত। এই ঘোষণার সাত দিনের মাথায় রাজশাহীর মেয়র খায়রুজ্জামানের গাড়িতে আক্কাসকে ঘুরতে দেখা গেছে, মেরাজকে ঘুরতে দেখা গেছে। আমরা জবাব চাই আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের সদস্য খায়রুজ্জামান লিটনের কাছে। এ জানাজায় তারা অনুপস্থিত কেন? তাদের সৎ সাহস নেই কেন?’। তিনি আরও বলেন, ‘আজকে খুনের মামলায় দুজন সশরীরে ছিল। পেছন থেকে মদতদাতা হিসেবে আসাদুজ্জামান আসাদ, এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এবং লায়েব উদ্দিন লাভলুর নামে মামলা করব আমরা। বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব।’ শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘বাঘা শান্তিপূর্ণ এলাকা, পুণ্যভূমি। সেই বাঘাকে অশান্ত করার অপচেষ্টা আজকে থেকে নয়, ২-৩ বছর আগে থেকে। আজকের ঘটনায় যে মারা গেছে, এর আগেও একাধিক ঘটনা ঘটেছে, যেখানে আরও মানুষ মারা যেতে পারত। কিন্তু আমরা ছাড় দিয়ে গেছি। বারবার ছাড় দিয়ে গেছি। কখনো বাবুলের ওপর দিয়ে গেছে, কখনো অন্য নেতা-কর্মীদের ওপর দিয়ে গেছে। আজকে বাবুলের জীবনের ওপর দিয়ে গেল। তারা অব্যাহতভাবে আমাদের অস্থির করার জন্য এ কাজগুলো করছে। আমি অনুরোধ করব বাঘাবাসীকে বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি আপনারা আস্থা রাখবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দারা ভাই (পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী) কথা বলেছেন। বাঘার শান্তি বাবুলের রক্ষা এবং আমার রক্ত দিয়ে হলেও রাখব। আমরা কোনো বিশৃঙ্খলার পক্ষে নই। আমাদেরও দায়িত্ব আছে, আমরাও যদি আইনানুগভাবে দ্রুত সময়ের মধ্যে এর বিচারকার্য সম্পন্ন করে আসামিদের ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলাতে না পারি, তাহলে এটার পেছনে মদতদাতা, গডফাদার-কারা বাঘা থেকে গিয়ে রাজশাহীতে গিয়ে শক্তি সঞ্চয় করবে। আমি প্রশাসনকে বলব, এই যে ব্যক্তি কয়েকজনের নাম বললাম, আসামিদের টেলিফোন নম্বরের সঙ্গে মিলিয়ে নেবেন। তাদের সঙ্গে যদি দিনের পাঁচবার কথা না হয়, তাহলে আমি সংসদ সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে চলে যাব। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি প্রশাসনকে।’ আশরাফুল ইসলাম বাবুলের বড় ছেলে আশিক জাবেদ লাবুও জানাজায় দাঁড়িয়ে স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাভলু, পৌর মেয়র আক্কাস আলী ও পাকুড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলামকে এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেন। অভিযোগ করেন, কয়েকজন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধেও।

আশরাফুল ইসলাম বাবুলের জানাজায় অংশ নেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আবদুল ওয়াদুদ দারা, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সাবেক এমপি আয়েন উদ্দিন, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারসহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা। 

পাল্টা জবাব দিলেন লিটন : গতকাল বিকাল ৪টায় নগর ভবনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাসিক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমাকে জড়িয়ে সাবেক প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার যে বক্তব্য দিয়েছেন তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন এবং কাল্পনিক। এ ধরনের কোনো কর্মকান্ডে আমি কখনোই সম্পৃক্ত নই। বরং বলয়ভিত্তিক ও উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কারও লাশ প্রয়োজন ছিল কি না খতিয়ে দেখা দরকার।’

লিটন বলেন, ‘মরহুম বাবুল সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী ও নেতা ছিলেন, আমার অনেক স্নেহভাজন ছিলেন। আমি আমার রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই তাকে পাশে পেয়েছি, বাবুল যখন ছাত্রনেতা, তখন থেকেই। তিনি নিবেদিতপ্রাণ আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন। তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করার মতো নিন্দনীয়-নৃশংস ঘটনার সঙ্গে আমার কোনোভাবে জড়িত থাকার কোনো কারণ নেই, কোনো সুযোগ নেই, যুক্তিও নেই। মরহুমের জানাজায় আমাকে দায়ী করে, সরাসরি আমার নাম ধরে, আমার দলীয় পদ উল্লেখ করে, আমার পাশাপাশি আমাদের আরেকজন সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদসহ আরও কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে বাঘা-চারঘাটের বর্তমান এমপি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ঈর্ষাপরায়ণভাবে এরকম উক্তি করতে পারেন সেটা আমার বোধগম্য নয়।’ তিনি বলেন, ‘মোবাইল কললিস্ট চেক করা হোক, যারা হত্যাকারী তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক। তিনি (শাহরিয়ার) কী উদ্দেশ্যে বলেছেন, কেন বলেছেন তা তিনিই বলতে পারবেন। যারা রাজনীতি সচেতন ও বিবেকসম্পন্ন মানুষ তারা নিশ্চিয় এরকম কর্মকান্ডকে সমর্থন করবেন না। করার কোনো কারণ নেই।’ আওয়ামী লীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘আমরা একজন দলীয় নেতাকে হারালাম। এ ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও কষ্টকর। বাবুল হত্যার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার আমিও চাই। আমার বয়স এখন ষাটের ওপরে। আমার রাজনৈতিক জীবনে এ ধরনের ঘটনায় মদত দেওয়ার ইতিহাস নেই। মনে হচ্ছে যেন লাশটি কারও দরকার ছিল। একজনের মৃতদেহ দরকার ছিল যেটাকে পুঁজি করে রাজনীতি করা যায় এবং প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা যায়। এরকম চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রকারী একটি গোষ্ঠী ছিল, এখনো আছে বলে আমি মনে করি, অনেকেও তাই মনে করেন। এ লাইনেও বিষয়গুলো তদন্ত হওয়া দরকার।’ খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনের পর রাজশাহীতে যারা নতুন সংসদ সদস্য হলেন, তারা নির্বাচিত হওয়ার পর তাদের নিজস্ব অবস্থান তৈরি করতে গিয়ে ভালো-মন্দ অনেক কিছু করেছেন। আমরা যারা বংশগতভাবে, জন্মগতভাবে আওয়ামী লীগ করি, ছোটবেলা থেকে বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি, মেনেছি, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে মেনে রাজনীতি করি, আমরা হচ্ছি আদি ও অকৃত্রিম। যারা পরে নানাভাবে এসেছেন, তারা কী উদ্দেশ্যে এসেছেন, জনগণ ভালোভাবে বলতে পারবেন। প্রত্যক্ষদর্শী ও যারা তাদের চেনেন জানেন, এলাকাবাসী তারা ভালো বলতে পারবেন। আমার কাছে মনে হচ্ছে, আমরা যারা আওয়ামী লীগের রক্ত নিয়ে বড় হয়েছি, তাদেরই এখন হেনস্তা করার অপচেষ্টা করছেন নতুনরা।’  

প্রসঙ্গত, গত ২২ জুন বাঘায় পৌরসভার সেবা বৃদ্ধি ও কর কমানোর দাবিতে চলা মানববন্ধনে হামলা চালিয়ে বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুলকে কুপিয়ে জখম করেন পৌর মেয়র আক্কাস আলী ও তার অনুসারীরা। ওইদিন সকাল ১০টায় উপজেলা গেটের সামনে মানববন্ধন চলাকালে এ হামলার ঘটনা ঘটে। পরে দুই পক্ষের মধ্যে চলা সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বাঘা পৌর সদর। সংঘর্ষের ঘটনায় পরদিন ২৩ জুন দুপুরে উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহিনুর রহমান বাদী হয়ে মামলা করেন।

সর্বশেষ খবর