শিরোনাম
শনিবার, ২৯ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
ভারতে এমপি আনার খুন রহস্য

দেড় মাসেও সঠিক কারণ অজানা

গোলকধাঁধায় তদন্তসংশ্লিষ্টরা

সাখাওয়াত কাওসার

দেড় মাসেও সঠিক কারণ অজানা

দেড় মাসেও ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। শুরুর দিকে ব্যক্তিগত কারণের দিকে ইঙ্গিত দিলেও তাতে স্থির থাকা হয়নি বেশি দিন। অফিসিয়ালি কিছু না বললেও সীমান্তে চোরাকারবার নিয়ে বিরোধের বিষয়টিই ছিল টপ স্কোরে। তবে কিছুদিন ধরে গ্রেফতারদের বরাতে স্থানীয় রাজনৈতিক বিরোধের বিষয়টি উঠে আসছে বলে জানাচ্ছেন তদন্তসংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তদন্তসংশ্লিষ্টদের অনেকেই রীতিমতো গোলকধাঁধায় পড়ছেন বহুল আলোচিত এ হত্যা নিয়ে। তারা বলছেন, সবকিছুর জন্যই দরকার যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক আক্তারুজ্জামান শাহিনকে।

জানা গেছে, সর্বশেষ বুধবার সীতাকুন্ড পাহাড় থেকে গ্রেফতার ফয়সাল আলী সাহাজী ও মোস্তাফিজুর রহমান ফকির গতকাল পর্যন্ত কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেননি। হত্যাকান্ডে নিজেদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি অস্বীকার করছেন। তবে কলকাতা, ঢাকা-দুই জায়গায়ই তারা শাহিনের বাসায় অবস্থান করেছেন। প্রয়োজনে তাদের কারাগারে থাকা শিমুল ভূঁইয়ার মুখোমুখি করা হতে পারে। কারণ এরা দীর্ঘদিন ধরে শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে চরমপন্থার রাজনীতি করেছেন।

তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, এরা মূলত চরমপন্থি নেতা শিমুল ভূঁইয়ার সহযোগী। এরা ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে এমপি আনার হত্যাকান্ডে অংশ নেন। আগে থেকেই সন্ত্রাসকান্ডে সম্পৃক্ত। ফয়সাল ও মোস্তাফিজকে রিমান্ডে নিয়ে হত্যার সম্ভাব্য সব মোটিভ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এমপি আনারকে টাকাপয়সা লেনদেনের কথা বলে সঞ্জীভা গার্ডেন্সে নিয়ে যান শাহিন। তবে তাদের মধ্যে কী কথা হয়েছিল এখনো জানা যায়নি। আর এ হত্যাকান্ডে কারা লাভবান হয়েছেন তা-ও জানা যায়নি। বিশেষ করে এ হত্যাকান্ডে কারা আর্থিক, রাজনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছেন তা বের করতে তদন্ত চলছে।

ডিবি বলছে, এমপি আনার হত্যার নেপথ্যের কারিগর আক্তারুজ্জামান শাহিন। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী ফয়সাল ও মোস্তাফিজকে বড় অঙ্কের অর্থ দেবেন বলে গত ২ মে বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় নিয়ে হোটেলে রাখেন এ দুজনকে। তারপর হোটেল থেকে মোস্তাফিজ ১০ মে ও ফয়সাল ১২ মে কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীভা গার্ডেন্সের বাসায় ওঠেন। এর আগে ১৩ মে সকালে এমপি আনার তার বন্ধু গোপালের বাসা থেকে বের হন। কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে অপেক্ষায় ছিলেন ফয়সাল। ফয়সাল আনারকে রিসিভ করে লাল গাড়ির কাছে যান। যেখানে অপেক্ষায় ছিলেন শিমুল ভূঁইয়া। অন্যদিকে সঞ্জীভা গার্ডেন্সের ভাড়া বাসায় অপেক্ষায় ছিলেন মোস্তাফিজ ও জিহাদ হাওলাদার। ফয়সাল, শিমুল ভূঁইয়া এমপি আনারকে ওই ফ্ল্যাটে নিয়ে গেলে রিসিভ করেন শিলাস্তি রহমান ও মোস্তাফিজ। তারা নিচে কর্নারের রুমে যান। আনার যখন বুঝতে পারেন তিন-চার জনের গতিবিধি, তখন তিনি অনেক কাকুতিমিনতি করেন, বাঁচার চেষ্টা করেন। দৌড় দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টার সময় মোস্তাফিজ তার নাকে-মুখে ক্লোরোফর্ম ধরে নিস্তেজ করেন। এরপর হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়।

সম্প্রতি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)-এর অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ গণমাধ্যমকর্মীদের বলেছেন, এমপি আনারকে কী উদ্দেশ্যে হত্যা করা হয়েছে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। রাজনৈতিক, চোরাচালান, অর্থনৈতিকসহ সম্ভাব্য সব কারণ আমলে নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

ডিবি বলছে, দুই মাস আগে নিষিদ্ধ চরমপন্থি সংগঠন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির সন্ত্রাসীদের ভাড়া করেন আক্তারুজ্জামান শাহিন। সঞ্জীভা গার্ডেন্সের ফ্ল্যাটে এমপি আনার হত্যাকান্ডে শিমুলের নেতৃত্বে সাতজন অংশ নেন জানিয়ে ডিবিসূত্র বলেছেন, তাদের মধ্যে সবশেষ ফয়সাল, মোস্তাফিজসহ পাঁচজন বাংলাদেশে গ্রেফতার হয়েছেন। অন্য দুজন হলেন তানভীর ভুঁইয়া ও শিলাস্তি রহমান। এর বাইরে ভারতে গ্রেফতার হয়েছেন কসাই জিহাদ হাওলাদার। এ ছাড়া নেপালে ধরা পড়েন সিয়াম। সিয়ামকে পরে ভারতীয় পুলিশে হস্তান্তর করা হয়।

এর বাইরে আনার হত্যাকান্ডে পরোক্ষভাবে অংশ নেওয়া দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু ও আওয়ামী লীগ নেতা গ্যাস বাবু। ঢাকার ডিবির হাতে গ্রেফতারদের মধ্যে চারজন এরই মধ্যে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে মিন্টু এখনো কোনো স্বীকারোক্তি দেননি।

হত্যার মাস্টারমাইন্ড অধরা : কিছুদিন আগ পর্যন্ত এমপি আনার হত্যার মাস্টারমাইন্ড বলা হয়েছিল আক্তারুজ্জামান শাহিনকে। এখন তার বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলছেন, এখনো আমাদের কাছে শাহিন মাস্টারমাইন্ড। কারণ তার পাসপোর্ট দিয়ে কলকাতার সঞ্জীভা গার্ডেন্সে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিল। হত্যার পরিকল্পনা, বাসা ভাড়া এ সবই শাহিন করেছেন। শাহিন ১০ মে কলকাতা থেকে দেশে ফিরে আসেন। এরপর জিহাদ বাদে কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া সবাই একে একে দেশে ফিরে আসেন এবং কেউ নেপালে পালিয়ে যান। শিমুল ভূঁইয়া গ্রেফতারের পর শাহিন প্রথমে দিল্লি, এরপর নেপাল, তারপর দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। তাকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি কলকাতা পুলিশ গুরুত্বসহকারে দেখছে।

তিনি বলেন, যখনই আমাদের কাছে খবর আসে এমপি আনার হত্যাকান্ডের, তখনই আমরা মাস্টারমাইন্ড শিমুল ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করি। এরপর তানভীর ও শিলাস্তিকে গ্রেফতার করি। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এরপর আমরা কলকাতায় গিয়ে সঞ্জীভা গার্ডেন্স পরিদর্শন করি। এ হত্যাকান্ডে আরও দুজন জড়িত বলে তাদের নাম জানতে পারি। তারা ফয়সাল ভূঁইয়া ও মোস্তাফিজুর রহমান।

সর্বশেষ খবর