শিরোনাম
রবিবার, ৩০ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

অর্ধকোটি টাকা অফিস সহকারীর অ্যাকাউন্টে

মাহবুব মমতাজী

পাসপোর্ট অধিদফতরের এক অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রায় অর্ধকোটি টাকার খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মোস্তফা কামাল খান নামের ওই ব্যক্তি পাসপোর্ট অধিদফতরের নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ে কর্মরত। তার স্ত্রীরও জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে সংগতি নেই এমন অস্বাভাবিক সম্পত্তির তথ্য পেয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

গত ২৩ জুন দুদকের চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ে মোস্তফা কামাল খান ও তার স্ত্রী হাওয়ানুর আক্তারের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা করেন দুদকের উপসহকারী পরিচালক সঞ্জয় ঘোষাল। তাদের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের কচুয়ায়। এর আগে তাদের কাছে সম্পদ বিবরণী চেয়ে চিঠি দেয় দুদক। এরপর ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি তারা সম্পদ বিবরণী জমা দেন। এজাহারে উল্লেখ করা হয়, মোস্তফা কামাল খান দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ৫১ লাখ ৫২ হাজার স্থাবর সম্পদ এবং ৪৬ লাখ ৮০ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ৯৮ লাখ ৩২ হাজার টাকার সম্পদের ঘোষণা করেছেন। এসব ২০০২-০৩ অর্থবছর থেকে ২০১১-১২ অর্থবছরের মধ্যে তার অর্জিত সম্পদের সঙ্গে অসামঞ্জস্য। যে সমস্ত সম্পদ পাওয়া গেছে তার বৈধ কোনো উৎস পাওয়া যায়নি। চাঁদপুরের কচুয়া এবং টেংরায়, ঢাকার ডেমরা সারুলিয়ায় তার অনেক স্থাবর সম্পদ রয়েছে। যাচাই করে দেখা যায়- মোস্তফা কামাল খান সম্পদ বিবরণীতে যে সম্পদ দেখিয়েছেন এর মধ্যে ৪৯ লাখ ৩৪ হাজার ২৭১ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত। দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, সম্পদ বিবরণীতে ডেমরার সারুলিয়াতে ৩ শতাংশ জমির ওপর মোস্তফা কামাল খানের টিনশেড একটি বাড়ির কথা উল্লেখ করেন। এই বাড়ি নির্মাণে তিনি ২ লাখ ১০ হাজার টাকা ব্যয় করেছেন। দুদকের অনুসন্ধানে নিরপেক্ষ প্রকৌশলী টিম বাড়িটি নির্মাণে ৫ লাখ ৯৫ হাজার ৪৯৩ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান। তার জ্ঞাত গ্রহণ যোগ্য আয় ১০ লাখ ৯৫ হাজার ২২২ টাকা। কিন্তু সম্পদ বিবরণীতে স্থাবর সম্পদ ৫৫ লাখ ৩৭ হাজার ৪৯৩ টাকার এবং পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় ৪ লাখ ৯২ হাজার টাকা দেখিয়েছেন। এসবের সঙ্গে তার গ্রহণযোগ্য আয় বাদ দিলে দেখা যায় ৪৯ লাখ ৩৪ হাজার ২৭১ টাকা জ্ঞাত আয়ের থেকে অনেক বেশি। অপর মামলায় উল্লেখ করা হয়, মোস্তফা কামাল খানের স্ত্রী হাওয়ানুর আক্তার তার সম্পদ বিবরণীতে ২ কোটি ২ লাখ ৭২ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ৪ লাখ ৯২ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন। একই সঙ্গে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার দায়-দেনার কথাও বলেছেন। তার দাখিল করা সম্পদ ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০১১-১২ অর্থবছরের মধ্যে গ্রহণযোগ্য আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ। হাওয়ানুর আক্তার এই তিন বছরে ২৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ১ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদের ঘোষণা দিয়েছেন। দুদক বলছে, যাচাই করে দেখা যায়- ওই তিন বছরে তিনি ৫০ লাখ ৯৪ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন এবং ১ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়। অথচ এই সময়ে তার গ্রহণযোগ্য আয় হয় ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। অর্থাৎ জ্ঞাত আয়ের থেকে ৪০ লাখ ১৪ হাজার ৩৬১ টাকা বেশি পাওয়া গেছে। এ ছাড়া পূর্বে তার নামে থাকা কোনো সঞ্চয় কিংবা বৈধ কোনো আয়ের উৎস পাওয়া যায়নি। তার নামে রাজধানীর ডেমরা সারুলিয়াতে ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ জমির ওপর একটি পাঁচতলা বাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে। এই বাড়ি নির্মাণে হাওয়ানুর আক্তার তার সম্পদ বিবরণীতে ১ কোটি ২৯ লাখ ৩ হাজার টাকা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু নিরপেক্ষ প্রকৌশলী টিম বলছে- এই বাড়ি নির্মাণে ১ কোটি ৬০ লাখ ৬৪ হাজার ৮০২ টাকা ব্যয় হয়েছে। এখানে তিনি ৩১ লাখ ৬১ হাজার ৮০২ টাকার স্থাবর সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন।

সর্বশেষ খবর