রবিবার, ৩০ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
সংসদে প্রধানমন্ত্রী

দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু

দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি। সে যেই হোক, দুর্নীতি করলে কারও রক্ষা নেই। যারাই দুর্নীতি করবে আমরা ধরব।

গতকাল জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ কখনো পিছিয়ে পড়েনি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ পিছিয়ে যাবে না। যে যতই চেষ্টা করুক দেশকে ধ্বংস  করতে পারবে না। এই স্বপ্নযাত্রার আকাক্সক্ষা পূরণ করবে এ দেশের মানুষ। বাংলাদেশের জনগণ কর্মঠ, সৃজনশীল উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষের মাঝে কিছু কিছু দুষ্ট প্রকৃতির থাকে। ওগুলোকে ধর্তব্যে নিই না। বিরোধীদলীয় নেতা কালো টাকা সাদা করেছেন কি না দেখতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, কালো টাকা সাদা, এটা কালো টাকা সাদা না। এখন সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। ঢাকায় যার এক কাঠা জমি আছে সে কয়েক কোটি টাকার মালিক। এভাবে অনেক সময় কিছু করতে গিয়ে অতিরিক্ত অর্থ চলে আসে। সেটা তারা আয়করে দেখাতে পারে না, আয়কর দিতে পারে না। আয়কর দিয়ে যাতে মূলধারায় ফিরে আসতে পারে, এ ধরনের কর্মকান্ড যাতে আর না করে সেজন্য মাঝে মাঝে এ ধরনের সুযোগ দেওয়া হয়। এ সুযোগ খালেদা জিয়া নিয়েছিল, ড. কামাল হোসেনসহ আরও অনেকেই নিয়েছিল। তারা কিন্তু ২০০৬, ০৭, ০৮ বা পরবর্তীতে সুযোগ নিয়ে টাকা সাদা করেছিল। জেনারেল এরশাদ সাহেবও মনে হয় করেছে। খোঁজ নিতে হবে। আমাদের বিরোধীদলীয় নেতা করেছেন কি না সেটা দেখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সুচিন্তিত কৌশল এবং গণমানুষের শক্তিকে যুগপথ ধারণ করে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ব। এ বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ একধাপ এগিয়ে যাবে। যোগাযোগব্যবস্থার ক্ষেত্রে সরকারের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন হলে পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নের হাব হিসেবে বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। আমার লক্ষ্য কেবল বাংলাদেশ নয়, আমরা এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হব। প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে রেল ও সড়ক যোগাযোগ সহজতর হবে। বড়লোকদের এলাকায় লোডশেডিং দেওয়ার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুৎ নিয়ে অনেক কথা। যে বিশেষ আইন করেছি সেটা নিয়েও সমালোচনা শুনছি। আমার প্রশ্ন হচ্ছে এই বিশেষ আইন যদি না করতাম, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ না করলে আজকে বিদ্যুৎটা আসত কোথা থেকে? প্রধানমন্ত্রী বলেন, লোডশেডিং! আমি বলে দিয়েছি আমার গ্রামে লোডশেডিং যেন না দেয়। গুলশান, বনানী, বারিধারা, এসব বড়লোকদের এলাকায় ২ হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং দিয়ে তাদের মনে করিয়ে দিতে হবে এখন এয়ার কন্ডিশন, গাড়ি, লিফট ইত্যাদি আরাম-আয়েশটা এটা আসমান থেকে পড়েনি। এটা আমাদের করা সেটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য অন্তত লোডশেডিং বিত্তশালীদের দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট দিয়েছি। কেউ কেউ বাজেটকে উচ্চাভিলাষী বলেছেন, কেউ বলেছেন ঘাটতি বাজেট। কিছুক্ষণ আগে বিরোধীদলীয় নেতা বললেন, এ বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, আমাদের প্রবৃদ্ধির হার কমাতে হবে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি কমাতে হবে ইত্যাদি। এবং এই চ্যালেঞ্জ নেবার মতো সক্ষমতা আছে কি না। চ্যালেঞ্জ নেওয়াটাই তো আমাদের কাজ। চ্যালেঞ্জ নিয়েই তো আমরা চলতে চাই, চ্যালেঞ্জ নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা ঋণ নিই, শোধ করি। আমরা উন্নয়নের পরিকল্পনা নিই, তা বাস্তবায়ন করি। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করি। যারা পরিবর্তনগুলো দেখেন না, তাদের বলব গ্রামে যান। গ্রামের মানুষের যে ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে, সেটা গেলেই দেখবেন। এরশাদ সাহেবের সময় উত্তরবঙ্গে যে মঙ্গা লেগেই থাকত, এখন যে মঙ্গা নেই, সেটাও দেখবেন। কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধাসহ প্রতিটি এলাকায় দুর্ভিক্ষ লেগেই থাকত। সেখানে ছুটে গেছি, মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। গ্রামের পর গ্রামে গিয়েছি, মানুষের শরীরে মাংস ছিল না চামড়া আর হাড় ছাড়া। খাবার ছিল না, গায়ে কাপড় ছিল না। এখন কিন্তু সেই অবস্থা নেই। এখন রংপুরের মানুষ চারবেলাও খাবার খেতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা নির্বাচনের আগে নির্বাচনি ইশতেহার দিই, জাতির কাছে দেওয়া সেই ওয়াদা আমরা ভুলে যাই না। বাজেট প্রণয়নের সময়ও আমাদের নির্বাচনি ইশতেহারের অগ্রাধিকার এ বাজেটে উঠে এসেছে। তিনি বলেন, আজকের সাফল্যে কৃতজ্ঞতা দেশের জনগণের প্রতি। তারা বারবার আমাদের সমর্থন দিয়েছে। তাই আমরা কাজ করতে পেরেছি। কভিড অতিমারির সময় অনেক উন্নত দেশও প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারেনি। আমাদের প্রবৃদ্ধি ছিল ধনাত্মক। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ সব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করে উন্নয়নকে আমরা দৃশ্যমান করেছি। আমাদের চলার পথ খুব সহজ ছিল না। বারবার বাধা এসেছে। দেশের ভিতর থেকে যেমন বাধা এসেছে, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়েও চলতে হয়েছে। আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধ, স্যাংশন, কাউন্টার স্যাংশন- এগুলো মোকাবিলা করেই তো আমাদের চলতে হচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ লাগলে স্যাংশন হলো। বিশ্ববাজারে সবকিছুর দাম বেড়ে গেল। ওই অবস্থার মধ্যেও বিরাট চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগিয়ে যেতে হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলছে, এতে প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করছে। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য মেট্রোরেল একটা নিরাপদ যান হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। এই মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর ঢাকার যানজট অনেকাংশে কমে গেছে। রাজধানীর যানজট সহনশীল করার জন্য আমরা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট  তৈরি করেছি, এর মাধ্যমে ছয়টা রুটে মেট্রোরেল নির্মাণ করা হচ্ছে, একটা তো হয়েই গেছে। ইতোমধ্যে আমরা চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য সার্ভে করছি। আমি থাকতে থাকতে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে মেট্রোরেল করে দিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ, যাতে দেশের মানুষ দ্রুততম সময় যানজটমুক্ত হয়ে চলাচল করতে পারে।

সর্বশেষ খবর