শিরোনাম
রবিবার, ৩০ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
পাল্টাপাল্টি হুঁশিয়ারি ছাড় দেবে না কেউ

ভয় নয় কঠোর আন্দোলন গড়ুন

সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভয় নয় কঠোর আন্দোলন গড়ুন

বিএনপি চেয়ারপারসন ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে সরকারের জন্য ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিন, অন্যথায় পরিণতি হবে ভয়াবহ। যে কোনো পরিণতির জন্য আপনাদের তৈরি থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, এদেশের মানুষ বন্দি অবস্থায় দেশনেত্রীকে কখনোই চলে যেতে দেবে না।  

গতকাল বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কেন্দ্রীয় বিএনপির উদ্যোগে বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে সমাবেশে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। বিকাল পৌনে ৩টায় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশের জন্য অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া গণতন্ত্র কল্পনা করা যায় না। তাকে অন্যায়ভাবে ছয় বছর কারাগারে বন্দি অবস্থায় রাখা হয়েছে। তাকে মুক্ত না করলে সরকারের জন্য ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে। দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, মানুষের মৃত্যু হয় একবার, দুইবার নয়। ভয়ে মরে যাওয়ার চেয়ে সাহস করে প্রতিরোধ করতে হবে। সব অন্যায়ের প্রতিরোধ করতে হবে। আর এর জন্য তরুণদের জেগে উঠতে হবে। পরিবর্তন করতে হলে তরুণ-যুবকদের এগিয়ে আসতে হবে।  বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ দখলদার সরকার। তারা গণতন্ত্রের শত্রু। তারা দেশকে ও দেশের রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করেছে। দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতাকে ধ্বংস করছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, নিতাই রায় চৌধুরী, আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, মিজানুর রহমান মিনু, জয়নুল আবদিন ফারুক, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, সালাউদ্দিন আহমেদ, আমিনুল হক, শামীমুর রহমান শামীম, শিরিন সুলতানা, রফিকুল আলম মজনু, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির প্রমুখ।  সমাবেশ উপলক্ষে নয়াপল্টনে নেতা-কর্মীদের ঢল নামে। বেলা ১২টা থেকে সমাবেশস্থলে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হতে শুরু করেন বিএনপিসহ দলটির অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। মহানগরের বিভিন্ন ইউনিট থেকে জাতীয় ও দলীয় পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে এসে স্লোগান দেন নেতা-কর্মীরা। ঢাকার আশপাশের জেলা থেকেও নেতা-কর্মীরা আসেন। বিভিন্ন রঙের ক্যাপ পরিহিত নেতা-কর্মীদের মিছিল ও স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা নয়াপল্টন এলাকা। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নানা ধরনের স্লোগান দেন তারা। এদিকে সমাবেশকে ঘিরে নয়াপল্টন এলাকায় পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে খেটে খাওয়া শ্রমিকরা চাল-ডাল, তেল কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। কেউ চিকিৎসা পায় না। আপনারা লুট করে বিদেশে টাকা পাচার করেছেন। সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান লুটের সঙ্গে জড়িত। আমরা চিন্তাও করতে পারি না। আজকে পুলিশের সাবেক প্রধান দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছে। বিদেশে পাচার করেছে। এনবিআরের কর্মকর্তা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। এমন আরও অনেকেই আছে। কিন্তু রাঘববোয়ালদের ধরা হয় না।

মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া আমাদের গণতন্ত্র ও আন্দোলনের প্রতীক। তাকে রক্ষা করতে হলে ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে বলব- আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য লড়াইয়ে শামিল হই। তিনি বলেন, তরুণ-যুবকদের হাতেই দেশের ভবিষ্যৎ। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তার প্রতি চরম অন্যায় করা হয়েছে। মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে তাকে নির্বাসিত করা হয়েছে।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, সরকার ভারতের সঙ্গে দেশবিরোধী চুক্তি করেছে। আমরা পানি চাই, অভিন্ন নদীর পানির হিস্সা চাই। আজকে শেখ হাসিনা সবকিছু উজাড় করে ভারতকে দিয়ে দিয়েছেন। বিনিময়ে বাংলাদেশের মানুষ কিছুই পায়নি। বরং তারা পেয়েছে ঘৃণা এবং তাদের সম্পদ লুট করা হয়েছে। এই সরকার ক্ষমতায় থাকা মানে দেশ ধ্বংস করা। সুতরাং দেশকে রক্ষা করতে হলে, নিজেদের রক্ষা করতে হলে আমাদের আন্দোলন আরও তীব্র করতে হবে। মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে সমাবেশের মূল লক্ষ্য খালেদা জিয়ার মুক্তি। শহীদ জিয়া যখন নিজের জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন তখন দুই শিশু সন্তানসহ গ্রেফতার হোন খালেদা জিয়া। স্বামী যুদ্ধের ময়দানে স্ত্রী বন্দি। তাই বলি- বেগম জিয়া দেশের প্রথম মহিলা মুক্তিযোদ্ধা। তিনি শুধু স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় নয়, এদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারেও তার প্রধান ভূমিকা ছিল। তিনি ক্ষমতায় এসে সংসদীয় গণতন্ত্র কায়েম করেছেন। খালেদা জিয়া দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৮১ সালে তিনি জাতীয়তাবাদী দলের পতাকা ও স্বাধীনতা তথা গণতন্ত্রের পতাকা হাতে তুলে নেন। ৯ বছর তিনি রাজপথে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। মিছিলে পায়ে হেঁটে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু কখনো হাল ছেড়ে দেননি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর