শিরোনাম
রবিবার, ৩০ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

১৭ বছর পর ভারত চ্যাম্পিয়ন

আসিফ ইকবাল

১৭ বছর পর ভারত চ্যাম্পিয়ন

হার্দিক পান্ডিয়া শেষ বল করতেই সাজঘরে দুই হাত উঁচু করে রাহুল দ্রাবিড় জয়োৎসব করেন স্মিত হেসে। কাভার থেকে আনন্দে দৌড়াতে থাকেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। নাচতে থাকেন বিরাট কোহলি। সাজঘরে বসে থাকা মোহাম্মদ সিরাজরা ভারতীয় পতাকা হাতে বিজয়ানন্দে প্রজাপতির পাখায় ছুটতে ছুটতে ঢুকে পড়েন মাঠে। আনন্দে মাঠে শুয়ে পড়েন পান্ডিয়া। চোখে আনন্দাশ্রু! ভারতীয়দের চোখে-মুখে তখন বিশ্বসেরা হওয়ার আনন্দ এবং শুধুই আনন্দ। ভারত ১৭ বছর পর ফের টি-২০ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন। ২০১১ সালে মহেন্দ্র সিং ধোনীর নেতৃত্বে ওয়ানডে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। ২০০৭ সালের পর রোহিত শর্মার নেতৃত্বে এবার টি-২০ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন। চ্যাম্পিয়ন হয়ে স্বপ্ন পূরণ হলো ভারতের। স্বপ্ন পূরণ হলো রোহিত শর্মা, রাহুল দ্রাবিড়ের। হায়দরাবাদে গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে হেরে যে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল রোহিত-দ্রাবিড় জুটির। বার্বাডোজের ব্রিজটাউনের ঐতিহাসিক কেনসিংটন ওভালে সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে দুই থিঙ্কট্যাংকের। রোহিত বাহিনীর স্বপ্ন পূরণে স্বপ্নভঙ্গ হলো এইডেন মার্করামের দক্ষিণ আফ্রিকার। বিশ্বকাপ জিতে ভারতীয় ক্রিকেট দলের কোচিং পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন দ্রাবিড়। গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপে রানার্সআপ হয়েছিলেন তিনি। রোহিতও গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে রানার্সআপ হয়েছিলেন। এবার চ্যাম্পিয়ন হলেন। সম্ভবত রোহিতের এটাই শেষ বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপ জিতে টি-২০ ক্রিকেটকে বিদায় জানান কোহলি। ব্রিজটাউনে গতকাল আবারও প্রমাণিত হলো, টস জয় মানে টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনাল জয়। ৯ আসরের ফাইনালে টস জয়ী দল হেরেছে মাত্র একবার। ২০০৯ সালে টস জিতেও রানার্সআপ হয়েছিল শ্রীলঙ্কা। বাকি টসজয়ী দলগুলো চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। টার্গেট ১৭৭ রান। রান করতে হবে ওভারপ্রতি ৮.৮১। প্রথমবারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে মরিয়া দক্ষিণ আফ্রিকা। কুইন্টন ডি কক, ট্রিস্টান স্টাবস ও হেনরিক ক্লাসেনের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে স্বপ্নও দেখছিল ১৯৯৮ সালের পর আইসিসির বৈশ্বিক কোনো ট্রফি জয়ের। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে মার্করাম বাহিনীর জিততে শেষ ওভারে দরকার ১৬ রান। ক্রিজে ‘কিলার’ খ্যাত ডেভিড মিলার। বোলিংয়ে হার্দিক পান্ডিয়া। প্রথম বলটি করেন ফুলটস। সপাটে হাঁকান মিলার। বল যখন শূন্যে ভেসে সীমানা দড়ি পাড় হবে, তখন প্রায় ১০ মিটার দৌড়ে সূর্যকুমার যাদব অবিশ্বাস্য দক্ষতায় ক্যাচ ধরেন। স্টেডিয়ামের ২৮ হাজার দর্শক বিস্মিত সূর্যকুমারের স্বপ্নের ক্যাচ দেখে। আউট হয়ে অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে থাকেন মিলার। ৫ বলে দরকার ১৬ রান। দ্বিতীয় বলে রাবাদা চার মারেন। ৪ বলে ৮। তৃতীয় বলে বাই। চতুর্থ লেগ বাই। ২ বলে ৯ রান। পঞ্চম বলে রাবাদা আউট। শেষ চাই ৯ রান। ভারতীয় সাজঘর তখন একে অপরকে জড়িয়ে ধরেছেন। শেষ বলে এক রান নিতেই ৭ রানের জয়। স্বপ্নের এই জয়ে ভারত টি-২০ বিশ্বকাপ জিতল ১৭ বছর পর। ভারত অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হলো টানা ৯ জয়ে। গ্রুপ পর্ব, সুপার এইটে ব্যাট কথা বলেনি কোহলির। বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটার নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। ৭ ম্যাচে ১০০ স্ট্রাইক রেটে রান করেছিলেন মাত্র ৭৫। ছন্দে না থাকায় আকাশসমান চাপে ছিলেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক। অনেকেই কোহলির শেষ দেখে ফেলেছিলেন। কিন্তু ভিন গ্রহের ক্রিকেটার কোহলি স্বরূপে দেখা দেন। বার্বাডোজের ব্রিজটাউনে দলের চরম বিপর্যয়ে ফের প্রমাণ দেন নিজেকে। খেলেন ৭৬ রানের নান্দনিক ইনিংস। ৫৯ বলের ম্যাচসেরা ইনিংসটিতে ছিল ৬টি চার ও ২টি ছক্কা। এর আগে সর্বশেষ হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন ২০২২ সালের টি-২০ বিশ্বকাপে। অ্যাডিলেডে সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছিলেন ৫০ রানের ইনিংস। চ্যাম্পিয়ন হলেও ফাইনালে ব্যর্থ হয়েছেন দলনায়ক রোহিত। ৯ রানের বেশি করতে পারেননি। ওপরের দিকে ব্যাটিং করে অক্ষর প্যাটেল ৪৭ রানের ইনিংস খেলেন মাত্র ৩১ বলে ১ চার ও ৪ ছক্কায়।

শিবাম দুভে ১৬ বলে ২৭ রানের ইনিংস খেলেন। কোহলির ১২৫ টি-২০ ক্যারিয়ারে ৩৮তম হাফ সেঞ্চুরিতে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৭৬ রান করে প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে ২টি করে উইকেট নেন বাঁ-হাতি স্পিনার কেশব মহরাজ ও এনরিখ নর্টজে।

সর্বশেষ খবর