সোমবার, ১ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

কম দামি ইভিএমে ঝুঁকছে ইসি

গোলাম রাব্বানী

কম দামি ইভিএমে ঝুঁকছে ইসি

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ভোট গ্রহণ কার্যক্রম এগিয়ে নিতে নতুন পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন। তবে এবারে কমিশন কম  দামি ইভিএম ক্রয়ের দিকে ঝুঁকছে। কীভাবে ইভিএমের ডিজাইন করলে কম  দামে উৎপাদন খরচ কম হবে সেই বিষয়ে গতকাল ইভিএম বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনাও করেছে সাংবিধানিক এই সংস্থাটি। এ জন্য নতুন প্রকল্প গ্রহণের আগে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। পরবর্তীতে কমিটির সুপারিশের আলোকে নতুন ইভিএমের ডিজাইন চূড়ান্ত করে তা নিয়ে রাজনৈতিক  ল ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সংলাপে বসার পরিকল্পনা রয়েছে বর্তমান কমিশনের। এদিকে ব্যয় না বাড়িয়ে ইভিএমের পুরাতন প্রকল্পের মেয়াদ  আরও এক বছর বাড়াতে সম্মত হয়েছে সরকার। গতকাল ইভিএম প্রকল্পের মেয়াদের শেষ দিন ছিল। ইসি সূত্র জানিয়েছে, গত ১৩ জুন কমিশন বৈঠকে ইভিএম প্রকল্পের মেয়াদ  বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে বরাদ্দ না বাড়িয়ে প্রকল্প ব্যয়ের অবশিষ্ট ১১৬ কোটি টাকা দিয়েই আপাতত ইভিএম কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এক বছর মেয়াদ  বাড়ছে ইভিএম প্রকল্পের : ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ গতকাল বলেছেন, চলমান ইভিএমের প্রকল্পের মেয়াদের শেষ দিন ছিল ৩০ জুন। ব্যয় বৃদ্ধি না করে প্রকল্পের মেয়াদ  আরও এক বছর বাড়াতে আমরা পরিকল্পনা কমিশনে চিঠি দিয়েছি। এটা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আশা করছি আগামী ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ  বাড়বে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে বলেছে মেয়াদ  বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। হয়তো এক-দুই দিনের মধ্যে চিঠি পাওয়া যাবে। ইভিএম বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কমিশনের বৈঠক করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইভিএম প্রকল্পের প্রথম থেকে যারা জড়িত ছিলেন- কমিশন তাদের সঙ্গে বসেছিল। বিশেষ করে ইভিএমের ডিজাইন করার সঙ্গে যারা জড়িত ছিল। কমিশন তাদের সঙ্গে বসেছিল। বৈঠকে ছিলেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ  মাহফুজুল ইসলাম; অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ  কায়কোবাদ  ও অধ্যাপক মো. হায়দার আলী। কমিশন তাদের সঙ্গে বসে বুঝতে চেয়েছেন, কীভাবে ইভিএমের ডিজাইন করলে আরও ব্যয় সাশ্রয়ী করা যায়। তবে এটা কোনো ফরমাল মিটিং ছিল না। এটা অনানুষ্ঠানিক মিটিং ছিল। ইসির ব্যয় সাশ্রয়ী ইভিএমের দিকে যাওয়ার চিন্তা আছে কি না প্রশ্নে তিনি বলেন, কমিশনের যদি  চিন্তা থাকে। তবে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত হবে। এ জন্য নতুন প্রকল্পের প্রয়োজন আছে কি না প্রশ্নে তিনি বলেন, সেটা হতে পারে। তবে এই মুহূর্তে না। বিষয়টি এখানো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ব্যয় সাশ্রয়ী ইভিএম তৈরির প্রস্তাব কি বিশেজ্ঞরা দিয়েছেন প্রশ্নে তিনি বলেন, তারা প্রস্তাব দেয়নি। কীভাবে ইভিএম আরও ব্যয় সাশ্রয়ী করা যায় সেই বিষয়ে তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়ার জন্য ইসি তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। তিনি বলেন, ইভিএম নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠক হবে। টেকনিক্যাল কমিটির মিটিং হবে। পরবর্তীতে বিষয়গুলো চূড়ান্ত হলে তা নিয়ে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা হবে। রাজনৈতিক  দলের সঙ্গেও আলোচনা হতে পারে। সবাইকে আস্থায় নিয়ে কমিশন এগিয়ে যাবে। তবে ইভিএমের জন্য একটি ছোট পরিসরে বিশেষজ্ঞ কমিটি হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে ইভিএমের বিষয়ে সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ইভিএম ডেমোক্রেসিকে এগিয়ে নিতে অনেক বেশি সহায়ক হবে। প্রযুক্তির দিকে আমাদের এগোতে হবে। আমার বিশ্বাস ছিল ভূত আছে এভাবে বা ওভাবে দিলে ভোট চলে যায় অন্য জায়গাতে।  দীর্ঘ দুই বছর ধরে এটি নিয়ে কাজ করছি। ইভিএম প্রযুক্তিতে এ ধরনের কোনো সুযোগ নেই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর আগে দ্বাদশ সংসদ  নির্বাচনের আগে ইভিএমের নতুন প্রকল্প নাকচ করে দিয়েছিল সরকার। অর্থসংকটের কারণে নতুন করে ইভিএম না কেনায় দ্বাদশ সংসদ  নির্বাচনে ব্যবহার হয়নি এ মেশিন। তবে ধারাবাহিকভাবে স্থানীয় সরকারের উপজেলা নির্বাচনসহ বিভিন্ন উপনির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার অব্যাহত রেখেছে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন।

ইভিএমের যাত্রা : দেশে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমের যাত্রা শুরু হয়েছিল ড. এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন ইসির হাত ধরে ২০১০ সালে। তখন বুয়েটের সহায়তায় ইভিএম তৈরি করে স্থানীয় নির্বাচনে ব্যবহার শুরু হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশনও ভোটযন্ত্রটি ব্যবহার করে। তবে ২০১৫ সালে রাজশাহী সিটি নির্বাচনে একটি মেশিন অচল হয়ে পড়ায় তা আর ব্যবহার উপযোগী করতে পারেনি রকিব কমিশন। তাই তারা ইভিএম নিয়ে আর বেশি এগোয়নি। ব্যাটারি ব্যবহার নিয়ে বুয়েটের সঙ্গেও দেখা দিয়েছিল দ্বন্দ্ব; ইভিএমগুলোও হয়ে পড়ে অকেজো। থেমে যায় ইভিএম ব্যবহার। কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন  দায়িত্ব নেওয়ার পর ইভিএম নিয়ে নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ  নির্বাচনের ঠিক পূর্বে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে উন্নতমানের ইভিএম তৈরি করে নেওয়া হয়। এতে মেশিন প্রতি ব্যয় হয় দুই লাখ ৩৫ হাজার টাকার মতো। হাতে নেওয়া হয় ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার প্রকল্প। সেই নির্বাচনে মাত্র ছয়টি আসনে ইভিএমে ভোট হয়েছিল। এরপর ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দেড় শ আসনে ইভিএমে ভোট করতে চেয়েছিল ইসি। বরাদ্দ চেয়েছিল প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু টাকাও পায়নি, ইভিএমে ভোটও হয়নি। একাদশ সংসদ  নির্বাচনের আগে কেনা দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার ইভিএম নষ্ট হয়ে গেছে। এসব অকেজো ইভিএম ধ্বংস করার তথা পুড়িয়ে ফেলার প্রাথমিক পরিকল্পনা নিয়েছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন (ইসি)।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর