শিরোনাম
সোমবার, ১ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

শিক্ষা খাতে দুর্নীতি নিয়ে উত্তপ্ত সংসদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

শিক্ষা খাতে দুর্নীতি নিয়ে উত্তপ্ত সংসদ

জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে শিক্ষা খাতে লাগামহীন অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে সংসদ সদস্যদের তোপের মুখে পড়েন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। গতকাল ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের মঞ্জুরি দাবির বিরুদ্ধে ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় শিক্ষা খাত নিয়ে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন পাঁচজন সংসদ সদস্য।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ খাতে ৪৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকা মঞ্জুরি দাবির বিপক্ষে ছাঁটাই প্রস্তাব দেন ছয়জন সংসদ সদস্য। একজন অনুপস্থিত থাকায় আলোচনায় অংশ নেন পাঁচজন। বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, শিক্ষার দুর্নীতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এমপিওভুক্তির জন্য টেবিলে টেবিলে টাকা দিতে হয়। একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার ২০-২৫ বছর পরে বেতন হচ্ছে। শিক্ষকরা অবসরে যাওয়ার পর মৃত্যু হচ্ছে, তবুও অবসর ভাতা পাচ্ছেন না। টাকা ছাড়া কিছুই হয় না। শিক্ষামন্ত্রী সংসদ সদস্যদের বিভিন্ন অভিযোগের জবাব দিলেও দুর্নীতির বিষয়ে কিছু বলেননি। ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, স্কুল-কলেজে ভবন হয়েছে কিন্তু শিক্ষার মানের পরিবর্তন হয়নি। আমার নির্বাচনি এলাকায় একটি সরকারি বিদ্যালয়ে ৪৩টি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। মাত্র পাঁচটি রুম ব্যবহার হয়। এটা অপব্যয়! এ যেন আমার পাকা বাড়ি, পাকা পায়খানা আছে, কিন্তু খাবার নেই! দেখা যাচ্ছে, এক বছর আগে যাদের এমপিওভুক্তির চিঠি দেওয়া হয়েছে, তাদের পিয়ন-চাপরাশি ১২ জনের বেতন হয়েছে, অন্যদের হয়নি। এমপিওভুক্তির জন্য বিভিন্ন টেবিলে যেতে হয়। ধাপে ধাপে টেবিল, মানে ধাপে ধাপে দুর্নীতি। একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার ২০-২৫ বছর পরে বেতন হচ্ছে।

নাটোর-১ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. আবুল কালাম বলেন, শিক্ষিত বেকারে মাথা ভারি হয়ে গেছে। শিক্ষিত বেকার যুবকরা আত্মহত্যা করছে। রেলের খালাসি পদে ২ হাজার ১০০ জন ছেলেমেয়ের চাকরি হয়েছে, যাদের সবাই অনার্স-মাস্টার্স পাস। এটা খুবই কষ্টের বিষয়। আগামী অর্থবছরে কমপক্ষে ৫ লাখ অনার্স-মাস্টার্স পাস ছেলেমেয়ের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, শিক্ষায় ব্যাপক দুর্নীতি, এটা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। টাকা ছাড়া কোনো শিক্ষক অবসর ভাতাও পাচ্ছেন না। আমার শ্যালক শিক্ষক ছিলেন, মারা গেছেন। আমি নিজে তিন বছর তদবির করার পরও অবসর ভাতা পাননি। টাকা ছাড়া কিছুই হয় না। সর্বগ্রাসী দুর্নীতি গোটা জাতিকে গ্রাস করছে।

কুড়িগ্রাম-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হামিদুল হক খন্দকার বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থায় অনিয়ম, দুর্নীতি, বৈষম্য লেগেই আছে। মাঠপর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তারা একই কর্মস্থলে যুগ যুগ ধরে থেকে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। নতুন কারিকুলাম নিয়েও অনেক কথা হচ্ছে। বরিশাল-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথ বলেন, শিক্ষক নিয়োগের পরও শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষকরা গ্রামে যেতে চান না। কুড়িগ্রামের চিলমারীর কেউ যদি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জে নিয়োগ পায়, তাহলে তিনি যোগদান করেন না। পার্বত্য এলাকায় তো আরও সমস্যা। এর সমাধান দরকার। হাই কোর্ট এমপিদের সভাপতি হতে বারণ করলেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন আপিল করবেন। জানি না আদৌ আপিল করেছেন কি না। আজকে তিনি মন্ত্রী, কালকে কোনো কারণে মন্ত্রী না হলে তার অবস্থাও আমার মতো হবে। ঝিনাইদহ-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নাসের শাহরিয়ার জাহেদী বলেন, আমাদের শিক্ষা ক্ষেত্রে গবেষণার বেহাল দশা। নামমাত্র বরাদ্দ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যদি গবেষণার সুযোগ দিতে না পারি, জাতি অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। প্রশাসনিক ব্যয় কমিয়ে শিক্ষা গবেষণায় ব্যয় বাড়ানো দরকার। সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, গত ছয় মাসে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে প্রায় ৯৯ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এটা সত্য যে, দূরবর্তী জায়গায় অনেকে যোগদান করতে চান না। উচ্চ আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এনটিআরসিএর মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। এটি একটি সমস্যা। এই বাধা আইন সংশোধনের মাধ্যমে নিরসনের চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোয় এমপিদের গভর্নিং বডির সভাপতি করা হচ্ছে না। আমরা ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি। গবেষণা খাতে বরাদ্দ প্রসঙ্গে মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর গবেষণা খাতে সর্বপ্রথম সরকারি বরাদ্দ দেওয়া শুরু করেছিলেন। যার সুফল সরাসরি আমরা পাচ্ছি। আমাদের নানা খাত থেকে গবেষণায় বরাদ্দ দেওয়া হয়। অনেক সময় দেখি গবেষণায় বরাদ্দকৃত অর্থও যথাযথভাবে খরচ হয় না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর