সোমবার, ১ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা
বিএনপির অভিযোগ

শুধুই ভারতের সুবিধা, কোটায় শূন্য বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নয়াদিল্লি সফরে ভারতের সঙ্গে যে ১০টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে, সেগুলো ‘গোলামির নবতর সংস্করণ’ মাত্র। শুধুই ভারতের সুবিধা, বাংলাদেশের কোটায় শূন্য। তিনি বলেন, কানেকটিভিটির (সংযোগ) নামে ভারতের এক অংশ থেকে আরেক অংশে রেল যোগাযোগের জন্য বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে ‘করিডর’ দেওয়া হয়েছে। এতে দেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।

জাতীয় স্বার্থবিরোধী এসব চুক্তি জনগণ মেনে নেবে না। গতকাল রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের নিশ্চয়ই ১৯৭২ সালে ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত ২৫ বছরের গোলামি চুক্তির কথা স্মরণ আছে। ৫২ বছর পর সে ধারাবাহিকতায় গত ২২ জুন ভারতের সঙ্গে সমঝোতার আড়ালে যেসব চুক্তি করা হলো, তা বাংলাদেশকে আজীবনের জন্য ভারতের গোলামে পরিণত করবে। এর ফলে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।’ এসব চুক্তি-সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে দেশের প্রতিরক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টিকে ভারতের জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার অংশে পরিণত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘এটা খুবই বিপজ্জনক এবং দেশের স্বাধীনতার প্রতি হুমকি। এটি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও জোট নিরপেক্ষ নীতির পরিপন্থি। এসব সমঝোতা ও চুক্তির মাধ্যমে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে নিরাপত্তাকৌশলগত ‘বাফার স্টেট’ হিসেবে ভারতকে ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে চান। ফলে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবে আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার জটিলতার মধ্যে পড়বে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যে সাতটি সমঝোতা স্মারক নতুন করে সই হয়েছে, সেগুলোর প্রায় সবই বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলকেন্দ্রিক। প্রয়োজনের সময় বাংলাদেশের ভূখন্ডকে ভারতের সামরিক ও বেসামরিক পণ্য পরিবহনের জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ‘চিকেন নেক’কে বাইপাস করে ব্যবহার করার সুদূরপ্রসারী মহাপরিকল্পনা থেকেই এসব সমঝোতা-চুক্তি করা হয়েছে।’

গত দেড় দশকে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ‘অনন্য উচ্চতায়’ পৌঁছেছে বলে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সম্পর্কের তথাকথিত এই ‘সোনালি অধ্যায়’-এর সময়কালে বাংলাদেশের জনগণের তরফে প্রাপ্তি ‘শূন্যের কোটায়’। এ সময়ে দুই দেশের মধ্যকার লেনদেনের প্রধান অংশজুড়ে রয়েছে কানেকটিভিটির নামে একের পর এক ভারতকে ট্রানজিট ও করিডর সুবিধা দেওয়া। ট্রানজিট-করিডর দেওয়ার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও কৌশলগত ঝুঁকি সত্ত্বেও সবকিছুই একতরফাভাবে করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বার্থকে কোনো গুরুত্বই দেওয়া হয়নি।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একদিকে ভারত পেয়েছে অবাধ স্থল ও নৌ ট্রানজিট, যা ভারতের অবশিষ্ট অংশের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব ভারতের ‘সেভেন সিস্টার্স’-এর যোগাযোগের সময় ও দৈর্ঘ্য কমিয়েছে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ। কলকাতা-আগরতলার ১ হাজার ৭০০ কিলোমিটার দূরত্ব কমে দাঁড়িয়েছে ৩৫০ কিলোমিটারে। ভারত পেয়েছে বাংলাদেশের পায়রা, মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারে অগ্রাধিকারের সুবিধা। অন্যদিকে বাংলাদেশ নেপালের মাত্র ২১-২২ কিলোমিটারের ট্রানজিট সুবিধাটুকুও ভারতের কাছ থেকে আদায় করতে পারেনি।’

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার এ দেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সে কারণে জনগণের কাছে তাদের কোনো জবাবদিহি নেই। তাই দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্যও তারা সচেষ্ট নয়। ফলে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে রেল করিডর দেওয়ার চুক্তি; তিস্তা প্রকল্পে ভারতের সহযোগিতা গ্রহণ; প্রতিরক্ষা ও সামরিক সহযোগিতা; ওষুধ সংক্রান্ত সমঝোতা; বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতের অবাধ বিচরণ; ভারতের ইন স্পেস এবং বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের যৌথ স্যাটেলাইট সমঝোতা; ডিজিটাল পার্টনারশিপ; গ্রিন পার্টনারশিপ; সমুদ্র সহযোগিতা ও সুনীল অর্থনীতি ইত্যাদি নানা নাম দিয়ে যে ১০টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হলো, তাতে বাংলাদেশের প্রাপ্তি শূন্য।’

বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষার চেয়ে ভারতের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দায়বদ্ধতা থেকে এসব সমঝোতা সই হয়েছে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তার মতে, ‘সে কারণেই অনেক আগে ভারতের সঙ্গে হওয়া সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলারের ভারতীয় ঋণচুক্তি (লাইন অব ক্রেডিট) বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার বিষয়ে এ সফর ছিল নীরব। তা ছাড়া ডলারকে পাশ কাটিয়ে ভারতীয় মুদ্রায় বাণিজ্য পরিচালনার বিষয়টি উঠে এসেছে আলোচনায়। অথচ বাংলাদেশের রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের অন্যতম প্রধান মুদ্রাই হচ্ছে মার্কিন ডলার। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক-অশুল্ক বাধা দূর করে বিপুল বাণিজ্যিক ঘাটতি কাটিয়ে ওঠার কিছুই এসব সমঝোতায় স্থান পায়নি।’

সর্বশেষ খবর