সোমবার, ১ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

অর্থসংকটে পুলিশের হেলিকপ্টার কেনা পেছাল

মানিক মুনতাসির

অর্থসংকটের কারণে বাংলাদশ পুলিশের ব্যবহারের জন্য দুটি হেলিকপ্টার কেনার প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড় করেনি অর্থবিভাগ। কৃচ্ছ্রসাধনের অংশ হিসেবে এ ধরনের কেনাকাটা প্রথমে স্থগিত হলেও পরে অতি জরুরি দেখিয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অর্থসংকটের কারণেই তা কেনা হলো না। গতকাল ছিল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ দিন। এদিন পর্যন্ত জোর তদবির করেও অর্থ ছাড় করানো সম্ভব হয়নি। আজ থেকে নতুন অর্থবছর ২০০৪-২৫ শুরু হয়েছে। ফলে অতি জরুরি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে নতুন অর্থবছরের শুরুতেই যেন এ অর্থ ছাড় করা হয় তা নিয়েও দেনদরবার চলছে। অর্থবিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ সপ্তাহে এসে রাশিয়া থেকে হেলিকপ্টার কেনার ৩০ শতাংশ ঋণপত্র মূল্য বা ১৭৭.০৩ কোটি ছাড় করার জোর সুপারিশ করেছিল বাংলাদেশ পুলিশ। কিন্তুÍ অর্থ মন্ত্রণালয় মনে করে সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন নীতির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ নয়, এমন দুই তারকাখচিত মধ্যম মানের কেনাকাটার অর্থ ছাড় নিরুৎসাহিত করা হয়। জানা গেছে, ২০২২ সালের মার্চ থেকে চালু হয়েছে পুলিশের অ্যাভিয়েশন উইং। ডলার সংকটের কারণে এই উইংয়ের জন্য সরকারকে কিস্তিতে হেলিকপ্টার কিনতে হচ্ছে। অর্থবছরের শেষে এ সংকট আরও তীব্র হওয়ায় সেই কিস্তি কর্মসূচিও বাস্তবায়ন করতে পারেনি অর্থবিভাগ। এদিকে করোনা মহামারির পর বৈশ্বিক ও আর্থিক সংকটের কারণে কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচিতে আরও কঠোর নীতি অনুসরণ করা হয়। গত ৭ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আগামী ছয় মাস দেশে সংকোচন নীতিতে কেনাকাটাসহ প্রশাসন এবং উন্নয়ন কার্যক্রম চলবে। এই নীতি অনুসরণ করায় পুলিশ বিভাগের হেলিকপ্টার কেনাও পিছিয়ে গেছে। অর্থবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তার এবং সুরক্ষা সেবা বিভাগ ৩০ শতাংশ ঋণপত্র খোলার জন্য অর্থ চেয়ে বাংলাদেশ পুলিশের প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল কয়েক মাস আগে। প্রস্তাব থেকে জানা যায়, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ পুলিশের আকাশযান খাতে ১৯১ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। সেখান থেকে রাশিয়ার জেএসসি রাশিয়ান হেলিকপ্টার্স কোম্পানির জন্য ঋণপত্র খুলতে ১৭৭.০৩ কোটি টাকা ছাড় করার অনুরোধ করা হয়। যেহেতু চলতি বছর বরাদ্দ আছে তাই পরের বছর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দুটি জেএসসি রাশিয়ান হেলিকপ্টারের জন্য তহবিল বরাদ্দের সুযোগ নাও থাকতে পারে। সে কারণে চলতি অর্থবছরজুড়ে জোর তদবির করেছিল পুলিশ বিভাগ। এমনকি বছরের শেষ দিন পর্যন্ত আশা ছাড়েনি। কিন্তু কৃচ্ছ্রসাধনের যুক্তি দেখিয়ে তা ছাড় করেনি অর্থবিভাগ। এ প্রকল্পের কেনাকাটার কাজে নিযুক্ত রাশিয়ান কোম্পানিটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল প্রয়োজনীয় কিস্তি পরিশোধ করা হলে আগামী আগস্ট মাসে রাশিয়ান এমআই-১৭১এ২ হেলিকপ্টার দুটি সরবরাহ করবে। ইতোমধ্যে পুলিশের পাইলট এবং কর্মকর্তারা রাশিয়ায় প্রশিক্ষণ এবং স্টেজ ইনসপেকশন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণও করেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশের কর্মকর্তারা হেলিকপ্টারগুলোর টেস্ট রান এবং প্রি-শিপমেন্ট ইনসপেকশনের জন্য রাশিয়ায় অবস্থান করছেন। রাশিয়া থেকে হেলিকপ্টার দুটি সংগ্রহ করতে ২০২১ সালে প্রথম চুক্তি করে সরকার। এতে সরকারের মোট খরচ হচ্ছে ৪২৮ কোটি টাকা ১১ লাখ টাকা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক এক মহাপরিদর্শক বলেন, যে কোনো দরকারি কেনাকাটা নানা যাচাইবাছাই করেই তো করা হয়। এ ছাড়া অর্থসংকটের কারণটা যৌক্তিক হলে হেলিকপ্টার কেনাটা পেছাতেই পারে। তবে এটা কতটা জরুরি সেটাও বিবেচনায় নেওয়ার পরামর্শ দেন পুলিশের এই সাবেক কর্মকর্তা।

 

সর্বশেষ খবর