বুধবার, ৩ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা
দুর্নীতির বিরুদ্ধে অব্যাহত অভিযান

৬৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ

সাবেক অতিরিক্ত আইজির স্ত্রীসহ চার্জশিট

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এডিশনাল আইজিপি) ড. শামসুদ্দোহা খন্দকারের বিরুদ্ধে ৬৬ কোটি ৪৮ লাখ ৬৯ হাজার ৯৮১ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ অভিযোগে গতকাল ড. শামসুদ্দোহা খন্দকার ও তার স্ত্রী ফেরদৌসী সুলতানার বিরুদ্ধে আদালতে দুটি চার্জশিট দিয়েছে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক খোরশেদ আলম।

দুদক সূত্র জানায়, ড. শামসুদ্দোহা খন্দকার ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংকের হিসাবে সন্দেহজনক উৎসের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও অস্বাভাবিক লেনদেনের মাধ্যমে ২১ কোটি ৫ লাখ ২৫ হাজার ৮২৯ টাকা জমা করে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় উত্তোলন করে তার অবস্থান প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান, মালিকানা আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে তিনি ৮ কোটি ৪৪ লাখ ১০ হাজার ২২১ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপনসহ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া দুদকের অনুসন্ধানে ২ কোটি ৮৭ লাখ ৩ হাজার ৭৮ টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। যে কারণে তার বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪ এর (২৬(২) ২৭(১) এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। অন্যদিকে অপর চার্জশিটে তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ২৮ কোটি ৪৭ লাখ ৩ হাজার ৮৯১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করা এবং ২৭ কোটি ৪৮ লাখ ৮২ হাজার ৪৯১ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। আর ফেরদৌসী সুলতানা গৃহিণী। তার আয়ের কোনো উৎস নেই।

জানা গেছে, শামসুদ্দোহা ২০১১ সালে প্রেষণে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান পদে বসেন। দায়িত্বপালনের সময় তার বিরুদ্ধে সীমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ওই বছরের ৪ মার্চ তিনি অবসর-উত্তর (পিআরএল) ছুটিতে যান। ২০১৯ সালে তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। ওই মামলায় স্ত্রী ফেরদৌসী সুলতানাকেও আসামি করা হয়। এ সময় ২১ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলাটি হয়েছিল। আদালত সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর বিশেষ জজ আদালতে গতকাল ওই দুটি চার্জশিট জমা দিয়েছে দুদক। বর্তমানে ওই দুই আসামি জামিনে আছেন। দুদক সূত্র জানায়, ড. শামসুদ্দোহা ও তার পরিবারের রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ১ হাজার ২৭ শতক জমি আছে, এগুলোর বর্তমান বাজারদর প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। শামসুদ্দোহার নামে রাজধানীর খিলক্ষেত ও ঢাকার নবাবগঞ্জে ৩৫টি দলিলে ৫৬৩ শতকের বেশি জমির খোঁজ পাওয়া গেছে। এসব জমির বেশির ভাগই নবাবগঞ্জের কলাকোপায়। দলিলে এসব স্থাবর সম্পদের দাম ৪০ কোটির মতো হলেও বর্তমান বাজারদর প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। এর বাইরে তার একটি কৃষি খামার ও গ্রিন পার্ক রয়েছে। দলিলে এ দুটির দাম প্রায় ৪ কোটি টাকা। শামসুদ্দোহার স্ত্রী ফেরদৌসী সুলতানা খন্দকারের নামে রাজধানীর নিকুঞ্জে তিন কাঠা, খিলক্ষেতে ২২ কাঠা, গুলশানের বিভিন্ন মৌজায় ৫৩ কাঠা জমির তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া গাজীপুর ও নবাবগঞ্জের বিভিন্ন মৌজায় মোট ৩২টি দলিলে তাঁর নামে ৪৬৪ শতক জমি রয়েছে। দলিলে এসব জমির দাম ৩০ কোটি টাকার কিছু বেশি হলেও বর্তমান বাজারদর শত কোটি টাকার ওপরে। গুলশানে ১৩৫ নম্বর রোডের এসইএস-এ ৬ নম্বর প্লটে এক বিঘা জমির ওপর একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি তার দখলে, যার বাজার দর প্রায় ২০০ কোটি টাকা। দেননি কোনো ভাড়া, উল্টো তাকে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য আবেদন করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে। পিআরএলে থাকাকালেও এক বছর তিনি বাড়িটিতে থাকেন। পিআরএল শেষ হলেও তিনি বাড়ি ছাড়েননি। পরে বাড়িটি ছাড়তে তাকে আরও ছয় মাস সময় দেওয়া হয়। এরপরও শামসুদ্দোহা ঢাকায় থাকার মতো তার কোনো বাড়ি বা ফ্ল্যাট না থাকার কারণ উল্লেখ করে ২০১৭ সালে তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বাড়িটি বরাদ্দ পাওয়ার জন্য আবেদন করেন। তবে তিনি পূর্বাচলে আরেকটি প্লট পাওয়ায় পূর্ত মন্ত্রণালয় তার আবেদন নাকচ করে দিলে তিনি আদালতে রিট করেন। তাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদে আবাসন পরিদফতর একবার ম্যাজিস্ট্রেটও নিয়োগ দেয়। তবে পুলিশের প্রভাবশালী লোক হওয়ায় সে প্রক্রিয়াও থেমে যায়। এরপর আবাসন পরিদফতর আর কখনো তাকে বাড়ি থেকে তাড়ানোর সাহস দেখায়নি। জানা যায়, বিলাসবহুল ওই বাড়িতে একসময় পুলিশের সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ থাকতেন। নূর মোহাম্মদ অবসরে গেলে ২০০৮ সালে পুলিশের তৎকালীন অতিরিক্ত আইজিপি শামসুদ্দোহা খন্দকারকে বসবাসের জন্য আবাসন পরিদফতর ওই বাড়ি বরাদ্দ দেয়।

সর্বশেষ খবর