বুধবার, ৩ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা
দুর্নীতির বিরুদ্ধে অব্যাহত অভিযান

বেনজীর-মতির সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিস

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী এবং দুই কন্যার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিবরণ চেয়ে নোটিস দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নোটিসে তাদের সম্পদের বিবরণ দিতে ২১ কর্মদিবস সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে পৃথক নোটিশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা মতিউর রহমান, তার দুই স্ত্রী ও সন্তানদের সম্পদের বিবরণী দিতে বলেছে দুদক। তাদেরও ২১ কর্মদিবস সময় দেওয়া হয়েছে। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন সংস্থাটির সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন। তিনি জানান, নোটিসে বলা হয়েছে, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে দুদকের স্থির বিশ্বাস জন্মেছে যে, আপনারা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্বনামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ বা সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। নিজ ও আপনাদের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তির নামে-বেনামে অর্জিত যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, দায়-দেনা, আয়ের উৎস ও তা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণী কমিশনে দাখিল করবেন। এ আদেশ পাওয়ার ২১ কার্যদিবসের মধ্যে নির্ধারিত ছকে সম্পদ বিবরণী দাখিলে ব্যর্থ হলে কিংবা মিথ্যা সম্পদ বিবরণী দাখিল করলে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন বলেন, সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদের জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অনুসন্ধানের জন্য গঠিত অনুসন্ধানকারী টিম প্রাথমিক অনুসন্ধানে এ যাবৎ প্রাপ্ত তথ্য ও রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী জীশান মীর্জা, কন্যা ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর এবং তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছে। এসব অবৈধ সম্পদ ছাড়াও অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে-বেনামে, দেশে-বিদেশে আরও স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যায়।

পরে আলোচিত এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মো. মতিউর রহমান দুর্নীতির মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ হুন্ডি ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানে একটি অনুসন্ধানকারী টিম গঠন করে দুদক। অনুসন্ধান শেষে তাদের বিরুদ্ধে দুদক অনেক তথ্য পেয়েছে। এ কারণে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মতিউর রহমান, তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ, প্রথম পক্ষের সন্তান আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্নব ও ফারজানা রহমান ইপ্সিতা এবং দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিউলীর নামে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারি করা হয়েছে। এর আগে দুর্নীতি ও বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বিষয়ে গত ২৩ ও ২৪ জুন হাজির না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে অভিযোগের লিখিত বক্তব্য জমা দেয় বেনজীর পরিবার। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে বেনজীর আহমেদকে গত ৬ জুন এবং স্ত্রী জীশান মীর্জা ও দুই মেয়েকে ৯ জুন প্রথম দফায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে দুদক। দুদক সূত্র জানায়, বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে জব্দ জমি বিক্রি, হস্তান্তর বন্ধে আদালতের আদেশের কপি সংশ্লিষ্ট জেলা রেজিস্ট্রার ও সংশ্লিষ্ট সাব রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠানো হয়েছে। জমি অন্য কারোর নামে যাতে নামজারি না করা হয়, সেজন্য আদালতের রায়ের কপি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট এসিল্যান্ড অফিসে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া কোম্পানির মালিকানা হস্তান্তর বন্ধে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদফতরে আদালতের ওই আদেশ পাঠানো হয়। একই সঙ্গে ব্যাংকে জমা থাকা টাকা উত্তোলন বন্ধে অবরুদ্ধের আদেশ সোনালী ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যাংকে পাঠানো হয়। গত ২৩ মে সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদের ৮৩টি দলিলের সম্পত্তি ও ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেন আদালত। এরপর গত ২৬ মে আদালত বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামের ১১৯টি জমির দলিল, ২৩টি কোম্পানির শেয়ার ও গুলশানের চারটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন। সব মিলিয়ে ৬২৭ বিঘা জমি ক্রোক করা হয়। এ ছাড়া গত ৩০ জুন দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে মতিউর রহমান, তার স্ত্রী ও সন্তানদের নামে থাকা সম্পদের খোঁজে ঢাকা, নরসিংদী ও মুলাদির সাব-রেজিস্ট্রার অফিস ও ভূমি অফিস, রাজউক, জয়েন্ট স্টক কোম্পানিসহ বিভিন্ন দফতরে পৃথক চিঠি দেওয়া হয়। এর আগে গত ২৩ জুন মতিউর রহমানের দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য অনুসন্ধানে তিন সদস্যের টিম গঠন করে দুদক।

সর্বশেষ খবর