বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা
বিশ্ববিদ্যালয়ে সংকটের সমাধান কীভাবে

দ্রুত সমাধানের পথ খুঁজতে হবে

--- ড. সৈয়দ মন্জুরুল ইসলাম

নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্রুত সমাধানের পথ খুঁজতে হবে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সৈয়দ মন্জুরুল ইসলাম বলেছেন, প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। আমাদের দেশে সব সমস্যার সমাধান প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আসে। কারণ উচ্চপদস্থ কোনো ব্যক্তি বা কর্মকর্তাই দায়িত্ব নিতে চান না। তাই আশা করি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের সম্মান বজায় রেখে, শিক্ষকদের দাবি মেনে নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরিয়ে আনার মতো সিদ্ধান্তে আসতে হবে। গতকাল তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দ্রুত সিদ্ধান্ত না এলে হতাশ হব। আমি আশাকরি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষক নেতাদের বৈঠক ফলপ্রসূ হবে। এর মধ্যে অর্থমন্ত্রী মন্তব্য করে আরও জট পাকিয়ে ফেললেন। এতে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হবে। ছাত্ররা জিম্মি হয় এমন ধর্মঘট আমি পছন্দ করি না। যদিও এরশাদের সময় কিংবা অন্য অনেক সময়েও অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থেকেছে। দ্রুত সমাধান হলে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে এ ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া সম্ভব। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে চললে তো সমস্যা হবে। সরকারের উচিত হবে না এটাকে লম্বা করা। শিক্ষকরা প্রত্যয় স্কিমের অসুবিধা এবং বিদ্যমান স্কিমের সুবিধাগুলো পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেছেন। বর্তমান ব্যবস্থায় একজন অধ্যাপক মাসে ৪৫ হাজার ৭৯০ টাকা পেনশন পান। এ জন্য তাদের বেতন থেকে কোনো টাকা কাটা হয় না। নতুন ব্যবস্থায় ৩০ বছর বয়সে যোগ দিয়ে ৬৫ বছর বয়সে অবসর নিলে মাসে মাসে বেতন থেকে টাকা কাটার পর পেনশন পাওয়া যাবে ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৬০ টাকা। কিন্তু আনুতোষিক বা গ্রাচ্যুইটি বাবদ এককালীন ৮০ লাখ ৭৩ হাজার টাকা নতুন ব্যবস্থায় পাওয়া যাবে না। বর্তমান ব্যবস্থায় পেনশনারের (বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মী) মৃত্যুর পর তার নমিনি বা মনোনীত ব্যক্তি (স্বামী/স্ত্রী) আজীবন পেনশন সুবিধা পান। নতুন ব্যবস্থায় পেনশনারের মৃত্যু হলে তার ৭৫ বছর বয়স যেদিন হতো, সেদিন পর্যন্ত পেনশন পাবেন মনোনীত ব্যক্তি, আজীবন নয়। এখন বছর বছর পেনশন বাড়ে, অর্থাৎ ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট (বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি) হয়। নতুন ব্যবস্থায় পেনশন বাড়বে না। অর্জিত ছুটির বিপরীতে অবসরকালে এখনকার মতো টাকা পাওয়া যাবে না। অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটির (এলপিআর) বিষয়ে নতুন ব্যবস্থায় কিছু বলা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন শিক্ষকরা ৬৫, কর্মকর্তারা ৬২ ও কর্মচারীরা ৬০ বছর বয়স হলে অবসরে যান। নতুন ব্যবস্থায় ৬০ বছর বয়সের পর পেনশন পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকেরা এখন পেনশনের সঙ্গে বছরে দুটি উৎসব ভাতা ও একটি বৈশাখী ভাতা এবং মাসে মাসে চিকিৎসা ভাতা পান। নতুন ব্যবস্থায় বিষয়টি নিয়ে কিছু বলা নেই। তাহলে কেন শিক্ষকরা নতুন একটি স্কিমের মধ্যে যাবেন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। জীবন বীমা প্রতিষ্ঠান আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি এক হলো? এগুলো স্বায়ত্তশাসনের বিরুদ্ধে যায়।’ ড. সৈয়দ মন্জুরুল ইসলাম আরও বলেন, দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নয়ছয়ের চিত্র একের পর এক উঠে আসছে। পেনশনের সময় গিয়ে দেখা গেল প্রত্যয় স্কিমের টাকা উধাও, তখন কি হবে? পেনশনের টাকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সরকারের দফতরে দফতরে গিয়ে ঘুরতে হবে। আমি আশাকরি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষক নেতাদের বৈঠক ফলপ্রসূ হবে। আশাকরি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের সম্মান বজায় রেখে, শিক্ষকদের দাবি মেনে নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত আসবে। দ্রুত সিদ্ধান্ত না এলে হতাশ হব। শিক্ষকদের এ অবস্থার জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে পদপদবি নানা প্রাপ্তির জন্য শিক্ষকরা রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছেন। এ জন্য সরকারও শিক্ষকদের করুণার চোখে দেখতে পারে। রাজনৈতিক দলাদলিতে পদের জন্য লালায়িত হয়েছে। এ জন্য একসময়ের সেই সম্মান আজ আর নেই। তাই আন্দোলনকারী শিক্ষকদের বলব নিজেদের নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রেখে হারানো সম্মান ফিরিয়ে আনতে হবে।

সর্বশেষ খবর