শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

ব্রিটেনে ইতিহাস গড়ার পথে স্টারমার

সংসদ নির্বাচনে ১৮৭ বছরের রেকর্ড ভেঙে জয়ের পথে লেবার পার্টি

আ স ম মাসুম, যুক্তরাজ্য

ব্রিটেনে ইতিহাস গড়ার পথে স্টারমার

পরিবর্তনের নির্বাচন-এমন বার্তা নিয়ে ব্রিটেনে ভোট গ্রহণ শুরু হলে দিন শেষে সেই পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে লেবার পার্টির পালে! ভোটের আগের জরিপ বলছিল, ৪৫১ আসন পাবে লেবার পার্টি, যা ১৮৩৭ সালের পর সর্বোচ্চ মেজরিটির সম্ভাবনা। ১৯৯৭ সালেও টনি ব্লেয়ারের নেতৃত্বে ৪১৯ আসন পায় লেবার পার্টি। গত ১৪ বছরে চার নির্বাচনে পাঁচজন প্রধানমন্ত্রী দেখেছে ব্রিটেন। নানা ভরাডুবির পরও কনজারভেটিভ পরপর চারবার সরকার গঠন করে। তবে বরিস জনসনের হাতে পতনের আওয়াজ শুরু হয়, সেই পতন নিশ্চিত হয় মাত্র ৪১ দিনের প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের হাতে। খাদ থেকে তোলার জন্য দল ও দেশের দায়িত্ব নেন ঋষি সুনাক। তবে শেষ পর্যন্ত তিনিও ব্যর্থ হলেন। স্থানীয় সময় গতকাল সকাল ৭টা থেকে সারা দেশে ১৫ হাজারের বেশি পোলিং স্টেশনে ভোট গ্রহণ হয়েছে। মোট ভোটার ছিলেন ৪ কোটি ৬০ লাখ। এ নির্বাচনে কনজারভেটিভের অনেক প্রভাবশালী মন্ত্রী যেমন অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্ট হারার আশঙ্কায় আছেন। এমনকি সাভান্থা জরিপে, নর্থ ইয়র্কশায়ারে নিজ আসনে হারার আশঙ্কায় আছেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। এদিকে বাংলাদেশি এলাকায় ভোট নিয়ে বেশ আমেজে আছেন ভোটাররা। বাংলাদেশি ও মুসলিম এলাকায় ভোটের হিসাবে গাজা ইস্যুতে স্থানীয় রাজনীতিবিদদের ভূমিকা বিচার করছেন ভোটাররা। এবারই সর্বোচ্চ ৩৪ জন ব্রিটিশ বাংলাদেশি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে। এর মধ্যে আটজন দাঁড়িয়েছেন লেবার পার্টি থেকে। নয়জন ব্রিটিশ বাংলাদেশি নারী প্রার্থী এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ থেকে নির্বাচন করছেন দুজন বাংলাদেশি। এ বছর পুরনো চার ব্রিটিশ বাংলাদেশির সঙ্গে পার্লামেন্টে নতুন মুখ দেখা যাবে।

একই সঙ্গে প্রথমবারের মতো একজন বাংলাদেশির মন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ব্রিটেনের জাতীয় নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে আশাবাদী লেবার প্রার্থী রুশনারা আলী, টিউলিপ সিদ্দিক, আপসানা বেগম ও রুপা হক। এ চারজনই লেবার থেকে নির্বাচিত ব্রিটিশ বাংলাদেশি এমপি। মুসলিম ও বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসে বেথনালগ্রিন ও স্টেপনি আসনে গাজা ইস্যু নিয়ে বেশ বেকায়দায় থাকলেও রুশনারা আলী পঞ্চম জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। লেবার পার্টি ক্যামব্র্রিজহিথ রোডের অফিসের সামনে বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। রুশনারা জানান, ব্রিটিশ বাংলাদেশি কমিউনিটিকে মূলধারা থেকে আলাদা করার ষড়যন্ত্র চলছে। আমি গত ১৪ বছরে পার্টির ভিতরে পলিসিগত অনেক কাজ করেছি। লেবার সরকার গঠন করলে আমরা যে চারজন এমপি রয়েছি তারা ভিতরে অনেক কাজ করতে পারব। তাই লেবারকে জয়ী করা ছাড়া বিকল্প নেই। রুশনারা আলী পাস করলে লেবার পার্টির গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিত্ব পাওয়ার সম্ভাবনার কথা বলছেন তাঁর সমর্থকরা। এদিকে পপলার লাইমহাউস থেকে লেবার প্রার্থী আপসানা বেগম বলেছেন, লোকাল মানুষের সমস্যা নিয়ে সংসদে কথা বলেছি, ৬০ হাজার কেস ওয়ার্ক করেছি। আমি স্থানীয় মানুষের সমর্থন নিয়ে সংসদে আবারও কথা বলার সুযোগ পাব। হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেট থেকে নির্বাচন করা টিউলিপ সিদ্দিক হ্যাট্রিক জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। তিনি সকালে হেনডেন ভোট সেন্টারে দলীয় সমর্থক ও স্থানীয় ভোটারদের নিয়ে ছবি তুলেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, লেবার সরকার গঠন করলে মন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা আছে টিউলিপের। তিনি বলেন, দেশের পরিবর্তনের জন্য লেবার সরকারের বিকল্প নেই। টিউলিপের মতো হ্যাটট্রিক বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে আছেন আরেক বাংলাদেশি নারী রুপা হক। ইলিং আসন থেকে ২০১৫ সালে তিনি প্রথম নির্বাচিত হন। এদিকে এ চারজন ছাড়াও নতুন আর এক-দুজন বাংলাদেশির পার্লামেন্টে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর