শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

পানিবন্দি লাখো মানুষ

বন্যা পরিস্থিতি - যমুনার পানি বিপৎসীমার ওপরে ♦ সিলেটে কোথাও উন্নতি কোথাও অবনতি ♦ সিরাজগঞ্জে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট ♦ গাইবান্ধায় বাঁধ ভেঙে ১৫ গ্রাম প্লাবিত

প্রতিদিন ডেস্ক

পানিবন্দি লাখো মানুষ

বন্যায় কুড়িগ্রামে পানিবন্দি বিপুল মানুষ। কলাগাছের ভেলা ভরসা অনেকের -বাংলাদেশ প্রতিদিন

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় সারা দেশে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। কোথাও কোথাও স্কুল-কলেজও তলিয়ে আছে পানির নিচে। বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে বেশির ভাগ নদনদীর পানি। এতে নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এদিকে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি কোথাও উন্নতি আবার কোথাও অবনতি হয়েছে।

যমুনার পানি বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপরে বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি গতকাল বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গতকাল বিকাল পর্যন্ত যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আলহাজ নাজমুল হক জানান, সারিয়াকান্দি উপজেলায় যমুনা নদীর পানি বিকাল ৩টার পর বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। গত বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পানির উচ্চতা ছিল ১৫ দশমিক ৬৯ মিটার। গতকাল সকাল থেকে পানির উচ্চতা ১৬ দশমিক ৩৭ মিটার ছিল। ২৪ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে ৬৮ সেন্টিমিটার। পানি বাড়ায় সারিয়াকান্দির চরগুলোর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সিরাজগঞ্জে পানিবন্দি শত শত পরিবার : যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বসতভিটা ও আশপাশে পানি প্রবেশ করায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। আমন, পাট ও শাকসবজি খেত তলিয়ে ফসল নষ্ট হওয়ায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। তাঁত কারখানা বন্ধ হওয়ায় শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে যাওয়ায় পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটছে। অন্যদিকে পানি বাড়ায় যমুনার অরক্ষিত অঞ্চলে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনে ইতোমধ্যে সদর উপজেলার কাওয়াকোলা, কাজিপুরের খাসরাজবাড়ী, শাহজাদপুরের পাঁচিল, জালালপুরে প্রায় সহস্রাধিক বসতভিটা, গুচ্ছ গ্রাম, মসজিদ ও হাসপাতাল বিলীন হয়ে গেছে। 

সিলেটে কোথাও উন্নতি কোথাও অবনতি: সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি কোথাও উন্নতি আবার কোথাও অবনতি হয়েছে। বিশেষ করে জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, বালাগঞ্জ, দক্ষিণ সুরমা, বিয়ানীবাজার ও ফেঞ্চুগঞ্জে বন্যার অবনতি হয়েছে। এই চার উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ডুবেছে রাস্তাঘাট। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে পানির নিচে। এ ছাড়া গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এসব উপজেলায় পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে।

গাইবান্ধায় পানিবন্দি ২০ হাজার পরিবার : ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর পানি বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে করতোয়া নদীর পানি বাড়লেও তা বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। ফলে এসব নদনদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি ও আবাদি জমি প্লাবিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ২০ হাজার পরিবার। তবে কমেছে তিস্তার পানি।

জামালপুরে পানিবন্দি ১০ হাজার : জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চিকাজানী, চুকাইবাড়ী, বাহাদুরাবাদ, ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলী, নোয়ারপাড়া, কুলকান্দি, পাথর্শী, সাপধরী, বেলগাছা, মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া, আদ্রা, মাহমুদপুর, নাংলা, কুলিয়া এবং মাদারগঞ্জ উপজেলার চর পাকেরদহ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব ইউনিয়নের অন্তত ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমি। নদীতীরবর্তী চরাঞ্চলের বিভিন্ন ইউনিয়ন ও এলাকায় যাতায়াতের জন্য স্থানীয় রাস্তাগুলোতে পানি উঠে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে যোগাযোগ।

ফুলগাজী ও পরশুরামের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি: ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে বাঁধ ভাঙা স্থান থেকে পানি নিম্নাঞ্চলের দিকে চলে যাওয়ায় এখনো নিম্নাঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে আছে। ভাঙনকবলিত এলাকায় বাড়ির রান্নাঘরে এখনো পানি থাকায় তারা খাওয়ায় কষ্ট করছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে স্থানীয়রা জানান। অনেকে এখন পর্যন্ত কোনো খাবার পাননি বলে দাবি করেছেন।

সুনামগঞ্জে পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি : সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হয়েছে। সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭ সেমি নিচে রয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানি ১৩ সেমি কমেছে। এদিকে নদীর পানি কমলেও জেলার ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ উপজেলায় কিছু হাওর এলাকায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যাদুকাটা, খাসিয়ামার, রক্তি, বৌলাই, চেলা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।

হাঁটুপানিতে ডুবে আছে পঞ্চগড়ের হঠাৎপাড়া : অতিবর্ষণের কারণে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। রাস্তাঘাট ও কালভার্ট ভেঙে গিয়ে চলাচলে বিঘ্নতা সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে হাঁটুপানিতে ডুবে আছে পঞ্চগড় সদর উপজেলার পূর্বজালাশী এলাকার হঠাৎপাড়া গ্রাম। টানা বর্ষণ এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সংকটের মধ্যে পড়েছে এই গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবার। সেখানের অধিবাসীরা জানান, প্রায় এক মাস ধরে এ অবস্থা বিরাজ করছে।

সর্বশেষ খবর