শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

দুর্নীতির বিরুদ্ধে একগুচ্ছ নির্দেশনা

সচিবদের দুই ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক

ওয়াজেদ হীরা

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে সব সচিব, দফতর প্রধানদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রত্যেক অফিসে সচিব হিসেবে বা সংস্থা প্রধান হিসেবে যেন লিডারশিপ থাকে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর যে নির্দেশনা জিরো টলারেন্স সেটিকে মাথায় রেখে সবাইকে কাজ করার নির্দেশনাও দিয়েছেন। দুর্নীতিবাজদের পদোন্নতি-পোস্টিংয়ের ক্ষেত্রে কঠোর হতে হবে। এরকম একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। গতকাল বিকালে সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা কক্ষে আয়োজিত সচিব সভায় এসব নির্দেশনা দেন বলে বৈঠকের একাধিক সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছে। এর আগে বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব ও প্রধানদের নিয়ে বৈঠকে বসেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। দুই ঘণ্টারও বেশি সময় চলে রুদ্ধদ্বার এ বৈঠক।

বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন প্রথম সচিব সভাটা করেন তখন আমাদের কাছে একটি নির্দেশনা এসেছিল, আমরা যেন বছরে অন্তত দুটি সচিব সভা করি। আমরা হিসাব করেছিলাম যে, জুলাই মাসে আমরা একটা সচিব সভা করব। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, প্রথম সভার যে বাস্তবায়ন অগ্রগতি সেটা জানার জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে আমরা চিঠি দিয়েছিলাম। সেটার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মিটিংটা করেছি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, শুদ্ধাচার নীতিমালা আছে, সেটি আপডেট করার চিন্তা আছে। পাশাপাশি আচরণবিধি, ১৯৮৯ আপডেট করতে অগ্রগতির বিষয়ে সচিবদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, শিগগিরই এটি চূড়ান্ত হবে। এ ছাড়া শুদ্ধাচার, সুশাসন, নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়ন ও বাজেট বাস্তবায়ন নিয়েও সচিব সভায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট যাতে সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা হয় এবং বছরের শুরু থেকেই যাতে সচিবগণ কর্মপরিকল্পনা নেন, সভায় সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে নির্বাচনি ইশতেহার ও বাজেট বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে এমন কোনো বিষয় নিয়ে সচিব সভায় আলোচনা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নির্দিষ্ট কোনো এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়নি। দুই-একজনের অপকর্ম বা দুনীতি নিয়ে আলোচনা করার জন্য সচিব সভা ডাকা হয়নি। তবে সরকারি কর্মচারী আচরণবিধি পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সম্প্রতি সাবেক পুলিশপ্রধান, সাবেক সেনাপ্রধান, সাবেক ডিএমপি কমিশনার, এনবিআর কর্মকর্তাদের নিয়ে দুর্নীতির নানামুখী আলোচনার মধ্যে এ বৈঠকটি অত্যন্ত গুরুতপূর্ণ হিসেবে মনে করছেন সবাই।

সচিব সভায় অংশ নেওয়া একাধিক সিনিয়র সচিব ও সচিবদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো আলোচনা হয়েছে দুর্নীতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। সবাই যেন এ বিষয়ে তৎপর থাকে। কেউ যেন দুর্নীতিতে না জড়ায় সে বিষয়ে সতর্ক থেকে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ সময় মন্ত্রণালয়ে নামে-বেনামে আসা সব অভিযোগ সঠিক তদন্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। একজন সচিব পরামর্শ দিয়ে বলেন, সম্পদ বিবরণী দাখিল করলেই হবে না, এটি যাচাইবাছাই হচ্ছে কি না সেটিও দেখতে হবে। জনপ্রশাসনের জনবল না থাকায় যাচাইবাছাই হচ্ছে না। যদি যাচাইবাছাই হতো তাহলে বোঝা যেত নির্দিষ্ট সময় পর কত সম্পদ বাড়ল।

এ ছাড়াও সভায় বলা হয়েছে, নিজ নিজ মন্ত্রণালয় ও দফতর প্রধানকে লিডারশিপ হতে হবে, দুর্নীতিবিরোধী মোটিভেট করতে হবে। এক সচিব বলেছেন, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের পদোন্নতি হয়, ভালো জায়গায় পোস্টিং হচ্ছে, কঠোরভাবে এটি দেখভাল করতে হবে যাতে এসব না হয়। অনেকের রিপোর্ট খারাপ আসার পরেও তাদের পদায়ন দিচ্ছে এসব যেন না হয়। সভায় এনবিআর প্রথম সচিবের বিষয়টি উঠে আসে। এক সচিব বলেন, এনবিআর গোয়েন্দা সেল আছে। তাদের প্রথম সচিব এত সম্পদ কীভাবে করল? তাহলে এনবিআর গোয়েন্দা সেল কী করছে? তাহলে গোয়েন্দা নজরদারির ব্যর্থতা আছে। এসব ব্যর্থতা খুঁজে বের করতে হবে।

এক সিনিয়র সচিব বলেন, একজন সহকারী সচিব নিজ খরচে পরিবারসহ ইংল্যান্ড যেতে অনুমতি চাইলেন। খরচ ১২ লাখ টাকা হবে। আরেকজন মধ্যম মানের কর্মকর্তা চিকিৎসার জন্য কানাডা যেতে আবেদন করলেন।  একজন তীর্থস্থান ভ্রমণের জন্য সাইপ্রাস যেতে চান। এসব আবেদন আমি মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে আটকে দিয়েছি। ব্যাংক হিসেবে খোঁজ নিচ্ছি কীভাবে এত টাকা এলো। ১২ লাখ টাকায় সহকারী সচিব বিদেশ ভ্রমণ করবে, তীর্থস্থান ভ্রমণে সাইপ্রাস যাবে। এসব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়। তবে অনেকেই জানতে চায় সেটি কোন ফরমেটে হবে। তবে বেশির ভাগ কর্মকর্তা সম্পদের হিসাব দিতে একমত পোষণ করেছেন বলে জানা যায়।

সর্বশেষ খবর