শিরোনাম
শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসার কিছু নেই : ইউনূস

জামিন ১৪ আগস্ট পর্যন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসার কিছু নেই : ইউনূস

শ্রম আইনের মামলায় দন্ডিত নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী যেসব অভিযোগ উত্থাপন করেছেন, তার জবাব আমরা বহুবার দিয়েছি। তাই নতুন করে আলোচনার কিছু নেই। গতকাল ঢাকার শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ছয় মাসের দন্ডপ্রাপ্ত ড. ইউনূসসহ চারজনের জামিনের মেয়াদ ১৪ আগস্ট পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছেন শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল। শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ এম এ আউয়াল এ আদেশ দেন। এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো তাদের জামিনের মেয়াদ বাড়ল। আদালতে ড. ইউনূসসহ চারজনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার মো. আবদুল্লাহ আল মামুন। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার খাজা তানভীর আহমেদ ও এস এম মিজানুর রহমান। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান ও সৈয়দ হায়দার আলী। শুনানিতে ড. ইউনূস ও মামলার অন্য তিন আসামিও উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া আদালতের কার্যক্রম চলাকালীন পুরো সময়জুড়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ হাইকমিশন এর দ্বিতীয় সচিব (রাজনৈতিক) ভেনেসা বিউমন্ট, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ডেলিগেশন এর অ্যাটাশে পাবলো পাদিন পেরেজ, নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা কর স্টৌলেনসহ কয়েকজন বিদেশি পর্যবেক্ষক। আদেশের পর প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে তার সঙ্গে বসার কথা বলেছিলেন, এ ব্যাপারে আগ্রহ আছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ড. ইউনূস বলেন, আমি এটা শুনলাম এবং তালিকা করলাম যে কী কী বলেছেন তিনি (প্রধানমন্ত্রী)। তালিকাতে সবকটাই হলো আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ। আমি টাকা পাচার করেছি, বিদেশে বহু প্রতিষ্ঠান করেছি, ট্যাক্স ফাঁকি দেই ইত্যাদি। এগুলো হলো তদন্তের বিষয়, বিতর্কে বিষয় নয়। এটা আইন-আদালতের বিষয়, বিচার বিভাগের বিষয়। এখানে বিতর্কের কী আছে বা ডায়ালগের কী আছে? আমি তো কিছু পেলাম না। কাজেই আমার মনে হয়, এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। তিনি বলেন, আর যেসব বিষয় তিনি উত্থাপন করেছেন অভিযোগ হিসেবে, সেগুলোর জবাব আমরা বহুবার দিয়েছি-একবার না।

 ২০১২ সালে আমরা এগুলো বলতে বলতে এত বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিলাম। শেষে গ্রামীণ ব্যাংকের ২৯টি প্রশ্ন ও তার জবাব বলে একটা তালিকা করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন আকারে ছাপিয়ে দিয়েছিলাম। ওটা পড়লে ওগুলোর জবাব ওখানেই পেয়ে যাবেন। এটা নতুন করে আর জবাব খুঁজতে হবে না। তিনি বলেন, আমার একটা জিনিস ভালো লেগেছে তার কথায়, তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ এনেছেন। যেসব অভিযোগ এনেছেন, এগুলো গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে আইন-আদালতে ঘোরাঘুরি করে একটা জিনিস শিখেছি যে, প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যখন অভিযোগ করা হয়, তখন চেয়ারম্যান এবং বোর্ড সদস্য সবাইকে অভিযোগ করা হয়। গ্রামীণ ব্যাংকের যারা চেয়ারম্যান ছিলেন, যারা বোর্ড সদস্য ছিলেন, তারাও অভিযুক্ত হবেন। কাজেই তাদেরকে নিয়ে আসতে হবে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ড. ইউনূসসহ চারজনকে ছয় মাস করে কারাদন্ড দেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। রায় ঘোষণার পর উচ্চ আদালতে আপিলের শর্তে ড. ইউনূসসহ চারজনকে এক মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছিলেন আদালত। ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে শ্রম ট্রাইব্যুনালে মামলাটি করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর। গত বছরের ৬ জুন মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। একই বছরের ২২ আগস্ট সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়, যা শেষ হয় ৯ নভেম্বর। গত ২৪ ডিসেম্বর যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হয়। মামলায় অভিযোগ আনা হয়, শ্রম আইন ২০০৬ ও শ্রম বিধিমালা ২০১৫ অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক বা কর্মচারীদের শিক্ষানবিশকাল পার হলেও তাদের নিয়োগ স্থায়ী করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক বা কর্মচারীদের মজুরিসহ বার্ষিক ছুটি, ছুটি নগদায়ন ও ছুটির বিপরীতে নগদ অর্থ দেওয়া হয়নি। গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি। লভ্যাংশের ৫ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন অনুযায়ী গঠিত তহবিলে জমা দেওয়া হয়নি।

সর্বশেষ খবর