শনিবার, ৬ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানি ঢাকার কাছে দিল্লির প্রস্তাব

♦ বন্দর পরিদর্শনে ভারত যাচ্ছে প্রতিনিধি দল ♦ সরকারের কাছে প্রতিবেদন দেবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়

শাহেদ আলী ইরশাদ

তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির জন্য ভারতের বন্দর ব্যবহারে দিল্লির প্রস্তাব আমলে নিয়েছে ঢাকা। এর অংশ হিসেবে ভারতীয় নৌবন্দরগুলো ব্যবহারের সম্ভাব্যতা যাচাই করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পণ্য পরিবহনের প্রযুক্তিগত এবং বাণিজ্যিক কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিনিধি দল ৬ থেকে ১২ জুলাই ভারত সফর করবে। এর আগে ২০২৩ সালের ২০ ডিসেম্বর ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে নৌপরিবহন সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ এ বিষয়ে একটি দল গঠনে সম্মত হয়।

জানা গেছে, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব এস. এম. মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের চেন্নাই নৌবন্দর, অন্ধ্র প্রদেশের বিশাখাপত্তনম নৌবন্দর ও কৃষ্ণাপত্তনম নৌবন্দর এবং পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা ও হলদিয়া নৌবন্দর পরিদর্শন করবে। এ সময় প্রতিনিধি দল দেশটির অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক ও তথ্য আদানপ্রদান করবে। বর্তমানে তৃতীয়

দেশে পণ্য রপ্তানিতে সিঙ্গাপুর, কলম্বো ও মালয়েশিয়ার ক্লাং বন্দর ব্যবহার করছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব এস. এম. মোস্তফা কামাল গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা বন্দরসংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করব। তারা আমাদের সঙ্গে তথ্য-উপাত্ত শেয়ার করবেন। সেসব তথ্য আমাদের তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। এরপর একটি প্রতিবেদন তৈরি করে সরকারের কাছে জমা দেওয়া হবে। সেই প্রতিবেদনেই সবকিছু প্রকাশ পাবে।’ এর আগে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় একটি যৌথ বিবৃতি প্রদান করা হয়। বিবৃতিতে ভারত তার ভূখন্ডের মাধ্যমে বিশেষ স্থল শুল্ক স্টেশন/বিমানবন্দর/সমুদ্রবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির জন্য বিনামূল্যে ট্রানজিট সুবিধার প্রস্তাব দেয়। ভারতীয় পক্ষ তৃতীয় দেশে ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য বন্দর অবকাঠামো ব্যবহার করার জন্য বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে আমন্ত্রণ জানায়। ভারত নেপাল ও ভুটানে পণ্য রপ্তানির জন্য বাংলাদেশকে বিনামূল্যে ট্রানজিট প্রদান করছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সদ্য উদ্বোধন হওয়া চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রুটের মাধ্যমে ভুটানের সঙ্গে রেল যোগাযোগের অনুরোধ করেছে এবং ভারত তার অনুরোধের বিষয়টি কার্যকারিতা ও সম্ভাব্যতার ভিত্তিতে বিবেচনা করতে সম্মত হয়েছে। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, এটি ও অন্যান্য আন্তসীমান্ত রেলসংযোগগুলো কার্যকরের জন্য ভারত বাংলাদেশকে চিলাহাটি-হলদিবাড়ী ক্রসিংয়ে বন্দর বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছে। দুই প্রধানমন্ত্রী বিবিআইএন মোটর ভেহিকেল চুক্তি দ্রুত কার্যকরের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় ও উপ-আঞ্চলিক সংযোগ উন্নত করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করতে সম্মত হন। ভারত পশ্চিমবঙ্গের হিলি থেকে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে মেঘালয়ের মহেন্দ্রগঞ্জ পর্যন্ত একটি মহাসড়কসহ নতুন উপ-আঞ্চলিক সংযোগ প্রকল্প শুরু করায় সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ করে এবং এ বিষয়ে একটি বিশদ প্রকল্প প্রতিবেদন তৈরির প্রস্তাব দেয়। ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিপক্ষীয় হাইওয়ে প্রকল্পের চলমান উদ্যোগে অংশীদার হওয়ার জন্য বাংলাদেশ তার আগ্রহের কথা পুনর্ব্যক্ত করে। এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানি করতে ভারতের মাধ্যমে ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা-অসুবিধা যাচাই করে একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ভারতের মাধ্যমে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানি নিয়ে বাংলাদেশ কী সুবিধা পাবে সে বিষয়ে ইতিবাচক কিছু উল্লেখ করা হয়নি। তবে বাংলাবান্ধা, চিলাহাটি, বুড়িমারী ও সোনাহাটের ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশনের (এলসিএস) মাধ্যমে ট্রাক, রেল ও কাভার্ড ভ্যান এবং চিলমারী নদীবন্দরের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার পক্ষে বলেছে এনবিআর।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর