শনিবার, ৬ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

ভারতের আদালতে ভিডিও কনফারেন্সে কসাই জিহাদ ও সিয়াম

ভারতে এমপি আনার খুন রহস্য

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

ভারতের আদালতে ভিডিও কনফারেন্সে কসাই জিহাদ ও সিয়াম

ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যা মামলায় গ্রেফতার দুই অভিযুক্ত কসাই জিহাদ হাওলাদার ও সিয়াম হোসেন উভয়কেই ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতের (জেল হেফাজত) নির্দেশ দিলেন ভারতের আদালত। গতকাল দুপুরে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত জেলা ও দায়রা আদালত এ নির্দেশ দেন। যদিও এদিন অভিযুক্তদের কাউকেই আদালতে প্রেরণ করা হয়নি। বর্তমানে তারা উভয়েই দমদমের কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। সেখান থেকে ভিডিও কনফারেন্সে আসামিদের বক্তব্য শোনেন এবং পরবর্তী হাজিরার দিন ধার্য করেন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শুভঙ্কর বিশ্বাস। সে ক্ষেত্রে ১৯ জুলাই ফের তাদের আদালতে তোলা হবে।

উল্লেখ্য, ২৩ মে জিহাদকে আর ৭ জুন সিয়ামকে পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ থেকে গ্রেফতার করে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডি। দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধেই ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ), ৩০২ (অপরাধমূলক নরহত্যা), ২০১ (তথ্যপ্রমাণ লোপাট) এবং ১২০বি (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র)-এ চার জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে বারাসত আদালতের আইনজীবী আসলামুজ্জামান সাহেব জানান, আজ সিজেএম আদালত অভিযুক্তদের বক্তব্য শোনেন এবং তাদের জামিনের আবেদন খারিজ করে দেন। আদালত ১৯ জুলাই পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন। এদিকে জিহাদ ও সিয়ামের গোপন জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে আদালতে। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতেই এ গোপন জবানবন্দি দেন দুই অভিযুক্ত। আপাতত সেই জবানবন্দি সিল বন্ধ খামেই রয়েছে বলে জানান আইনজীবী। আইনজীবী আরও জানান, ভারতীয় দন্ডবিধির ১৬১ ধারায় এ খুনের মামলায় সাক্ষী হিসেবে পিন্টু দাস ও সঞ্জয় লোহিয়া নামে দুই ব্যক্তির বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। বক্তব্যে তারা দুজনই জানিয়েছেন, জিহাদকে যে ব্যক্তি ভারতের মুম্বাই থেকে নিয়ে এসেছিল তাকে তারা শনাক্ত করতে পেরেছেন। শুধু তাই নয়, এ দুই সাক্ষী কারাগারে গিয়ে অভিযুক্ত জিহাদকেও শনাক্ত করেছেন। উল্লেখ্য, ১৩ মে নিউটাউনের সঞ্জীভা গার্ডেন্সে এমপি আনারকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। মূল পরিকল্পনাকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আক্তারুজ্জামান শাহিনের নির্দেশেই জঘন্য এ হত্যাকান্ড সংঘটিত হয় বলে জানা যায়। মূলত শাহিনের নির্দেশেই কসাই জিহাদসহ চারজন এমপি আনারকে ওই আবাসনে শ্বাসরোধে হত্যা করেন বলে অভিযোগ। অন্যদিকে এ ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশের হাতে গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদেই সিয়ামের বিষয়টি সামনে আসে। মনে করা হচ্ছে, সংসদ সদস্য খুন ও খন্ডবিখন্ড লাশ লোপাটের কাজে যুক্ত ছিলেন এই সিয়াম। নিউটাউনের অভিজাত সঞ্জীভা গার্ডেন্সের যে সিসিটিভি ফুটেজ সামনে আসে তাতেও সিয়ামকে দেখা যায়।

খুনের পর কসাই জিহাদই ধারালো অস্ত্র দিয়ে এমপি আনারের শরীর থেকে মাংস আলাদা করে সেগুলো ক্যারিব্যাগে ভরে রাখা হয়। পরে সেই লাশের টুকরোগুলো দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভাঙ্গড় ব্লকের কৃষ্ণমাটি খাল এলাকায় ফেলা হয়। জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমনটাই জানতে পারেন তদন্ত কর্মকর্তারা। পরে ওই খালসংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু হাড় উদ্ধার করেন সিআইডির কর্মকর্তারা; যা দেখে সিআইডি কর্মকর্তা ও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের অনুমান, সেগুলো মানুষের হাড়। পাশাপাশি সঞ্জীভা গার্ডেন্সের ওই আবাসনের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা হয় প্রায় ৪ কেজি মাংস। উদ্ধারকৃত ওই মাংস পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি (সিএফএসএল)-এ। সিএফএসএলের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী মাংসগুলো পুরুষ মানুষের। তবে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত রিপোর্ট আসেনি বলেই সিআইডিসূত্রে খবর।

যদিও সেই খন্ডবিখন্ড লাশ এমপি আনারের কি না, তা জানতে এবার ডিএনএ পরীক্ষা করবেন তদন্ত কর্মকর্তারা এবং সে লক্ষ্যে এমপি আনারের কন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন কলকাতায় আসতে পারেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর