সোমবার, ৮ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

যৌক্তিকতা নেই কোটাবিরোধী আন্দোলনের : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

যৌক্তিকতা নেই কোটাবিরোধী আন্দোলনের : প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই। হাই কোর্ট রায় দিয়েছেন, সমাধান হাই কোর্ট থেকেই আসতে হবে।

যুব মহিলা লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল সকালে গণভবনে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, হাই কোর্টের রায়, এর বিরুদ্ধে এভাবে আন্দোলন করা, এটা তো সাবজুডিস (বিচারাধীন বিষয়), আমরা সরকারে থেকে কিন্তু এভাবে কথা বলতে পারি না। তিনি বলেন, হাই কোর্ট রায় দিলে সেখানে (সমাধানও) হাই কোর্ট থেকে আবার আসতে হবে। কিন্তু আজ আন্দোলনের নামে যা করা হচ্ছে, তা পড়াশোনার সময় নষ্ট করা। এর কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাই কোর্টের রায় আমরা সব সময় মেনে নিই। কিন্তু আমরা দেখলাম এখন কোটাবিরোধী আন্দোলন আবার গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা বাদ দিয়ে এখন কোটাবিরোধী আন্দোলন করছে। সেখানে মেয়েরাও আন্দোলন করছে। তিনি বলেন, এখানে আমার একটা প্রশ্ন, যারা এর আগে কোটাবিরোধী আন্দোলন করেছিল, তারা কতজন পাবলিক সার্ভিস কমিশনে পরীক্ষা দিয়েছিল, আর কতজন পাস করেছিল সেটা বের করা দরকার। কোটাবিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি দেখেছি কোটা আন্দোলন! আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যে কোটা, সেটা বাতিল করতে হবে, নারীদের কোটা বাতিল করতে হবে, অমুক-তমুক। কোটা কিন্তু একবার বাতিল করা হয়েছিল। কিন্তু ফলাফলটা কী? পাবলিক সার্ভিস কমিশনের হিসাব দেখলে দেখা যাবে যে, আগে কোটা থাকতে মেয়েরা যে পরিমাণ সুযোগ পেত, সে পরিমাণ সুযোগ কিন্তু এ কয় বছরে আর পায়নি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক জেলা, প্রত্যন্ত অঞ্চল, সেসব অঞ্চলের মানুষ কিন্তু বঞ্চিত থেকে গেছে। তারাও চাকরি পাচ্ছে না। এরকম বঞ্চিত হওয়ার কারণেই কেউ মামলা করেন, হাই কোর্ট একটা রায় দেন। বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মেয়েদের শিক্ষা তিনি অবৈতনিক করে দিয়েছিলেন, সংসদে মেয়েদের জন্য আলাদা সিটের কোটা করে দিয়েছেন। চাকরি ক্ষেত্রে নির্যাতিত (মুক্তিযুদ্ধে) মেয়েদের ও নারীদের জন্য আলাদা ১০ শতাংশ কোটার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন, এজন্য নারীরা যাতে যথাযথভাবে নিজেদের স্থানটা করে নিতে পারে। নারীরা যদি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে এবং চাকরি ক্ষেত্রে তাদের মেধা বিকশিত হওয়ার সুযোগ পেলে দেশ গড়ে উঠবে। আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আমাদের রাজনীতির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ঢোকা দরকার। তাহলে অন্তত জীবনের একটা নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে। বৃদ্ধ বয়সে কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। ছেলের ঘাড়ে বোঝা হতে হবে না, মেয়ের ঘাড়েও বোঝা হতে হবে না, নিজেরটা নিজে করে খেতে পারবে, সেই ব্যবস্থাটা করা। তিনি বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিম, এটা আমরা সবার জন্য দিয়েছি। এটি আমাদের নির্বাচনি ইশতেহারে ছিল, ২০০৮ সালের নির্বাচনের ইশতেহারে এটি ছিল। শুধু সরকারি চাকরিজীবীরা পেনশন পান, বাকিরা বঞ্চিত থাকেন। কেউ যাতে বঞ্চিত না থাকেন, সেজন্য স্তরভেদে সর্বজনীন পেনশনের ব্যবস্থা করা আছে। উপস্থিত যুব মহিলা লীগ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুব মহিলা লীগের মেয়েরা প্রত্যেকে কিন্তু এ সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যুক্ত হতে পারে নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য। যখন বয়স হয়ে যাবে, কর্মক্ষম থাকবে না, তখন একটা নিশ্চিত অর্থপ্রাপ্তির সুযোগ আছে। শেখ হাসিনা বলেন, যারা নিম্ন স্তরের, তাদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছি। যারা কিছুই করতে পারে না, খুব অল্প টাকা কামাই করে, তারা যদি ৫০০ টাকা রাখে, তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে আরও ৫০০ টাকা দেওয়া হবে, তারাও যেন ভালোভাবে পেনশন পায়, আজীবন পাবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন যুব মহিলা লীগের সভাপতি আলেয়া সরোয়ার ডেইজি, সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলিসহ সংগঠনের কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতা-কর্মীরা।

সশস্ত্র বাহিনীকে বিশ্বমানের করে গড়া হচ্ছে : প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের (পিজিআর) অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক সশস্ত্র বাহিনীকে আরও উন্নত ও বৈশ্বিক মানদন্ডে গড়ে তোলার জন্য সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। আমার বাবার হাতে গড়া সশস্ত্র বাহিনীকে আরও উন্নত ও আন্তর্জাতিক মানের করার জন্য আমরা এরই মধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছি। সূত্র : বাসস। প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে ঢাকা সেনানিবাসে পিজিআর সদর দফতরের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। তিনি দীর্ঘ ২১ বছর পর ’৯৬ সালে তাঁর সরকার গঠনের কথা উল্লেখ করে বলেন, যে সশস্ত্র বাহিনী আমার বাবার হাতে গড়া তাকে আরও উন্নত করা, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করার সেই পদক্ষেপ আমি নিয়েছিলাম, পাশাপাশি বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নতি যাতে হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়ে পরিকল্পিতভাবে কাজ শুরু করি। একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে তাঁর সরকারের নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর আরও উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য ’৯৮ সালে ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ এবং ওয়ার কলেজ’ আমি গড়ে তুলি। মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ’৯৯ সালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং (বিপসট), আমর্ড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ তখন থেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি ২০০০ সালে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীতে নারী অফিসার অন্তর্ভুক্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তিনি বলেন, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে সুনাম অর্জন করেছে। কালের পরিক্রমায় প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিন্টে একটি অত্যন্ত সুসংহত বাহিনী হিসেবে আত্ম প্রকাশ করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পিজিআরের সদস্যরা দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান, জাতির পিতার পরিবার- সবার নিরাপত্তায় বিরাট অবদান রেখে যাচ্ছেন। তাছাড়া, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে তাদের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। পিজিআরের সব সদস্যের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী।

পিজিআর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খালেদ কামাল অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনকালে আত্মাহুতি দানকারী পিজিআর সদস্যদের পরিবারের কাছে অনুষ্ঠানে অনুদান ও উপহার হস্তান্তর করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী পিজিআর সদর দফতরে পৌঁছালে তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী সেখানে একটি গাছের চারাও রোপণ করেন।

সর্বশেষ খবর