সোমবার, ৮ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ, ছাড় না দেওয়ার ঘোষণা শিক্ষকদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাতিলসহ তিন দফা দাবিতে শিক্ষক আন্দোলন চলছেই। ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখে আজ ষষ্ঠ দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করবেন সারা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। আন্দোলন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতারা বলেছেন, তাদের আন্দোলন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হলেও দাবি আদায়ে ন্যূনতম ছাড় দেওয়া হবে না। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কলা ভবনের সামনে পঞ্চম দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে শিক্ষক নেতারা এসব কথা বলেন।

এদিকে শিক্ষকদের আন্দোলনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, শিক্ষকদের আন্দোলন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

শিক্ষকদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। সময়মতো এ সমস্যার সমাধান হবে। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। ঢাবির কলা ভবনের সামনে সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. আখতারুল ইসলাম বলেন, সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহারসহ তিন দফা দাবি আদায়ে আমরা ন্যূনতম ছাড় দেব না। দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবেই। সব দাবি মানা হলে আমরা ক্লাসে ফেরত যাব।

তিনি আরও বলেন, আমরা কোনো করুণা চাইছি না, আমরাই জাতি গঠন করি। আমরা আমাদের অধিকার চাইছি। যে সময়ে এসে আমাদের নতুন পে-স্কেল ও সুপার গ্রেড নিয়ে আন্দোলন করার কথা, সেই সময়ে আগের পে-স্কেল নিয়েই পড়ে থাকতে হচ্ছে। ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভূইয়া বলেন, আমাদের দাবি মেনে না নিয়ে শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ২০১৫ সালে আমাদের সুপার গ্রেড দেওয়ার কথা থাকলেও কোনো এক অদৃশ্য শক্তিবলে আমরা তা পাইনি। আওয়ামী লীগের ২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে আমাদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর কথা থাকলেও আমরা তা পাইনি। এরপর আবার আমাদের ওপর প্রত্যয় স্কিম চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, আমাদের আন্দোলন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। আমাদের আন্দোলন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নয়। এটা শুধু প্রত্যয় স্কিমের বিরুদ্ধে। যারা এ স্কিম চালু করে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় অচল করতে চাচ্ছে, এ আন্দোলন তাদের বিরুদ্ধে। এ আন্দোলন থেকে শিক্ষক সমাজ পিছু হটবে না। এ আন্দোলন চলমান থাকবে।

সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন’ প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে অন্তর্ভুক্তিকরণ ও স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের দাবিতে চলছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি। ১ জুলাই থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্লাস-পরীক্ষা। শিক্ষকদের এ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। ঈদুল আজহার ছুটি শেষে ক্যাম্পাস খোলার পরই এমন অচলাবস্থা তৈরি হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আশঙ্কা করছেন সেশনজটের।

খুলনায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কর্মবিরতি অব্যাহত : খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ও খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুকৃবি) গতকাল পঞ্চম দিনের মতো শিক্ষকদের কর্মবিরতি পালিত হয়। কর্মবিরতির কারণে সব ডিসিপ্লিনের ক্লাস, অনলাইন, সান্ধ্যকালীন ক্লাস, প্রফেশনাল কোর্সের ক্লাস, মিডটার্ম, ফাইনাল, ভর্তি পরীক্ষাসহ দাফতরিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। গতকাল বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত খুবি শিক্ষকরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

বাউবিতে শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি : গতকাল দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) শিক্ষক সমিতির আয়োজনে এক ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। বাউবির সর্বস্তরের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা স্বতস্ফূর্তভাবে সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও এক ঘণ্টার এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

রাবিতে বিক্ষোভ : সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ প্রত্যাহারের দাবিতে একযোগে আন্দোলনে নেমেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষক-কর্মকর্তারা। বর্জন কর্মসূচিতে ক্যাম্পাস অচল হয়ে পড়েছে। সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রত্যাহারের দাবিতে গতকাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কয়েক শ কর্মকর্তা-কর্মচারী বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। প্রতিদিনের মতো এদিনও দাফতরিক কার্যক্রম বর্জন করে এ কর্মসূচিতে অংশ নেন তারা।

স্থবির হয়ে পড়েছে জাবি : গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সারা দিনেও খোলেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিভাগ ও প্রশাসনিক কার্যালয়। শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের টানা কর্মবিরতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থবির পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

হাবিপ্রবিতে অচলাবস্থা : সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গতকাল দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহাম্মদ কুদরাত-এ-খুদা একাডেমিক ভবনের নিচে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে হাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি।

সর্বশেষ খবর