সোমবার, ৮ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা
যৌথভাবে উদ্বোধন বেশ কিছু প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রী যাচ্ছেন আজ

চীনের সঙ্গে হবে ২০ সমঝোতা

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

চীনের সঙ্গে হবে ২০ সমঝোতা

গুরুত্বপূর্ণ এক দ্বিপক্ষীয় সফরে আজ সোমবার চীনের রাজধানী বেইজিং যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী চীনে প্রধানমন্ত্রীর এ সফর বিভিন্ন কারণে পেয়েছে বিশেষ মাত্রা। চার দিনের সফরে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ২০টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে। পাশাপাশি উদ্বোধন হতে পারে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সফরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য, আর্থিক সহায়তা এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে চীনের সহায়তা প্রত্যাশা করা হবে। পাশাপাশি বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন প্ল্যাটফরমে চীনের বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ চীনের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাবে।  প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানান, চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের আমন্ত্রণে আজ  বেলা ১১টায় বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে চীনের উদ্দেশে রওনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চীনের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় বেইজিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন তিনি। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে এবং অভ্যর্থনা জানানো হবে। আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিন লিকুনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। পরে তিনি সাং-গ্রি-লা সার্কেলে বাণিজ্য বিনিয়োগ বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন। এদিন দুপুরে প্রধানমন্ত্রী সিপিপিসিসির ১৪তম জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াং হানিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। বিকালে প্রধানমন্ত্রী ঐতিহ্যবাহী তিয়েনআনমেন স্কয়ারে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবেন। রাতে তিনি বেইজিংয়ের বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত নৈশভোজে অংশগ্রহণ করবেন। সফরের তৃতীয় দিন বুধবার প্রধানমন্ত্রী গ্রেট হল অব দ্য পিপল -এ চীনের প্রিমিয়ার অব দ্য স্টেট কাউন্সিল লি কিয়াংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। পরে প্রধানমন্ত্রী এবং চীনের প্রিমিয়ার অব দ্য স্টেট কাউন্সিল দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলসহ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। এর পর দুই দেশের সরকার প্রধানের উপস্থিতিতে প্রায় ২০টির মতো সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে এবং কিছু প্রকল্প উদ্বোধনের ঘোষণা দেওয়া হবে। অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং খাত, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, ডিজিটাল ইকোনমি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি খাতে সহায়তা, ষষ্ঠ ও নবম বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজ নির্মাণ, বাংলাদেশ হতে কৃষিপণ্য রপ্তানি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পিপল টু পিপল কানেকটিভিটি প্রভৃতি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। বৈঠক ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে গ্রেট হলে ভোজের আয়োজন করা হবে। এদিন বিকালে প্রধানমন্ত্রী গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চীনের  প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। এরপর ঘোষণা হবে বাংলাদেশ ও চীন যৌথ বিবৃতি। পরদিন ১১ জুলাই বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে প্রধানমন্ত্রী চীন ত্যাগ করে দুপুরে ঢাকায় পৌঁছবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ-চীন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল স্বাধীনতারও পূর্বে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৫২ সালে ঐতিহাসিক চীন সফরের মাধ্যমে, যে সময় চীনের তৎকালীন নেতা মাও সে তুংয়ের সঙ্গে জাতির জনকের সাক্ষাৎ হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে বঙ্গবন্ধু রচনা করেন, ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বইটি। ২০১৬ সালে শি জিন পিংয়ের ঢাকা সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ‘কৌশলগত সহযোগিতার অংশীদারিত্ব’-এ উন্নীত হয়। চীন বাংলাদেশের অবকাঠামোগত এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হিসেবে কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য, আর্থিক সহায়তা এবং বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশ চীনের সহায়তা কামনা করবে। একই সঙ্গে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে চীনের বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ চীনের প্রতি সমর্থন প্রদান করে যাবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। চীনের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক আছে। চায়না আমাদের বড় উন্নয়ন সহযোগী। অবশ্যই এ সফর আমাদের সেই সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী ও বিস্তৃত করবে। প্রধানমন্ত্রীর সফরে উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা গুরুত্ব পাবে। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, চায়নার সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি অনেক। এ ঘাটতি মেটাতে আরও বেশি করে বাংলাদেশের কৃষিপণ্যসহ অন্যান্য পণ্য চীনে রপ্তানি করার ক্ষেত্রে নন-ট্যারিফ যেসব বাধা আছে সেগুলো যাতে তুলে নেওয়া হয় এবং তাদের আমদানিকারকদের যাতে উৎসাহিত করা হয় সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। চীন যদি রিজার্ভে সহযোগিতা দিতে চায় তাহলে তা কেমন হতে পারে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রথমত সেই রকম ঋণ চুক্তি তো তালিকায় নেই। অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য আমাদের এমওইউ হবে। সেই এমওইউ-এর আলোকে আমাদের চাহিদার ভিত্তিতে প্রয়োজনের নিরিখে সব প্যারামিটার মিট হলে সেক্ষেত্রে ব্যাংকিং সেক্টরে কিংবা অর্থনৈতিক সেক্টরে সহযোগিতা হবে।

সর্বশেষ খবর