সোমবার, ৮ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

উদ্বেগের মধ্যেই বাইডেন থাকছেন নির্বাচনে

প্রতিদিন ডেস্ক

উদ্বেগের মধ্যেই বাইডেন থাকছেন নির্বাচনে

দলীয় নেতাসহ প্রভাবশালী মহলের চাপকে পাত্তা না দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থেকেই যাচ্ছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ‘ঈশ্বর ছাড়া কেউ তাকে নির্বাচন থেকে সরাতে পারবে না’ ঘোষণা দেওয়ার পর গতকাল হোয়াইট হাউসও তার পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে। এদিকে ক্রমে নিন্দিত হয়ে ওঠা বাইডেন নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শিবিরে স্বস্তি বিরাজ করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সূত্র : রয়টার্স, এপি, এএফপি, দ্য গার্ডিয়ান, ফক্স নিউজ। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে জো বাইডেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র গতকাল স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন যে, ‘বাইডেনই হবেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী। তার সরে দাঁড়ানোর কোনো সম্ভাবনা নেই।’ এই মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট (বাইডেন) ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। তিনি পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য তৈরি। তাকে নিয়ে যা যা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, তার পুরোটাই গুজব।’ খবরে বলা হয়, গত বুধবার সকালে তার প্রচার দলের দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের সঙ্গে কথা বলেন বাইডেন। বাইডেন সরে দাঁড়াচ্ছেন কি না, তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন ওই দুই ব্যক্তি। তখন তাদের আশ্বস্ত করে বাইডেন জানান, সরে দাঁড়ানোর প্রশ্নই ওঠে না। এরপরেই আনুষ্ঠানিকভাবে হোয়াইট হাউস বিবৃতি প্রকাশ করে। উল্লেখ্য, তিন ডেমোক্র্যাট গভর্নরকেও একই কথা জানিয়েছেন বাইডেন। তারাও সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, বাইডেনের সরে দাঁড়ানোর কোনো প্রশ্নই নেই। বস্তুত, মঙ্গলবার বাইডেন নিজেই বলেছিলেন, অতিরিক্ত সফরের কারণে ওই দিনের ডিবেটের সময় তিনি ক্লান্ত ছিলেন। এতটাই ক্লান্ত ছিলেন যে তার ঘুম পেয়ে যাচ্ছিল। বাইডেন বলেছেন, ‘অসংখ্য টাইম জোনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে আমাকে। তাই আমার ঘুম পাচ্ছিল।’ এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারের কাজে নিয়োজিত দলটি অবশ্য বাইডেনের বিরুদ্ধে বিপুলবিক্রমে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। ওই দিনের ডিবেটের উল্লেখ করে তারা বলছেন, ‘এখন ডেমোক্র্যাটরা বুঝতে পারছেন, বাইডেন অযোগ্য। এটা তাদের অনেক আগেই বোঝা উচিত ছিল।’ ট্রাম্পের বক্তব্য, ‘বাইডেন ভোটে লড়ার জন্য যথেষ্ট সুস্থ নন। প্রেসিডেন্টকে অসৎ ও অসুস্থ বলে অভিহিত করেছে ট্রাম্পের দল, এবং বাইডেনের আমলে দেশে কীভাবে অর্থনৈতিক মন্দা তৈরি হয়েছে, সীমান্তে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে- সেই হিসেবও তুলে ধরছেন তারা।

বাইডেনের শারীরিক অবস্থা নিয়ে আরও জল্পনা : গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৭ জানুয়ারি পার্কিনসন বিশেষজ্ঞ ড. কেভিন কানার্ড হোয়াইট হাউসে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বাইডেনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ড. কেভিন ও’ কনরের সঙ্গে দেখা করেন। দুই চিকিৎসকের মধ্যে কী কথা হয়েছিল, তা জানা যায়নি। তবে এই প্রতিবেদন সামনে আসতেই জল্পনা শুরু হয়েছে, বাইডেনের কি তাহলে পার্কিনসন হয়েছে? উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের নির্বাচনের প্রচারে দাঁড়িয়ে বাইডেন বলেন, ‘২০২০ সালে ট্রাম্পকে আবারও হারাব।’ আর তার সেই মুখ ফসকে বেরিয়ে যাওয়া কথা নিয়ে তোলপাড় হয় নেটপাড়া। এভাবে বাইডেনের পরপর ‘হোঁচট’ দেখে ডেমোক্র্যাটদের প্রার্থী বদলের গুঞ্জন শুরু হয়। তবে নিজের অবস্থানে অনড় রয়েছেন বাইডেন। তার দাবি, তিনি অনায়াসে ট্রাম্পকে হারিয়ে দেবেন। মিডিয়ার কাছে আবারও বাইডেন বলেন, ‘ট্রাম্পকে হারানোর জন্যে আমার থেকে যোগ্য কেউ আর আছে বলে মনে করি না। আমাকে যদি স্বয়ং ঈশ্বর এসে বলেন যে, আমি ডেমোক্র্যাটদের জয়ের পথে প্রতিবন্ধকতা, তাহলে আমি প্রার্থী পদ প্রত্যাহার করতে পারি। অন্যথায় নয়। যেসব সমীক্ষায় বলা হচ্ছে আমি পিছিয়ে, সেগুলো সঠিক নয়।’

ডেমোক্র্যাটদের উদ্বেগ : বয়স বেশি হয়ে যাওয়ায় দেশ পরিচালনায় নিজের সক্ষমতা নিয়ে দেখা দেওয়া উদ্বেগ, আলোচনা-সমালোচনা নানাভাবে চেষ্টা করেও থামাতে পারছেন না যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বিশেষ করে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিপক্ষে প্রথম বিতর্কে বাইডেন তাঁকে দুর্বলভাবে উপস্থাপন করার পর এ উদ্বেগ বেড়েছে। নিজ দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির একের পর এক নেতা প্রকাশ্যে তাঁর প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে সরে যেতে বলছেন তাঁকে। এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে প্রচার-প্রচারণা শুরু হওয়ার আগেই ৮১ বছর বয়সী বাইডেনের বয়স নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। দিন যত গড়াচ্ছে, প্রচার যত জোরালো হচ্ছে, তাঁর বয়স নিয়ে আলোচনা-উদ্বেগও তত বাড়ছে। বাইডেনকে এখন নিজ বয়স এবং দেশ পরিচালনার সক্ষমতা নিয়ে দলের নেতা, অর্থদাতা, সমর্থকদের আশ্বস্ত করতেই বেশি সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। দলের নেতা ও সমর্থকদের উদ্বেগ কমাতে গত শুক্রবার রাতে বাইডেন এবিসি নিউজকে একটি সাক্ষাৎকারও দেন; যদিও নির্বাচনের আগে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা সাধারণত এ ধরনের সাক্ষাৎকার দেন না। ২২ মিনিটের ওই সাক্ষাৎকারে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়েছে বাইডেনের বয়স নিয়ে। বয়স হলেও তা তাঁর দেশ পরিচালনার সক্ষমতায় কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না, নানাভাবে এমনটাই বোঝাতে চেয়েছেন তিনি।

জনমত জরিপে এগিয়ে ট্রাম্প : কয়েকটি জনমত জরিপে বাইডেনের চেয়ে ট্রাম্পকে এগিয়ে থাকতে দেখা গেছে। এমনকি কোথাও কোথাও এ উদ্বেগও প্রকাশ করা হয়েছে, যদি বাইডেনই প্রার্থী থাকেন, তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাঁর হেরে যাওয়া ছাড়াও প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাটদের আসন কমতে পারে। সিনেটেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে পারেন তাঁরা। অ্যাঞ্জি ক্রেগ বলেন, বাইডেন কার্যকরভাবে নির্বাচনি প্রচার চালিয়ে যেতে ও ট্রাম্পের বিপক্ষে জিততে পারবেন বলে তাঁর বিশ্বাস হয় না। প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে টেক্সাসের লয়েড ডগেট বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রার্থী হিসেবে সরে যাওয়া নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যত দেরি করবেন, নতুন প্রার্থীর জন্য সামনে এসে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারানো তত কঠিন হয়ে পড়বে’।

সর্বশেষ খবর