সোমবার, ৮ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

কোটা আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় শাস্তি দেওয়ার অভিযোগ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

কোটাবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে বিভাগের ডিবেটিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দীন তাকে এ শাস্তি দিয়ে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘পলিটিক্যাল সোশিওলজি’ নামের একটি মেসেঞ্জার গ্রুপের বার্তা প্রদানের স্ক্রিনশট ফাঁস হলে এই খবর ছড়িয়ে পড়ে। ডিবেটিং ক্লাব কমিটির অন্য সদস্যরা সাময়িক বরখাস্ত ও হুমকির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন সংগঠনটির অন্যান্য দায়িত্বশীল এবং বিতার্কিকরা। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মোশাররফ হোসাইন ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র এবং চলতি বছরের শুরুতে বিভাগের সহশিক্ষামূলক সংগঠন সোশিওলজিক্যাল ডিবেটিং সোসাইটি (এসডিএস) ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয়েছিলেন। ‘পলিটিক্যাল সোশিওলজি’ নামক মেসেঞ্জার গ্রুপে বার্তা প্রদানের এক স্ক্রিনশটে দেখা যায়- অধ্যাপক জামাল লিখেছেন, বিতর্কিত কর্মকান্ডে যুক্ত থাকার জন্য ডিবেটিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে মোশররফকে অব্যাহতি দেওয়া হলো। নতুন সাধারণ সম্পাদক সারাফ আফ্রা মৌ। তিনি লেখেন, ‘যারাই সমাজবিজ্ঞান বিভাগে বিতর্কিত-বিভাজিত কর্মকান্ডে যুক্ত হবেন, তারা কখনই ছাত্রছাত্রীদের সর্বজনীন কমিটির নেতৃত্বে আসতে পারবেন না। ক্লাস ক্যাপ্টেনসহ এ জাতীয় কোনো ধরনের নেতৃত্বে আসতে পারবেন না। যারা বাইরের ঘটনাকে নিয়ে বিভাগের সৌহার্র্দপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্টের কারণ হবে, তারা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অতীতেও এগুলো মোকাবিলা করা হয়েছে, এবারও সেটি করা হবে। আশা করি সংশ্লিষ্ট সবার শুভবুদ্ধির উদয় হবে।’ আরেক বার্তায় তিনি লেখেন, ‘আদালত অবমাননা কর্মকা  করতে গিয়ে কেউ যদি মামলা-হামলা-গ্রেফতার-জেল-শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীন হন, তখন কোনো শিক্ষক বা বিভাগের তরফ থেকে কোনো ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা আসবে না।’ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মোশাররফ হোসাইন বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা এবং আন্দোলন নিয়ে ফেসবুকে আমার পোস্টের কারণে সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সংগঠনের মডারেটর এ কে এম জামাল উদ্দিন স্যার কোনো নিয়ম না মেনে একতরফাভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি ডিপার্টমেন্টের মেসেঞ্জার গ্রুপে আদালত অবমাননার মামলা করার হুমকি দিয়েছেন। এ নিয়ে আমি ভীত বা চিন্তিত নই। আমি সাহসিকতার সঙ্গে কোটা আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছি। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমি আমার সহকর্মীদের পাশে থাকব।’ এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন সংগঠনটির অন্যান্য দায়িত্বশীল এবং বিতার্কিকরা। ফাঁস হওয়া আরেকটি স্ক্রিনশটে দেখা যায়, অধ্যাপক ছাত্রদের তাদের ফেসবুক টাইমলাইনে একটি পোস্টার পোস্ট করতে নির্দেশ দিয়ে হুমকি প্রদান করে বলেন, ‘যদি পোস্টটি কোনো শিক্ষার্থীর এফবি টাইমলাইনে না পাওয়া যায় তবে আমি এখনই কিছু বলব না। তবে এটি পরীক্ষার ফলাফলে প্রতিফলিত হবে।’

শিক্ষার্থীরা জানান, জামাল স্যারের কোর্স শেষ হওয়া সত্ত্বেও উনি উনার কোর্সের জন্য তৈরি মেসেঞ্জার গ্রুপে বিভিন্ন ধরনের বার্তা প্রদান করেন এবং শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ফেসবুক পোস্ট শেয়ার করতে বলেন। বর্তমান চলমান কোটা আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা যেন অংশ না নেয় সে জন্য তিনি বিভিন্ন ধরনের বার্তা দিচ্ছেন এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে ভীতি ছড়াচ্ছেন। একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ত্রাসের সংস্কৃতি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষেও আবাদ হয় তখন পুরো দেশের অবস্থা কল্পনা করতেও ভয় লাগে। শিক্ষকের কাজ শিক্ষার্থীদের মননশীল, চক্ষুসমান, সত্যকে সত্য এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে সাহসী করে গড়ে তোলা। অথচ, শিক্ষক যখন দুর্বৃত্তায়নের চর্চা করে, পাড়ার মাস্তানের মতো হুমকি দেয়, পোস্ট শেয়ার না করলে রেজাল্টে দেখে নেওয়া হবে, বিতর্কিত কার্যকলাপে (কোটা আন্দোলন) অংশ নেওয়ার জন্য বিভাগের বিতর্ক ক্লাবের সম্পাদককে বহিষ্কার এবং অন্যরা অংশ নিলে বিপদ হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয়, তখন শিক্ষককে শিক্ষক বলতে লজ্জা লাগে। শিক্ষককে মনে হয় রাজনৈতিক ক্যাডার।’ এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দীনকে মুঠোফোনে কল দিয়ে পাওয়া যায়নি। এর আগে, গত ২৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক সিনেট অধিবেশন চলাকালে আ ক ম জামাল উদ্দীন সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটার যৌক্তিকতা বোঝাতে পবিত্র কোরআনের সুরা আনফালের একটি আয়াতকে ‘প্রমাণ’ হিসেবে দেখিয়ে বক্তব্য দেন। এ ছাড়া অধিবেশনে তিনি ২০১৮ সালে সংগঠিত কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সমালোচনা করেন এবং কোটাবিরোধী আন্দোলনে অংশ গ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ‘স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরের কর্মী বলেও আখ্যা দেন।

 

সর্বশেষ খবর