শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৯ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

অচল পড়ে আছে দেড় হাজার কোটি টাকার হাসপাতাল

♦ নষ্ট হচ্ছে ২৮৩ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ♦ ২১ মাস পেরোলেও চালু হয়নি পূর্ণাঙ্গ সেবা

নিজস্ব প্রতিবেদক

অচল পড়ে আছে দেড় হাজার কোটি টাকার হাসপাতাল

রাজধানীর শাহবাগে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল

রাজধানীর শাহবাগে দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হয়েছে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে গড়ে তোলা এ হাসপাতালে শুধু যন্ত্রই কেনা হয়েছে ২৮৩ কোটি টাকার। কিন্তু উদ্বোধনের ১ বছর ৯ মাস পার হলেও হাসপাতালটিতে পূর্ণাঙ্গ সেবা চালু করা যায়নি। অচল পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রপাতি, সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগী।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিএসএমএমইউসহ সব পক্ষকে নিয়ে সভা করেছি। পরবর্তী বৈঠকে হয়তো নিয়োগের বিষয়গুলো চূড়ান্ত করা হবে। আশাকরছি সবার আন্তরিক চেষ্টায় হাসপাতালটি পুরোদমে চালু করে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যাবে।’ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিএসএমএমইউ সূত্র জানিয়েছে, ভুল ব্যবস্থাপনা, জনবল নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে চাহিদার ৮৬ শতাংশ কম জনবল দিয়ে ধুঁকে ধুঁকে চলছে দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থায়নে গড়ে ওঠা বিশেষায়িত এ হাসপাতাল। নিয়োগ জটিলতা না কাটলে পূর্ণাঙ্গ সেবা চালু সম্ভব নয়। অবকাঠামো নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি কেনা বাবদ খরচ হয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪০৩ রকমের ৬ হাজার ৬১২টি চিকিৎসাযন্ত্র কেনা হয়েছে ২৮৩ কোটি টাকায়। এসব যন্ত্রপাতি ২০২২ সালের আগস্ট ও ডিসেম্বরে দুই ধাপে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে সরবরাহ করে দক্ষিণ কোরিয়ান বেসরকারি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান স্যামসাং। যন্ত্রগুলো সেবার উপযোগী থাকলেও জনবল না থাকায় ৯০ শতাংশ যন্ত্রপাতি এক দিনও ব্যবহার হয়নি। এসব যন্ত্রের সর্বোচ্চ মেয়াদ রয়েছে তিন বছর। ফলে ব্যবহারের আগেই শেষ মেয়াদের প্রায় দুই বছর। আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জনবল সংকটের সমাধান না হলে যন্ত্র রক্ষণাবেক্ষণে নতুন করে টাকা খরচ করতে হবে সরকারকে।

বারবার ঘুরেও চিকিৎসক না থাকায় বিড়ম্বনার শিকার হয়েছি, গত মাসে ভারতে চিকিৎসা শুরু করেছি : রোগী
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৭৫০ শয্যার এ হাসপাতালে নিয়মিত প্রায় ৫০ জনের মতো রোগী ভর্তি থাকে। দৈনিক সর্বোচ্চ ১০০টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। বহির্বিভাগে দৈনিক গড়ে ৫০০ জনের সেবা দেওয়ার লক্ষ্য থাকলেও এখন সেবা পান মাত্র ১২৫ রোগী। হাসপাতালে পড়ে থাকা যন্ত্র সচল রাখতে এক্সক্লুসিভ হেলথ চেকআপ চালু হয় গত জানুয়ারিতে। তবে ছয় মাসে এ সেবা নিয়েছেন মাত্র ৫৮ রোগী। এ হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে রয়েছে ১৪টি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার, ১০০ শয্যার আইসিইউ, জরুরি বিভাগে আছে ১০০টি শয্যা, আছে ভিভিআইপি কেবিন ৬টি, ভিআইপি কেবিন ২২টি এবং ডিলাক্স শয্যা ২৫টি। সেন্টার ভিত্তিক প্রতিটি ওয়ার্ডে স্থাপন করা হয়েছে ৮টি করে শয্যা। হাসপাতালটিতে রয়েছে নিউম্যাটিক টিউব যার মাধ্যমে রক্ত সংগ্রহের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দেশিত বিভাগে চলে যায়। কিন্তু কোনো বিভাগেই নিজস্ব জনবল না থাকায় প্রায় সব সেবাই ব্যাহত হচ্ছে। তাই রোগী সেবার যে উদ্দেশ্য নিয়ে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছিল তা ব্যর্থ হতে চলেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি পরিচালনার জন্য চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রয়োজন অন্তত ২ হাজার ৭০০ জন। এখন জনবল আছে ৩৮৪। সব শেষ নিয়োগে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও বিতর্কের কারণে জটিলতা তৈরি হয়েছে। যে কারণে ৮৬ শতাংশ কম জনবল দিয়ে চলছে এ হাসপাতাল। এখন পর্যন্ত পাঁচ দফায় ১৬০ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এর মধ্যে হাসপাতালে যুক্ত হয়েছেন মাত্র ৩২ জন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রশিক্ষণই বন্ধ করে দিয়েছে কোরিয়া। এটির মতো আরও একটি হাসপাতাল তৈরি করে দিতে চায় কোরিয়া। তবে এ হাসপাতালের পূর্ণাঙ্গ সেবা চালু না করে ওই হাসপাতালের কাজ শুরু করা সম্ভব নয়। নিয়োগ থেকে শুরু করে হাসপাতালের ফার্মেসি দরপত্রে পর্যন্ত ঘটেছে দুর্নীতির ঘটনা। সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের ভিতরে ভাড়া দেওয়া ফার্মেসিটির নাম রাখা হয়েছে ‘হসপিটাল ফার্মেসি’। নাম দেখে যে কেউ ভাবতে পারে এটি এই প্রকল্পের অধীনে সরকারি আয়োজন। কিন্তু বাস্তবতা হলো এটিসহ আরও একটি জায়গা ভাড়া দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাও নামমাত্র দামে প্রতি বর্গফুট ৫০ ও ১০০ টাকা করে। সর্বনিম্ন দরদাতাকে বাদ দিয়ে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে হাসপাতালে ফার্মেসি চালানোর টেন্ডার। ছিল না ড্রাগ ও ট্রেড লাইসেন্স, ফার্মেসি চালানোর পূর্ব অভিজ্ঞতাও। এমনকি সর্বোচ্চ দুই দরদাতার চেয়ে ভাড়াও দিয়েছে পাঁচ গুণ কম। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ফার্মেসি ভাড়া দেওয়া হয়েছে যাদের দরপত্রে, তাদের ঠিকানা ৩৮২, মগবাজার। কিন্তু সেখানে এর অস্তিত্বই নেই। হাসপাতালে লিভার ইনফেকশনের চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন দীপ্তি পাল। তিনি বলেন, ‘বারবার ঘুরেও এ হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকা, টেস্ট না হওয়ায় বিড়ম্বনায় শিকার হতে হয়েছে। গত মাসে ভারতে গিয়ে চিকিৎসা শুরু করেছি।’ অথচ বিদেশে রোগী যাওয়া ঠেকিয়ে দেশে বিশ্বমানের সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে তৈরি হয়েছিল এ হাসপাতাল।

চমেক হাসপাতালে ক্লাসরুমেই চলে বায়োপসি

যশোরে খাদ্য-মূত্র নালি অদলবদল করে সেলাই!

সর্বশেষ খবর