শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৯ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

আবার গভীর রাতে হাসপাতালে ভর্তি খালেদা জিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

আবার গভীর রাতে হাসপাতালে ভর্তি খালেদা জিয়া

আবার গভীর রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তাঁর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছে। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে সিসিইউ সুবিধা-সংবলিত কেবিনে রেখেই সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে তিনি মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখে আসার পর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জীবন এখন হুমকির মুখে। ক্ষমতাসীন সরকার শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাঁকে মুক্তি দিচ্ছে না। চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দিচ্ছে না। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে আটকে রেখে তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। গতকাল ভোর ৪টা ২০ মিনিটের দিকে বেগম খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ভোর পৌনে ৫টার দিকে বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। অধ্যাপক ডা. জাহিদ হোসেন রাত ৮টার দিকে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হৃদ?যন্ত্রের সমস্যার কারণে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন বেগম খালেদা জিয়া। চরম অস্বস্তি দেখা দেয়। একপর্যায়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্ষেত্রেও কষ্ট হয়। সে কারণেই তাঁকে মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে গতকাল ভোরে রাজধানীর গুলশানের বাসা থেকে জরুরিভিত্তিতে অ্যাম্বুলেন্সে করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। এর আগে হাসপাতালে ১০ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ২ জুলাই গুলশানের বাসায় ফেরেন বেগম খালেদা জিয়া। গত ২৫ জুন এভারকেয়ার হাসপাতালে তাঁর হৃদ?যন্ত্রে পেসমেকার বসানো হয়। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে যান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে তিনি খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন। তাঁর আগে হাসপাতালে বিএনপি নেত্রীকে দেখতে যান দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।

খালেদা জিয়ার সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে না, নিঃশর্ত মুক্তি দিন- ফখরুল : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে না উল্লেখ করে তাঁর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার জীবন হুমকির মুখে। সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে আটকে রেখে তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয় প্রাঙ্গণে গতকাল এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়াকে দেখতে যান। খালেদা জিয়ার দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়ে মহাসচিব বলেন, তাঁকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থাটা আমরাই করব। অন্য কারও করার দরকার নেই।

তিনি বলেন, সরকার কোনোভাবেই খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টিতে ‘গুরুত্ব দিতে চায় না’। সরকারি দলের নেতা ও মন্ত্রীদের বিভিন্ন বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তাঁরা এমন এমন কথা বলেন, যে তাঁর সঠিক চিকিৎসা চলছে। তাঁর সঠিক চিকিৎসা কোনোমতেই হচ্ছে না। দেশের বাইরে থেকে যাঁরা চিকিৎসা করতে এসেছিলেন, তাঁরা পর্যন্ত বলেছেন, দেশের বাইরে কোনো মাল্টি ডিসিপ্লিনারি উন্নত মেডিকেল সেন্টারে তাঁর সার্জারি দরকার। বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়াকে আটক রেখে তাঁর প্রতি চরম অন্যায় করা হচ্ছে। যে মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়া হয়েছে, সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো। এক-এগারোর সময়ের এ ধরনের মামলার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই ক্ষমতায় এসে নিজেদের মামলাগুলো প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। মিথ্যা ও সাজানো মামলায় তাঁকে অন্যায়ভাবে নিম্ন আদালতে সাজা দেওয়া হয়েছে, উচ্চ আদালতে তা আবার বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিএনপির মহাসচিব বলেন, সাধারণত আমরা জানি, নিম্ন আদালতে যে সাজা হয়, উচ্চ আদালতে গেলে সেটা কমে আসে। কিন্তু এখানে বাড়িয়ে দিয়েছে। কেন বাড়িয়ে দিয়েছে, সেটা পরিষ্কার। তারা আসলে ভিনডিকটিভ ওয়েতে (প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে) কাজ করছে এবং তারা তাঁকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়। এটিই মূল উদ্দেশ্য তাদের।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাস করি। আমরা কখনই নিয়মের বাইরে গিয়ে কোনো কিছু করতে চাই না। সরকারের দায়িত্ব- এটাতে সাড়া দিয়ে খুব দ্রুত তাঁর মুক্তির ব্যবস্থা করা। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অধীনে খালেদা জিয়া চিকিৎসাধীন আছেন। গত চার বছরে বেশ কয়েকবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।

৭৯ বছর বয়সি খালেদা জিয়া ডায়াবেটিস, আরথ্রাইটিস ছাড়াও হৃদরোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনিসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন। দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যেতে হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। করোনাভাইরাস মহামারির শুরুতে তার পরিবারের আবেদনে সরকার নির্বাহী আদেশে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়ার শর্তে তাকে সাময়িক মুক্তি দেন। এরপর ছয় মাস পর পর তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়।

সর্বশেষ খবর