শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৯ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা
আশ্বাস না পাওয়ায় হতাশা, আন্দোলন নবম দিনে

শিক্ষক কর্মবিরতি চলছেই

প্রত্যয় পেনশন স্কিম বাতিল দাবি

নিজস্ব, জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ বাতিলের দাবিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কর্মবিরতি কর্মসূচি গতকাল অষ্টম দিন পার হয়েছে। শিক্ষকরা বলছেন, দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তাদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত থাকবে। আন্দোলনরত শিক্ষকদের দাবি মেনে নেওয়ার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আশ্বাসও পাননি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা। তাই আজ নবম দিনের মতো শিক্ষকদের কর্মবিরতি চলমান থাকবে। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আজও কোনো ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না। গত ১ জুলাই থেকে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ডাকে কর্মবিরতির কর্মসূচিতে সারা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অচল হয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া গতকাল বলেন, সরকারপক্ষ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। নির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ না জানালেও শিগগিরই আন্দোলনরত শিক্ষক প্রতিনিধির সঙ্গে তারা বৈঠকে বসবেন বলে প্রত্যাশা করছি। তবে দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা না পাওয়া পর্যন্ত শিক্ষকদের কর্মবিরতি চলতে থাকবে বলে জানান এ শিক্ষক নেতা। গতকালও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতিতে অংশ নিয়ে শিক্ষকরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের নেতারা বলেন, প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবি না মানা হলে ভবিষ্যতে আন্দোলন        আরও জোরদার হবে। অবরোধ কর্মসূচিও ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা দিলে মানবেন না বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক সারোয়ার হোসেন বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় কী বুঝে প্রত্যয় স্কিম সমর্থন করেছে, তা আমরা বুঝি না। অনেক খুঁজেও একটা ভালো দিক আমরা পাইনি। এ স্কিম কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। দিনের পর দিন কর্মবিরতি অব্যাহত থাকায় ক্যাম্পাস সহসাই সচল হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা বেড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টানা ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা বড় শেসনজটের শঙ্কায় রয়েছেন। ক্লাস-পরীক্ষাসহ প্রশাসনিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক ছাত্রছাত্রী ক্যাম্পাস ছাড়ছেন বলেও জানা গেছে। প্রত্যয় স্কিম সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের পাশাপাশি সুপারগ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তনের দাবিও রয়েছে শিক্ষকদের। ঈদের ছুটি শেষে ক্যাম্পাস খোলার কয়েকদিনের মধ্যেই বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ডাকে সারা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা শুরু হয়েছে। আমাদের জেলা প্রতিনিধি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদকরা জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল টানা ৮ম দিনের মতো কর্মবিরতি করেন শিক্ষক-কর্মকর্তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। টানা কর্মবিরতির কারণে জাবিতে অচল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, আমাদের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের দাবি আমাদের যেন প্রত্যয় স্কিম থেকে বাদ দেওয়া হয়। সরকারকে আহ্বান জানাব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরেয়ে আনার জন্য হলেও আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হোক। দাবি বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। পেনশনস্কিম ‘প্রত্যয়’ প্রত্যাহারে দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা ও দাফতরিক কার্যক্রম বর্জন কর্মসূচির অষ্টম দিনেও অনড় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষক-কর্মকর্তারা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যেতে চান তারা। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃথক দুই কর্মসূচিতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ওমর ফারুক বলেন, সর্বজনীন পেনশন প্রকল্প সরকারের চমৎকার উদ্যোগ। তবে এটা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য প্রযোজ্য না রাখাই যৌক্তিক। কেননা তারা একটি নীতিমালার মধ্যেই আছেন। নতুন এই নীতিমালা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ অগ্রগতি ও উচ্চ শিক্ষার জন্য হুমকিস্বরূপ হবে, যা মোটেও কাম্য নয়। একই দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষক-কর্মকর্তারা। পেনশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার দাবিতে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) সর্বাত্মক কর্মবিরতি অব্যাহত রয়েছে। এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ক্লাস, পরীক্ষা ও সব ধরনের দাফতরিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে অচল হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরা। গতকাল শিক্ষকরা কর্মবিরতি ও দুপুরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ও খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকদের কর্মবিরতি পালিত হয়। কর্মবিরতির কারণে সব ডিসিপ্লিনের ক্লাস, অনলাইন, সান্ধ্যকালীন ক্লাস, প্রফেশনাল কোর্সের ক্লাস, মিডটার্ম, ফাইনাল, ভর্তি পরীক্ষাসহ দাফতরিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া পেনশনস্কিম ‘প্রত্যয়’ প্রত্যাহারের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর