বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

আদেশ প্রত্যাখ্যান আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা

নিজস্ব ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা জারি করেছেন আপিল বিভাগ। তবে আপিল বিভাগের এই আদেশ প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সরকারি চাকরির সব গ্রেডে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা বহাল করে অন্য সব কোটা বাতিলের দাবিতে ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে গতকাল সর্বাত্মক ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেন দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির পর আজও বিকাল ৩টা থেকে সর্বাত্মক ব্লকেড পালন করবেন তারা। গত সন্ধ্যায় প্রেস ব্রিফিংয়ে এ ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল বেলা ১১টা থেকে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের পূর্ব নির্ধারিত ব্লকেড কর্মসূচি। রাজধানীর শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, ফার্মগেট, চানখাঁরপুল মোড়, বঙ্গবাজার, শিক্ষা চত্বর, মৎস্য ভবন, জিপিও, গুলিস্তান, সায়েন্সল্যাব, নীলক্ষেত, রামপুরা ব্রিজ, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, মহাখালী, বাংলামোটর, আগারগাঁও মহানগরের বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে নগরীতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়াও দেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান নেন সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। রাজধানী শহরের বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের হাডুডু, ক্রিকেট, ফুটবল খেলায় অংশ নিতে দেখা যায়। কবিতা, গান, নানা রকম প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন, পতাকা হাতে তারা ছিলেন কোটাবিরোধী প্রতিবাদে সোচ্চার। অনেকে ২০১৮ সালের মতো কোটাবিরোধী বডি গ্রাফিতি ও কাফনের কাপড় পরেও হাজির হয়েছেন আন্দোলনে।

এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘সারা বাংলা ব্লকেড, ব্লকেড-ব্লকেড’, ‘হাই কোর্ট না শাহবাগ, শাহবাগ-শাহবাগ’, ‘কোটা নাকি মেধা আগে, জবাব চাই শাহবাগে’, ‘১৮ এর পরিপত্র, বহাল করতে হবে’, ‘সংবিধানের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’ সহ নানা স্লোগান দেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে আদালতের সম্পর্ক নাই। সব কিছুই সরকার এবং নির্বাহী বিভাগের হাতে। তাই তাদেরই ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা বলেছি, কোটা কেবল তিনটি ক্ষেত্রে দেওয়া হবে। মুক্তিযোদ্ধা সন্তান, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধী। এই তিনের বাইরে সব কোটা বাতিল করতে হবে। আর কোটা হবে ৫ শতাংশ। শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, আদালতে যে দুই শিক্ষার্থী রিট করেছে তারা আমাদের প্রতিনিধি নয়, তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নেই। সারা দেশের ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ সমন্বয় করে অবরোধ কর্মসূচি পরিচালনা করা হয় রাজধানীর শাহবাগ থেকে। গতকাল বিকাল ৫টায় শাহবাগ থেকে ঘোষণা এলে রাজধানীর অন্যান্য স্পটে অবস্থানরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা একে একে স্থান ত্যাগ করে শাহবাগে জড়ো হতে শুরু করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে প্রেস ব্রিফিংয়ে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার মাধ্যমে শাহবাগ ত্যাগ করেন শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনের সমন্বয়কদের একজন আসিফ হোসাইন পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, বৃহস্পতিবার (আজ) বেলা ৩টা থেকে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করা হবে। সারা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে অবস্থান নিয়ে অন্যান্য দিনের ব্লকেড কর্মসূচির মতোই পালন করা হবে। তিনি বলেন, অযৌক্তিক কোটা বাদ দিতে হবে। একই সঙ্গে কোটা সংস্কারের জন্য পরিষদ গঠন করতে হবে। যতদিন এই দুটি কাজ আমলে নেওয়া হবে না ব্লকেড কর্মসূচি চলবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, গতকাল বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত টানা তিন ঘণ্টা গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট মোড় অবরোধ করে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে কর্মসূচি শেষ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ কোটার আইন পাস করার এক দফা দাবি জানান তারা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা চার দফা দাবি থেকে এক দফা দাবিতে এসেছি। আমাদের হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, আপিল বিভাগ দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। আমরা আমাদের এক দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব। তিনি আরও বলেন, আমরা আজকে (বুধবার) গুলিস্তান অবরোধ করেছি। পরে আমরা এখানে বসে থাকব না, আমরা মতিঝিলে শাপলা চত্বর অবরোধ করব। আমাদের এক দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছেড়ে কোথাও যাব না। আমাদের মামলা-হামলার ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। শিক্ষার্থীরা এসবে ভয় পায় না। তারা রাজপথে আছে এবং রাজপথ থেকে ফয়সালা করে ক্যাম্পাসে ফিরবে।

সর্বশেষ খবর