শুক্রবার, ১২ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা
অনড় ছাত্ররা, আজও বিক্ষোভ

সংঘাতে গড়াল আন্দোলন

♦ ঢাকা কুমিল্লা চট্টগ্রামে পুলিশের সঙ্গে কোটাবিরোধীদের সংঘর্ষ লাঠিচার্জ ♦ আহত ২৩ ♦ ব্যারিকেড ভেঙে অবস্থান ♦ বাধায় বিভিন্ন স্থানে পণ্ড ♦ মাঠে ছাত্রলীগ ♦ সমর্থন ছাত্রদলের ♦ ক্লাসে ফেরাতে ভিসিদের চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংঘাতে গড়াল আন্দোলন

রাজধানীর শাহবাগে গতকাল পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে অবস্থান নেয় কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পাল্টা সমাবেশ ছাত্রলীগের -বাংলাদেশ প্রতিদিন

কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলন সংঘাতে গড়িয়েছে। গতকাল শিক্ষার্থীদের পূর্বঘোষিত বাংলা ব্লকেড কর্মসূচিতে বাধা দেয় পুলিশ। কয়েকটি স্থানে সংঘর্ষ হয়েছে। তবে বেশির ভাগ স্থানে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে আন্দোলনকারীরা। সংঘর্ষ হয়েছে ঢাকার আগারগাঁও, চট্টগ্রামের টাইগার পাস ও কুমিল্লায়। রাজধানীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই শাহবাগে বিশাল জমায়েত নিয়ে পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙে শিক্ষার্থীরা। জাহাঙ্গীরনগর ও কুষ্টিয়ায়ও পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনকারীরা। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ২৩ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে আজ বিকাল ৪টা থেকে বিক্ষোভ সমাবেশ ও ছাত্র ধর্মঘট ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনকারীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জানান, সরকারি চাকরির সব গ্রেডে বিদ্যমান কোটার সংস্কার চেয়ে আন্দোলনকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টি উপেক্ষা করে শাহবাগে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করে। গতকাল বিকাল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে জড়ো হতে শুরু করে শিক্ষার্থীরা। পরে বড় একটি মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পয়েন্ট প্রদক্ষিণ করে শাহবাগে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, এদিন শাহবাগে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়। শাহবাগে আসার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা পুলিশি বাধা ভেঙে শাহবাগ থেকে বাংলামোটরের দিকে যাত্রা করে। শাহবাগে মেট্রো স্টেশনের নিচে পুলিশ বাহিনী তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। একপর্যায়ে পুলিশ শিক্ষার্থীদের রাস্তা ছেড়ে দেয়।

এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘সারা বাংলা ব্লকেড, ব্লকেড ব্লকেড’, ‘হাই কোর্ট না শাহবাগ, শাহবাগ শাহবাগ’, ‘কোটা নাকি মেধা আগে, জবাব চাই শাহবাগে’, ‘১৮-এর পরিপত্র, বহাল করতে হবে’, ‘সংবিধানের মূল কথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটাপ্রথার কবর দে’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’সহ নানা স্লোগান দেয়। এ ছাড়া কুমিল্লা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য স্থানে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে স্লোগান দেয় আন্দোলনকারীরা।

এদিকে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করতে গেলে ঢাকা কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীদের বাধা দেয় পুলিশ। পরে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শাহবাগে এসে অবস্থান নেয়।

আগারগাঁওয়ে পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষে আহত ১০

শেকৃবি প্রতিনিধি জানান, কোটা সংস্কারের দাবিতে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এতে ১০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টায় আগারগাঁওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ফটক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

এর আগে বিকাল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ফটক থেকে বেরিয়ে আগারগাঁও মোড়ের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ বাধা দেয়। শিক্ষার্থীরা বাধা উপেক্ষা করে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করলে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এ সময় শিক্ষার্থীদের আটক করতেও দেখা যায়। পরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে তাদের ছেড়ে দেয় পুলিশ। পরে শিক্ষার্থীরা পুলিশি বাধা অতিক্রম করে শেরেবাংলানগরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সংলগ্ন সড়কে অবস্থান নেয়। এতে মিরপুর-ফার্মগেট সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘সংবিধানের মূল কথা, সবার জন্য সমতা’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটাপ্রথার কবর দে’ এ রকম বিভিন্ন কোটাবিরোধী স্লোগান দিতে থাকে।

পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ : জাবি প্রতিনিধি জানান, পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে গতকাল ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। বিকাল ৪টায় শুরু হওয়া এ অবরোধ শেষ হয় সন্ধ্যা ৭টায়। এতে ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চল ও আশপাশ জেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

এর আগে পৌনে ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে আন্দোলনকারীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদসংলগ্ন সড়ক হয়ে প্রধান ফটকের সামনে গেলে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যের বাধার মুখে পড়ে। এ সময় প্রক্টর শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ না করতে অনুরোধ করলে নাকচ করে দেয় আন্দোলনকারীরা। পরে বিক্ষুব্ধরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ভেঙে সড়কে অবস্থান নেয়।

এ সময় ২ শতাধিক পুলিশ শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধে বাধা দিলে বাগ্বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে তারা। পরে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে মিছিল করে শিক্ষার্থীরা।

এদিকে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের যৌক্তিক সমাধানের দাবিতে বিকাল ৪টায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।

প্রধান ফটকের তালা ভেঙে আন্দোলনে জবি শিক্ষার্থীরা : জবি প্রতিনিধি জানান, কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে পুরান ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের তালা ভেঙে আন্দোলনে নেমেছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগে আসে তারা। এর আগে জবি শিক্ষার্থীরা বৃষ্টি উপেক্ষা করে ক্যাম্পাসের উন্মুক্ত লাইব্রেরির সামনে জড়ো হয়। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের তালা ভেঙে পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার, রায়সাহেব বাজার, তাঁতীবাজার, বংশাল, গুলিস্তান, শিক্ষা ভবন, হাই কোর্ট, মৎস্য ভবন মোড়ে পুলিশের ব্যারিকেড ঠেলে শাহবাগ মোড়ে জড়ো হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভিন্ন মোড়ে পুলিশের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। জবির আন্দোলনকারীরা জানায়, ‘আমাদের এক দফা দাবি আদায় পর্যন্ত রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাব। আজ আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে শাহবাগে অবস্থান নিয়েছি। পুলিশের কোনো বাধা আমাদের রুখে দিতে পারেনি।’

চট্টগ্রামে পুলিশের লাটিচার্জে আহত ৩ : চবি প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রামে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের এক দফা দাবিতে রেলপথ ও মহাসড়ক অবরোধ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ও চবি অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীরা। গতকাল নগরীর বটতলী স্টেশন অতিক্রম করে টাইগার পাস সড়ক অবরোধ করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি হয়। এতে তিন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছে। পরে ষোলশহর ২ নম্বর গেট এলাকায়ও তাদের ওপর লাটিচার্জ করে পুলিশ। প্রতিবাদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটসংলগ্ন চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলনকারীরা। এতে বন্ধ হয়ে যায় চট্টগ্রামের সঙ্গে রাঙামাটির সড়ক যোগাযোগ।

সরেজমিনে দেখা যায়, গতকাল দুপুর আড়াইটায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সড়ক অবরোধের কথা ছিল। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে তারা বিকাল ৪টার দিকে বটতলী রেলওয়ে স্টেশনে জড়ো হতে থাকে। পরে মিছিলকারীরা টাইগার পাস অবরোধ করতে চাইলে পুলিশ তাদের অবরুদ্ধ করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধস্তাধস্তি হয় এবং পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা পুলিশি বাধা উপেক্ষা করেই লালখানবাজার হয়ে ওয়াসা মোড়ের দিকে যেতে থাকে। এ সময় তাদের পেছন পেছন দৌড়ে যায় পুলিশ। পরে শিক্ষার্থীরা ফের মিছিল নিয়ে জিইসি মোড় হয়ে ২ নম্বর গেটে চলে যায়। কিন্তু সেখানে আগে থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থানে ছিল। শিক্ষার্থীরা সেখানে মিছিল নিয়ে পৌঁছামাত্র পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে তারা জড়ো হয়ে ফের সড়ক অবরোধ করে এবং রাতে সড়কে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দেয়। শিক্ষার্থীরা মাইক্রোফোনে বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদের ওপর হামলা করেছে। আজ সারা রাত আমরা এখানেই অবস্থান করব। আজ থেকে আমরা আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করব।’ এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘চট্টগ্রামে আমাদের ভাইদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে এবং অনেকজনকে আহত করেছে খবর পেয়ে আমরা ১ নম্বর গেট অবরোধ করেছি। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি আদায়ে পুলিশ কেন লাঠিচার্জ করবে, পুলিশকে এ অধিকার কে দিয়েছে তার জবাব দিতে হবে সরকারকে।’

 

কুমিল্লায় পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষে আহত ১০ : কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, কুমিল্লায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে জড়িত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে টিয়ার শেল ও ফাঁকা গুলি চালায় পুলিশ। গতকাল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) সংলগ্ন আনসার ক্যাম্প এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে সংবাদকর্মীসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আসার সময় আনসার ক্যাম্প এলাকায় পুলিশ বাধা দেয়। এতে পুলিশ ও শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে টিয়ার শেল ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার কোটবাড়ী অংশে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়। তবে বিকাল ৪টার দিকে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা। এ সময় গাড়ির টায়ার ও গাছের গুঁড়ি দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে তারা। এতে সড়কের উভয় পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা মিছিল করে এবং গান ও কবিতা আবৃত্তিতে মেতে ওঠে। ছাত্রীদের উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে।

রাবি ছাত্রলীগের মারধর : রাবি প্রতিনিধি জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) কোটা আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় এক শিক্ষার্থীকে মারধর করে হল থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাবি শাখা ছাত্রলীগ সভাপতিসহ দুই নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মোস্তফা মিয়া। তবে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্তরা। অভিযুক্তরা হলেন রাবি শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ও সৈয়দ আমির আলী হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ফরহাদ হাসান।

অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে, কোটাবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় সৈয়দ আমির আলী হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি ফরহাদ হোসেন তাকে দেখা করতে বলেন। মঙ্গলবার ফরহাদ অভিযোগকারীকে নিয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের কক্ষে যান। এ সময় মোস্তাফিজ তাকে ‘শিবির’ আখ্যা দেন এবং তার মোবাইল ফোন চেক করেন। কিন্তু কোনো সংশ্লিষ্টতা না পেয়ে কোটা আন্দোলনের পোস্ট দেখে মারধর করেন। পাশাপাশি বলতে থাকেন, ‘তুই শিবির করিস স্বীকার কর।’ তখন ভুক্তভোগী শিবির করেন না জানালেও সভাপতি তাকে লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। পরে ফরহাদসহ কয়েকজন মিলে লাথি ও ঘুসি মেরে দুই ঘণ্টা যাবৎ নির্যাতন চালান। মারধরের পর তাকে হল থেকে বের করে দেওয়ার কথা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করে প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তার দাবি জানান মোস্তফা।

ছাত্রলীগের হাতাহাতি : রংপুর থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলার অভিযোগ এনে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে হাতাহাতি হয়েছে ছাত্রলীগের। এ ঘটনায় ছাত্রলীগ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বিকাল ৪টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চত্বরে জড়ো হতে থাকে শিক্ষার্থীরা। সাড়ে ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি পোমেল বড়ুয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। পরে ৫টার দিকে শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করলে প্রশাসনিক ভবনের সামনে প্রক্টরসহ অন্য শিক্ষকরা বাধা দেন। এ সময় প্রক্টরের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধাক্কাধাক্কির অভিযোগ তুলে বাগ্বিতন্ডায় জড়ান ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে দুই পক্ষ। এ সময় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিয়ে শিক্ষকের ওপর হামলার বিচার দাবি করতে থাকেন। পরিস্থিতি শান্ত হলে প্রক্টর শিক্ষার্থীদের হলে ফেরত পাঠান।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কারণে একটি শান্তিপূর্ণ কোটা পদ্ধতি সংস্কারের আন্দোলন বানচাল হয়ে গেছে। আজ সারা দিন এ অপচেষ্টা অব্যাহত ছিল। আমরা কেন্দ্রীয় ঘোষণা অনুযায়ী কোটা পদ্ধতি সংস্কারের আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

সিলেট থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বর থেকে মিছিল নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করতে যায় তারা। মিছিলটি প্রধান ফটক অতিক্রম করলে শিক্ষার্থীদের বাধা দেয় পুলিশ। শিক্ষার্থীরা এ বাধা উপেক্ষা করে মহাসড়কে অবস্থান নেয়। এদিকে বিকাল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে সমাবেশ করে ছাত্রলীগ। এ সময় তারা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানায়।

খুলনা থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, বৃষ্টির মধ্যেই গতকাল খুলনা মহানগরীর জিরো পয়েন্ট মোড় অবরোধ করেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে জিরো পয়েন্ট এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। খুলনা-সাতক্ষীরা, খুলনা-বাগেরহাট, খুলনা-ঢাকা মহাসড়কে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রী ও যানবাহন চালকরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় তারা।

আজ বিকালে আবার বিক্ষোভ সমাবেশ ও ছাত্র ধর্মঘট : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আজ বিকাল ৪টা থেকে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ ও ধর্মঘট পালন করবে।

শাহবাগে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে রাত ৯টায় আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের যে বাধা প্রদান করা হয়েছে, দুর্ব্যবহার করা হয়েছে তার নিন্দা জানাই। আমরা স্পষ্টভাবে বলছি, হাই কোর্টের সঙ্গে আমাদের আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। এ আন্দোলনের ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। সরকারের এখতিয়ারে যে কাজ হয়, সেটা আদালতের ওপর চাপিয়ে সরকারই আদালত অবমাননা করছে। ৫% কোটার ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়ে বাকিটা মেধাভিত্তিক করাই আমাদের দাবি। আমাদের এক দফা দাবি বাস্তবায়নের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার দাবিতে আজ নতুন কর্মসূচি পালিত হবে।’

ছাত্রদলের পূর্ণ সমর্থন : কোটাবিরোধী আন্দোলনকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের অতি সীমিতসংখ্যক কোটা ছাড়া বাংলাদেশে এ মুহূর্তে আর কোনো কোটার প্রয়োজন নেই। চলমান যে আন্দোলন সাধারণ শিক্ষার্থীরা করছেন, তাতে ছাত্রদল পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করছে। একই সঙ্গে আমরা বিশ্বাস করি, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীদের রুখে দিয়ে এ আন্দোলন সফল হবে ইনশা আল্লাহ। গতকাল নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির এ সমর্থন জ্ঞাপন করেন।

ক্লাসে ফেরাতে চিঠি : সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরাতে দেশের সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনার আলোকে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তদারক সংস্থা থেকে এ চিঠি দেওয়া হয়।

সহিংসতায় অ্যামনেস্টির উদ্বেগ : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের দমন-পীড়নে শিক্ষার্থীসহ অন্তত ২০ জন আহত হওয়ার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। গতকাল সন্ধ্যায় যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক এই মানবাধিকার সংস্থার দক্ষিণ এশিয়া শাখা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে উদ্বেগ জানিয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দক্ষিণ এশিয়া বলেছে, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই প্রতিবাদ করার অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।

পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের নিরাপত্তা ও অপ্রয়োজনীয় এবং অতিরিক্ত শক্তির ব্যবহার বন্ধ করারও আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

আন্তর্জাতিক এ মানবাধিকার সংস্থা বলেছে, আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় ও নিজস্ব সংবিধান অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতার অধিকারের প্রতি বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর