শিরোনাম
শুক্রবার, ১২ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা
রায়ের কার্যকরী অংশ প্রকাশ

কোটার হার বাড়াতে কমাতে পারবে সরকার : হাই কোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ এবং আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের কার্যকরী ও নির্দেশনা অংশ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত রায়ে বলা হয়েছে, প্রয়োজনে কোটা পরিবর্তন ও হার কমানো বা বাড়ানো যাবে। কোটা পূরণ না হলে মেধাতালিকা থেকে কোটা পূরণ করা যাবে। গত ৫ জুন বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। গতকাল ওই রায়ের এক পৃষ্ঠা কার্যকরী অংশ প্রকাশ করা হয়। ওই রায়ের অনুলিপিতে দেখা যায়, বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারপতি খিজির হায়াত এটা লিখেছেন। জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এতে সহমত ব্যক্ত করেন।

রায়ে আদালত বলেছেন, ‘২০১২ সালে করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাই কোর্টের দেওয়া রায় ও আদেশ, ২০১৩ সালের লিভ টু আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের তা বহাল ও সংশোধিত আদেশ এবং ২০১১ সালের ১৬ জানুয়ারির অফিস আদেশের (মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনির কোটা) আলোকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান/নাতি-নাতনিদের জন্য কোটা পুনর্বহাল করতে বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হলো। একই সঙ্গে জেলা, নারী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য কোটাসহ, কোটা বজায় রাখতে নির্দেশ দেওয়া হলো। এ বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব, আদেশ পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে পরিপত্র জারি করতে নির্দেশ দেওয়া হলো।’

রায়ে হাই কোর্ট বলেছেন, ‘প্রয়োজনে উল্লিখিত শ্রেণির ক্ষেত্রে কোটা পরিবর্তন ও হার কমানো বা বাড়ানোর বিষয়ে এই রায় বিবাদীদের জন্য কোনো বাধা তৈরি করবে না। যে কোনো পাবলিক পরীক্ষায় কোটা পূরণ না হলে সাধারণ মেধাতালিকা থেকে শূন্যপদ পূরণ করায় বিবাদীদের স্বাধীনতা রয়েছে।’

এ রায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এক পৃষ্ঠার একটি রায়ের অনুলিপি হাতে পেয়েছি। এটি শুধু রায়ের কার্যকরী অংশ। এ রায় এখন কার্যকর হবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, গত বুধবার আপিল বিভাগ কোটার বিষয়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন। আগামী ৭ আগস্ট শুনানির দিন রেখেছেন আপিল বিভাগ। ফলে আপাতত হাই কোর্টের রায় কার্যকর হবে না।

হাই কোর্টে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। রায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রায়ে সব কোটা বজায় রাখতে বলা হয়েছে। তবে প্রয়োজনে সরকার তা কমাতে বা বাড়াতে পারবে। আপিল বিভাগ স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন। ফলে এ রায় এখনই বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না।

কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ছয় বছর আগে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে আন্দোলন গড়ে তোলেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। এ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে ২০১৮ সালের ২ জুন একটি কমিটি করে সরকার। সব কাজ শেষে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোনো কোটা না রেখে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের নিয়ম চালু করতে ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ জমা দেয় কমিটি। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়ার পর ৩ অক্টোবর তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হলে সেখানে কোটা বাতিলের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। পরদিন ৪ অক্টোবর কোটা পদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি করেন জনপ্রশাসন সচিব। পরিপত্রে বলা হয়, নবম গ্রেড (আগের প্রথম শ্রেণি) এবং দশম থেকে ১৩তম গ্রেডের (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হলো।

২০২১ সালে কোটা পদ্ধতি বাতিলের এই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন। এই রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৫ জুন ওই পরিপত্র অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করে রায় দেন হাই কোর্ট। এ রায়ের পর ফের কোটাবিরোধী আন্দোলনে নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।

এরই মধ্যে হাই কোর্টের এ রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। গত ৪ জুলাই আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি মুলতবি হয়। এর মধ্যে হাই কোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী গত মঙ্গলবার আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ ও দুই শিক্ষার্থীর আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে গত বুধবার আপিল বিভাগ কোটার বিষয়ে সব পক্ষকে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে পরবর্তী শুনানির জন্য ৭ আগস্ট দিন ধার্য করেন।

সর্বশেষ খবর