শুক্রবার, ১২ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

অফিস সহায়ক ও প্রহরী দুজনই কোটিপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা ও নাটোর প্রতিনিধি

প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গ্রেফতার পিএসসির অফিস সহায়ক খলিলুর রহমান খুলনা নগরীর রায়েরমহল এলাকায় সম্প্রতি জমি কিনেছেন। পৈতৃক জমিতে সেমিপাকা ঘরও করেছেন। ঢাকায় রয়েছে ফ্ল্যাট। সেখানে স্ত্রীকে নিয়ে বাস করেন। গাজী ইন্টারন্যাশনাল নামে রয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আউটসোর্সিং কর্মচারী ও মালামাল সরবরাহের কাজ করেন তিনি। জানা যায়, রায়েরমহল এলাকার ইমদাদুল হক মনার মাধ্যমে কোটি টাকা হাতিয়েছেন খলিল। নিজের বড় ভাই হাবিবুর রহমান ও চাচাতো ভাই মফিজুল ইসলামকে পিএসসিতে চাকরি দিয়েছেন। ভগ্নিপতি মিন্টুকে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট, ইমদাদুলের ভগ্নিপতি জহিরুল ইসলাম মুন্নাকে গণপূর্ত বিভাগে চাকরি দিয়েছেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও ফায়ার সার্ভিসে চাকরির নামে এলাকার অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। খলিলের মা রোকসানা জানান, খলিল ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনেছে। তিনি দু-তিনবার সেই ফ্ল্যাটে থেকেছেন। রায়েরমহল এলাকায় ইমদাদুল জানান, খুলনায় জমি কেনাবেচা ব্যবসা শুরু করেন খলিল। রায়েরমহল এলাকায় নিজ বাড়ির পাশে জমি কিনেছেন। ঢাকায় গাজী ইন্টারন্যাশনাল নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তিনি সেখানে মালামাল সরবরাহ করে কিছু টাকাও পেয়েছেন। কোটি টাকার জমি কিনেছেন নিরাপত্তা প্রহরী শাহাদাত : বিসিএসের প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সদস্য শাহাদাত হোসেন নাটোরের সিংড়া উপজেলার তাজপুর ইউনিয়নের কাদিরগাছা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ওই গ্রামের মৃত বাহার আলী সরদারের ছেলে। তবে শাহাদাত হোসেন এলাকায় ‘শখেন’ নামেই বেশি পরিচিত। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী শাহাদাত হোসেন তার গ্রামের ভিটায় দেড় বিঘার ফলের বাগান ও বিলে ৫ বিঘা জমি কিনেছেন। সিংড়া পৌরসভার উপশহরে প্রায় ৫০ লাখ টাকায় কিনেছেন ৮ শতক জায়গা। পৌরসভার সরকারপাড়া মহল্লায় কিনেছেন ৫ শতক জায়গা। এ ছাড়া ঢাকায় ফ্ল্যাটের মালিক তিনি। তবে গ্রামের বাড়িতে তিনি থাকেন না। তার জমি ও ফলের বাগান দেখাশোনা করেন খালাতো ভাই হানিফ আলী। তিনি জানান, তার ভাইয়ের দেড় বিঘার ফলের বাগান চাষাবাদ ও বিলের ৫ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেন তিনি। বাগানের জন্য তার ভাইকে কিছু দিতে হয় না। তবে ধানের বর্গার অংশ তার ভাইকে দেন।হানিফ আরও বলেন, তার ভাই ও পরিবার এখানে থাকেন না। মাঝেমধ্যে বেড়াতে আসেন। ঢাকার মিরপুরে নিজস্ব বাড়িতে থাকেন তিনি। শাহাদাত হোসেনের চাচাতো ভাই হাফিজুর রহমান জানান, শাহাদাত চাকরিজীবনের প্রথম কুমিল্লা পাসপোর্ট অফিসে নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে যোগদান করেন। গ্রামে বাবা-মায়ের ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত জায়গা ছাড়াও অল্প কিছু জায়গা কিনেছেন। শাহাদাত যে প্রশ্নফাঁস করে আমার তা জানা নেই।

শাহাদাতের বড় ভাই সাইদুল ইসলাম জানান, ভাই হলেও শাহাদাত আমাদের কোনো খোঁজখবর নেয় না। গ্রামে তেমন আসে না, আর কোথায় চাকরি করেন তাও আমরা জানি না। তবে শুনেছি ঢাকায় তার দুটি নিজস্ব বাসাসহ সিংড়া শহরে তিনটা জায়গা আছে। এলাকাবাসী জানান, ২০০২ সালের দিকে এ এলাকার সাবেক সচিব মখলেছুর রহমান শাহাদাতকে চাকরি দিয়েছিলেন। তবে তিনি প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত তা প্রতিবেশীরা জানতেন না। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে বিষয়টি তারা জানেন।

তার গ্রামের জামাল হোসেন, রেজাউল ও আনিছুর রহমান বলেন, ঈদে এলাকায় আসেন তিনি। সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন। তিনি পাসপোর্ট অফিসে চাকরি করেন এটুকু আমরা জানতাম। প্রশ্নফাঁসে জড়িত এটা জানতাম না। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর বিষয়টি আমরা জেনেছি।

সিংড়ার তাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ঢাকায় বাড়ি ও এলাকায় জায়গা-জমি কিনেছেন তিনি। একজন নিরাপত্তা প্রহরীর ১২ হাজার টাকা বেতন দিয়ে এত কিছু করা সম্ভব নয়। তাই শাহাদাতের সম্পদ অনুসন্ধানের জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি করেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর