শিরোনাম
শনিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক আন্দোলন

সরকারের সঙ্গে বৈঠকের অপেক্ষায় শিক্ষকরা

কর্মবিরতি চলছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

সর্বজনীন পেনশন প্রত্যয় স্কিম থেকে অন্তর্ভুক্তি বাতিলের দাবিতে গত ১ জুলাই থেকে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ডাকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলছে শিক্ষকদের। এই শিক্ষকরা এখন সরকারপক্ষের সঙ্গে আলোচনার অপেক্ষায় রয়েছেন। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা প্রত্যাশা করছি, খুব শিগগিরই আমাদের ন্যায়সঙ্গত দাবির ব্যাপারে সরকারপক্ষ আলোচনায় বসবে। দাবি আদায় না হলে শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরবে না। শিক্ষকদের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা চলবে না বলে জানান এ শিক্ষক নেতা। ফেডারেশনের নেতারা জানান, প্রস্তাবিত প্রত্যয় স্কিম বাস্তবায়ন করা হলে মেধাবীরা ভবিষ্যতে শিক্ষকতা পেশায় আসতে আগ্রহী হবেন না। যারা আসবেন তারাও ভুক্তভোগী হবেন। আমাদের আন্দোলন তরুণ সমাজের স্বার্থরক্ষার পক্ষে এবং উচ্চশিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের চক্রান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন।  আন্দোলনরত শিক্ষকরা জানান, গত ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, যেসব শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী চলতি বছরের ১ জুলাইয়ের পর থেকে যোগ দেবেন তাদের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমের ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার জন্য বিদ্যমান অবসর সুবিধা সংক্রান্ত বিধিবিধান প্রযোজ্য হবে না। শিক্ষকদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য যে প্রত্যয় স্কিম আরোপ করা হয়েছে, তা তাদের পারিবারিক সুরক্ষা নষ্ট করছে। এ প্রত্যয় স্কিমের ফলে মেধাবীরা আর শিক্ষকতা পেশায় আসতে আগ্রহী হবেন না। তাই সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন শিক্ষকরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, প্রত্যয় স্কিমে মূল বেতন থেকে ১০ শতাংশ অর্থ কেটে নেওয়া হবে, যেটা আগে কাটা হতো না। বর্তমানে পেনশনার ও নমিনি আজীবন পেনশনপ্রাপ্ত হন; কিন্তু নতুন এ স্কিমে পেনশনাররা ৭৫ বছর পর্যন্ত পেনশন পাবেন। বিদ্যমান পেনশনব্যবস্থায় ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পাওয়া যায়, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সেটিও সুস্পষ্ট করা হয়নি। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদকাল ৬৫ থেকে ৬০ বছর করা হয়েছে। মাসিক চিকিৎসাভাতা, উৎসবভাতা, বৈশাখী ভাতাও নতুন প্রত্যয় স্কিমে প্রদান করা হবে না বলে জানা গেছে।

দাবি আদায়ের কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন। শিক্ষকদের কর্মবিরতি কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের এ সময়ে বন্ধ রয়েছে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিও। অনলাইন, সান্ধ্যকালীন ক্লাস এমনকি শুক্র ও শনিবারের প্রফেশনাল কোর্সের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে শিক্ষক আন্দোলনে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় অফিস, সেমিনার, কম্পিউটার ল্যাব ও গবেষণাগারের তালাও খোলেনি। সারা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হওয়া এ অচলাবস্থার কারণে সেশনজটের মুখে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ডাকে কর্মবিরতির কর্মসূচিতে সারা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অচল হয়ে পড়েছে। প্রত্যয় স্কিম সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন বাতিল, সুপারগ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তনের দাবিতে এ কর্মবিরতি পালন করে আসছেন শিক্ষকরা। সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাতিলসহ তিন দাবি আদায়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের টানা কর্মবিরতি আজ ১৩তম দিনে গড়াল।

সর্বশেষ খবর