শনিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা
৩০ নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস

পিএসসি-বিজি প্রেসের অর্ধশতাধিক জড়িত!

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি জড়িত রয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে তারা প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে কাজ করতেন। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তারা এসব প্রশ্নপত্র তুলে দিতেন তিন-চারটি চক্রের কাছে। চক্রের সদস্যরা নানা কৌশলে পরীক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্ন পৌঁছে দিতেন। এসব প্রশ্ন পেয়ে অনেকেই  প্রজাতন্ত্রের বড় কর্মকর্তা হয়েছেন। সর্বশেষ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) হাতে গ্রেপ্তারদের জবানি থেকেও এসব বড় কর্মকর্তার অনেকের নাম উঠে আসছে।

জানা গেছে, গত ২০১১ সালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় আবেদ আলীসহ পিএসসির দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। এর আগে ২০১০ সালে মেডিকেল কলেজের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় একাধিক সংস্থার প্রতিবেদনে সৈয়দ আবেদ আলীর নাম আসে। ওই সময় তাকে গ্রেপ্তারও করা হয়। নিজের অপরাধ কবুল করে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিস্তারিত জানিয়েছিলেন সংশ্লিষ্টদের কাছে। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ওই সময়ের চেয়ারম্যান পিএসসির ড্রাইভার সৈয়দ আবেদ আলীসহ যে কজন কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়। ওই মামলায় বিজি প্রেসেরও দুই কর্মকর্তা আসামি ছিলেন। ২০১৪ সালে বিচার কার্যক্রম শুরু হলে তখন মাত্র দুজন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিআইডি অভিযানে নামার আগেই সব ফাইল ওয়ার্ক শেষ করে। সবকিছু নিশ্চিত হওয়ার পরই অভিযানে নামা সিআইডির বৈশিষ্ট্য। এই ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। পিএসসির পরীক্ষা-শাখা (নন-ক্যাডার), তথ্য-প্রযুক্তি শাখা, ইউনিট-১২ ও পিএসসি সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয়ের বেশ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম সামনে আসছে। বেশ কিছু নাম আসছে বিজি প্রেসের কর্মকর্তা-কর্মচারীর। অভিযোগ রয়েছে গত এক যুগে ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হয়েছে মূলত পিএসসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাত ধরেই।

জানা গেছে, প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৭ জন। তাদের মধ্যে ছয়জন জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের বক্তব্যে ও জবানবন্দিতে উঠে এসেছে প্রশ্নফাঁসে জড়িত আরও অন্তত ১১ জনের নাম। এর মধ্যে পিএসসির আরও পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম এসেছে। তারা বিভিন্ন সময়ে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসে জড়িত ছিলেন। তারা হলেন পিএসসির পরিচালক এনামুল বশির, সহকারী পরিচালক আবদুর রউফ ও নিখিল চন্দ্র রায় (মামলায় পলাতক আসামি), অফিস সহায়ক ডন কুমার ও গাড়িচালক আতাউর রহমান। এর বাইরে রয়েছেন, পিএসসির কর্মচারী-কর্মকর্তা, বিজি প্রেসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী। তারা পরীক্ষার বুথ পরিচালনা ও টাকা সংগ্রহ করতেন। এ ছাড়া, মামলায় উল্লিখিত পলাতক আসামিদের অবস্থান শনাক্তে কাজ চলছে।

পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে এ পাঁচজনকে একসময় চাকরিচ্যুত করেছিল পিএসসি। পরে এনামুল বশির ও আবদুর রউফ প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল এবং আদালতের মাধ্যমে চাকরি ফিরে পান। অফিস সহায়ক ডন কুমার ও গাড়িচালক আতাউর রহমান চাকরিচ্যুত হয়েছেন দুই বছর আগে। সহকারী পরিচালক নিখিল চন্দ্র রায় গত বছর অবসরে গেছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তারদের সঙ্গে ব্যাংকিং লেনদেন, জব্দ করা মোবাইল ফোনের তথ্য ও জবানবন্দির ভিত্তিতে ফেঁসে যেতে পারেন পিএসসির কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও প্রশ্নপত্র কিনে চাকরি পাওয়া কর্মকর্তারা।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা জানিয়েছেন, তারা বেশকিছু নতুন তথ্য পেয়েছেন। এগুলো যাচাই-বাছাই করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে গ্রেপ্তার আসামিদের রিমান্ডে আনা সম্ভব হলে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার প্রত্যাশা করছে সিআইডি।

পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তে দুদকে পিএসসির চিঠি : বিসিএসসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে পিএসসির ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তাসহ পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৯ জুলাই সাময়িক বরখাস্ত করে পিএসসি। ১০ জুলাই তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) চিঠি দেওয়া হয়। পিএসসি থেকে সাময়িক বরখাস্তরা হলেন, উপ-পরিচালক আবু জাফর ও জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক আলমগীর কবির, ডেসপাচ রাইটার খলিলুর রহমান এবং অফিস সহকারী সাজেদুল ইসলাম।

এখনো পলাতক ১৪ জন : প্রশ্নফাঁসের মামলায় পিএসসির সাবেক সহকারী পরিচালক নিখিল চন্দ্র রায়সহ এখন পর্যন্ত পলাতক রয়েছেন ১৪ জন। পলাতক অন্য আসামিরা, মো. শরীফুল ইসলাম, দীপক বণিক, খোরশেদ আলম খোকন, কাজী মো. সুমন, একেএম গোলাম পারভেজ, মেহেদী হাসান খান, গোলাম হামিদুর রহমান, মিজানুর রহমান, আতিকুল ইসলাম, এটিএম মোস্তফা, মাহফুজ কালু, আসলাম ও কৌশিক দেবনাথ।

সর্বশেষ খবর