রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

প্রশ্ন বেচে অনেকেই কোটিপতি

পরীক্ষার দুই দিন আগে রমনা পার্কে আবেদ আলীকে প্রশ্ন দেন সাজেদুল, বিনিময়ে নেন ৭৫ লাখ টাকা

সাখাওয়াত কাওসার

প্রশ্ন বেচে অনেকেই কোটিপতি

পরীক্ষার দুই দিন আগে অর্থাৎ ৩ জুলাই রাজধানীর রমনা পার্কে প্রশ্নপত্র দেয় সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম। ৪৪ জন প্রার্থীর জন্য সাজেদুলকে ৭৫ লাখ টাকা দেন পিএসসির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী। চুক্তি অনুসারে রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ পরীক্ষার ৪৪ জন প্রার্থীকে সাভারে একটি বাসায় (বুথ) রেখে ওই প্রশ্নপত্র সমাধান করানো হয়। শুক্রবার সকালে ওই বুথ থেকেই ৪৪ জন তাদের নিজ কেন্দ্রে চলে যান। বহুল আলোচিত পিএসসির প্রশ্নফাঁস মামলায় গ্রেফতারের পর অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ এবং আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এসব কথা জানিয়েছেন আবেদ আলী। একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। জানা যায়, প্রশ্ন বেঁচে অনেকেই হয়েছেন কোটিপতি। এর মধ্যে শুধু ড্রাইভার নন রয়েছেন অফিস সহায়ক এমনকি নিরাপত্তা প্রহরীও।

জবানবন্দিতে আবেদ আলী জানিয়েছেন, তিনি ১৯৯৭ সালে পিএসসির গাড়িচালক পদে যোগ দেন। শুরুতে ছিলেন পিএসসির সদস্য মুজিবুর রহমান বিশ্বাসের গাড়িচালক। পরে তিনি আরও অনেক সদস্যের গাড়ি চালান। একপর্যায়ে তিনি প্রশ্নফাঁস করা চক্রের সদস্যদের সঙ্গে জড়িয়ে যান। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আবেদ আলী জানিয়েছেন, পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকায় কন্ট্রাক্ট করা হয়। তাদের অনেকের কাছ থেকে অগ্রিম নিয়ে ৭৫ লাখ টাকা দুই দিন আগে সাজেদুলকে দিয়েছেন। প্রশ্নপত্র ছিল টাইপ করা। এরপর এগুলো নিয়ে যাওয়া হয় সাভারে। আগে থেকে ঠিক করা বুথে। ওই বুথের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল আগে থেকেই। সেখানেই প্রশ্নপত্র সলভ করা হয়। দুই দিন প্রার্থীদের সেখানে রেখে প্রস্তুতি নেওয়ানো হয়। আবেদ আলী তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন, পিএসসির অডিটর প্রিয়নাথ রায়ের সঙ্গেও কাজ করেছেন আবেদ আলী। প্রিয়নাথ রায় প্রথমে চাকরিপ্রার্থীদের আবেদ আলীর কাছে নিয়ে গেলে জনপ্রতি ২ থেকে ৫ লাখ টাকা করে অগ্রিম নেওয়া হতো। এরপর প্রশ্ন বুঝিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গ্রেফতারের পর অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। সৈয়দ আবেদ আলীসহ ছয়জন প্রশ্নপত্র ফাঁস-সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। তারা বলেছেন, তাদের হাত ধরে অনেকেই হয়েছেন বিসিএস ক্যাডার। সব ক্যাডারেই তাদের লোক আছে। সিআইডি সূত্র বলছে, পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মী গ্রেফতার শাহাদাতের গ্রামের বাড়ি নাটোরের সিংড়ায়। সেখানে তিনি বাগানবাড়ি ও জমি কিনেছেন। কাফরুলে তিনি যে ফ্ল্যাটে থাকতেন, সেই ফ্ল্যাটের আনুমানিক দাম ৩ কোটি টাকা। বিলাসবহুল ইন্টেরিয়র করেছেন কয়েক মাস আগে। পাসপোর্ট অফিসে চাকরির সুবাদে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মূল হোতা আবেদ আলী, খলিলুর রহমান ও সাজেদুল ইসলামের সঙ্গে পরিচয় হয় শাহাদাতের। গত ৬-৭ বছরে শাহাদাত ১০-১২ কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন পিএসসির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করে। তাকে এসব কাজে সহায়তা করতেন পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তর, ঢাকা প্রধান কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মামনুর রশিদ। তাকেও গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পলাতক যারা : পলাতক আসামিরা হলেন- পিএসসির সাবেক সহকারী পরিচালক নিখিল চন্দ্র রায়, মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম ভূঁইয়া, দীপক বণিক, খোরশেদ আলম, কাজী মো. সুমন, এ কে এম গোলাম পারভেজ, মেহেদী হাসান খান, গোলাম হামিদুল, মিজানুর রহমান, আতিকুল ইসলাম, এ টি এম মোস্তফা, মাহফুজ কালু, আসলামসহ অন্তত ৫০-৬০ জন।

সর্বশেষ খবর