রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

বেসরকারি খাতে ঋণে ভাটা

প্রবৃদ্ধি পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন - ব্যাংকের বিনিয়োগ বেড়েছে বন্ডে

শাহেদ আলী ইরশাদ

বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি আগের মাসের তুলনায় চলতি বছরের এপ্রিল মাসে শূন্য দশমিক ৫৯ শতাংশ কমে ৯ দশমিক ৯০ শতাংশে নেমে এসেছে। যা পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। একই সঙ্গে আগের বছরের এপ্রিলের তুলনায় ১২ শতাংশ কম। ব্যাংকাররা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ মন্দা হওয়ায় সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করেছে ব্যাংকগুলো। ব্যবসায়ীরা বলছেন, নিয়মিত ঋণ বিতরণ না করে ব্যাংকের বিনিয়োগ যাচ্ছে উচ্চসুদের সরকারি বন্ডে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের সিকিউরিটিজ মার্কেটের আকার বেড়েছে ১১ শতাংশ। বন্ড মাকের্টের আকারের সঙ্গে বেড়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিনিয়োগও। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শেয়ার কমেছে এই মার্কেটে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সিকিউরিটিজ মার্কেটের আকার ছিল ৫ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ট্রেজারি বন্ড ৪ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকা এবং ট্রেজারি বিল ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে বিনিয়োগ ছিল ৪ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি গত এপ্রিল মাসে ৯ দশমিক ৯০ শতাংশে নেমে এসেছে; যা আগের মাস মার্চে ছিল ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারি সিকিউরিটিজে বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিনিয়োগ বেড়েছে ৭ শতাংশ। গত অর্থবছর সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৭২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ট্রেজারি বন্ডে ২ লাখ ৫১ হাজার কোটি টাকা এবং ট্রেজারি বিলে ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা। আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা। একই সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ বাড়লেও বাংলাদেশ ব্যাংকের শেয়ার কমেছে ৩৫ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শেয়ার ছিল ৮৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেয়ারের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ব্যাংক খাতে ঋণের চাহিদায় মন্দা চলছে। তাই তারল্যের চাপ এখনো দৃশ্যমানভাবে দেখা যাচ্ছে না। বেসরকারি খাতের ঋণের চাহিদা কমার পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে অবকাঠামোগত অর্থায়ন, আমদানি-পরবর্তী অর্থায়ন এবং অফশোর অর্থায়ন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে, যা ব্যাংকগুলোকে ঝুঁকিমুক্ত সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগে আগ্রহী করেছে।

ব্যাংকারদের মতে, ওই সময়ে ব্যাংকগুলোতে গড় আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ শতাংশ যেখানে গড় ঋণ বৃদ্ধি মাত্র ৬ শতাংশ। শুধু ব্যাংক নয়, বড় ও মাঝারি আমানতকারীরা এখন স্বল্প মেয়াদে ১১ শতাংশের বেশি সুদ পেতে সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করছে। যেখানে বেশির ভাগ ভালো ব্যাংক সুদ দিচ্ছে ১০ শতাংশের কম। গত বছরের ডিসেম্বরে ব্যাংকে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ। পরের মাসে তা কমে হয় ১০ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে আরেকটু কমে ১০ দশমিক ৪৩ শতাংশে দাঁড়ায়। এরপর মার্চে ৯.৯৯ ও এপ্রিলে নামে ৮ দশমিক ৬৩ শতাংশে। মে মাসে কিছুটা বেড়ে ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ হলেও তা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ০.০৪ শতাংশ পয়েন্ট কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছর মে মাসে ব্যাংক খাতে আমানত দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৬০৮ কোটি টাকা, গত বছর যা ছিল ১৬ লাখ ৮১ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা, অর্থাৎ বেড়েছে ১৮ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজের নেতৃত্বে ব্যবসায়ীদের একটি দল সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় তারা সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিয়মিত ঋণ কার্যক্রমের পরিবর্তে উচ্চ সুদে সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করছে। যা বেসরকারি খাতের ঋণ পাওয়ার সুযোগ সংকুচিত করতে পারে। বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি মন্দার দিকে রয়েছে।

সর্বশেষ খবর