সোমবার, ১৫ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা
ফুটো হয়েছে কান, অল্পের জন্য রক্ষা, বন্দুকধারী নিহত, বাইডেনের নিন্দা

ট্রাম্পকে গুলি উত্তপ্ত যুক্তরাষ্ট্র

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

ট্রাম্পকে গুলি উত্তপ্ত যুক্তরাষ্ট্র

গুলিতে আহত ট্রাম্পকে সরিয়ে নেন নিরাপত্তা কর্মীরা

যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ায় নির্বাচনি সমাবেশে বক্তব্য রাখার সময় সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর গুলি চালিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। গুলিতে ট্রাম্পের ডান কানের ওপরের অংশ ফুটো হয়ে গেছে। অল্পের জন্য তিনি প্রাণে বেঁচে গেছেন। স্থানীয় সময় শনিবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটের দিকে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে ঘটনার সময় সন্দেহভাজন হামলাকারীও সিক্রেট পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। একই সঙ্গে নিহত হয়েছেন সমাবেশে অংশ নেওয়া এক সমর্থকও। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, ব্লুমবার্গ, এফবিআই, আলজাজিরা

খবরে বলা হয়, গুলি লেগেছে ট্রাম্পের ডান কানে। যদি একটু এদিক-সেদিক হতো তাহলে ঘটনা অন্যরকম হতে পারত। ৭৮ বছর বয়সি ট্রাম্প বেঁচে গেছেন এটিকে অনেকেই ‘অলৌকিক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। ট্রাম্পকে গুলি করার মুহূর্তের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে দেখা গেছে, যখন গুলিটি এসে আঘাত হানে তখন ট্রাম্প তার মাথাটি নড়াচড়া করছিলেন। যদি তিনি মাথাটি স্থির রাখতেন তাহলে গুলিটি কপালে এসে লাগত। মাথাটি অল্প একটু কাত করায় তিনি নিশ্চিত মৃত্যু থেকে বেঁচে গেছেন।

এ ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্বনেতারাও গুলির ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও গুলির ঘটনার নিন্দা করেছেন। তবে ট্রাম্পের সমর্থকরা এ হামলার জন্য বাইডেনকেই দায়ী করছেন। ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) বলেছে, ট্রাম্পকে হত্যার উদ্দেশ্যেই একাধারে গুলি চালানো হয়।

ঘটনা সম্পর্কে খবরে বলা হয়েছে, পিটসবার্গ থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার উত্তরে পেনসিলভেনিয়ার বাটলারে নির্বাচনি প্রচারণায় গিয়েছিলেন ট্রাম্প। সবেমাত্র বক্তৃতা শুরু করেছিলেন তিনি। তখনই তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে বন্দুকধারী। সঙ্গে সঙ্গেই সিক্রেট সার্ভিস এজেন্ট ও নিরাপত্তা কর্মীরা তাকে ঘিরে ফেলেন। তবে তার আগেই কানে ডান হাত চাপা দিয়ে মঞ্চে বসে পড়েন ট্রাম্প। প্রায় মিনিটখানেক পর ট্রাম্প উঠে দাঁড়ান। এ সময় ‘ফাইট ফাইট ফাইট’ বলে সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমেরিকাকে আবারও মহান করে তুলুন।’ হামলার পরপরই দ্রুত একটি গাড়িতে করে ট্রাম্পকে হাসপাতালে নিয়ে যান সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা। গুলিতে ট্রাম্পের ডান কান ফুটো হয়ে গেছে। অনেক রক্তপাত হলেও আঘাত গুরুতর নয় বলে চিকিৎসকরা জানান। পরে তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘এটা অবিশ্বাস্য যে আমাদের দেশে এরকম একটি ঘটনা ঘটেছে।’ নির্বাচনি প্রচারে অংশ নেওয়া যে সমর্থক গুলিতে নিহত হয়েছেন, তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান ট্রাম্প। খবরে বলা হয়, হামলার পরপরই ফোন করে ট্রাম্পের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কথা বলেন। পরে এক বিবৃতিতে বাইডেন জানান, ‘আমেরিকাতে এ ধরনের সহিংসতার কোনো স্থান নেই। এর নিন্দা জানাতে আমাদের অবশ্যই এক জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

উল্লেখ্য, আগামী ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তার আগে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনায় মার্কিন নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনার পর সিক্রেট সার্ভিসের ব্যর্থতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে রাজনীতিও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।

একাধিক গুলি ছুড়েছে হামলাকারী : প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে একাধিক গুলি ছুড়েছে হামলাকারী। পুলিশ জানায়, হামলাকারী মঞ্চ থেকে কিছুটা উঁচু অবস্থান থেকে গুলি ছোড়ে। ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারে থাকা এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, রাইফেল হাতে এক ব্যক্তিকে কাছের একটি ভবনের ছাদে হামাগুড়ি দিয়ে চলতে দেখেছিলেন তিনি। এমনকি নিরাপত্তা বাহিনীকে সতর্কও করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার আগেই গুলি ছুড়তে থাকে হামলাকারী। ট্রাম্পের বক্তব্য শুরুর ৫ মিনিটের  মাথায় এরকম দৃশ্য দেখেন তিনি।

হামলার পর এক বিবৃতিতে সিক্রেট সার্ভিস জানায়, ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারের মঞ্চ লক্ষ্য করে সন্দেহভাজন হামলাকারী একাধিক গুলি ছুড়েছে। সমাবেশস্থলের বাইরে থেকে হামলা চালায় বন্দুকধারী। এতে মঞ্চের সামনে দর্শকসারিতে থাকা এক সমর্থক নিহত হন। গুরুতর আহত হন আরও দুজন। গুলিতে ট্রাম্পের ডান কানের ওপরের অংশে ফুটো হয়ে গেছে। পরে সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যদের গুলিতে সন্দেহভাজন হামলাকারী ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। এফবিআইয়ের পিটসবার্গ ফিল্ড অফিসের দায়িত্বে থাকা বিশেষ এজেন্ট কেভিন রোজেক জানান, ‘বন্দুকধারী যতবার ট্রিগারে চাপ দিয়েছে, ততবারই গুলি বেরিয়েছে’।

আগেই বাইডেন যা বলেছিলেন : রিপাবলিকানদের নির্বাচনি সমাবেশে হামলার এ ঘটনার জন্য প্রাথমিকভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকেই দায়ী করছেন ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও সমর্থকরা। হামলার জন্য সিক্রেট সার্ভিসের দায়িত্বে অবহেলা এবং বাইডেন শিবিরের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছেন তারা। ট্রাম্পপন্থিদের দাবি, জনপ্রিয়তার দৌড়ে পিছিয়ে থাকা বাইডেন সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তার প্রতিদ্বন্দ্বীর ওপর ব্যক্তিগত আক্রমণের ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। যেমন গত সপ্তাহেই অর্থদাতাদের সঙ্গে একান্ত ফোনকলে তিনি বলেছিলেন, ‘ট্রাম্পকে নিশানা করার সময় এসেছে।’ দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের খবর অনুসারে, গত ৮ জুলাই ওই ফোনকলে বাইডেন বলেন, ‘আমার মাত্র একটি কাজ, সেটি হলো ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারানো। আমি পুরোপুরি নিশ্চিত যে, এর জন্য আমিই সেরা ব্যক্তি। সুতরাং আমাদের বিতর্ক নিয়ে কথা শেষ। এখন সময় ট্রাম্পকে বুলস আই-এ রাখার।’ উল্লেখ্য, তীর, গুলি বা ডার্ট নিক্ষেপের জন্য গোলাকার লক্ষ্যবস্তুকেই ‘বুলস আই’ বলা হয়। কেন্দ্রবিন্দুতে আঘাতের সুবিধার্থে এর ভিতরে বিভিন্ন আকারের রঙিন বৃত্ত আঁকা থাকে।

বন্দুক হামলার শিকার হওয়ার পরও দমেননি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পেনসিলভেনিয়া স্টেটের বাটলার সিটির একটি হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা প্রদানের পর ট্রাম্প সহকর্মীদের জানান, ১৫ জুলাই থেকে শুরু হওয়া রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় সম্মেলনে তিনি যোগদান করবেন। উইসকনসিন স্টেটের মিলওয়াকি সিটির ফিসার্ভ ফোরামে চার দিনব্যাপী এই সম্মেলনে দলীয় প্রতিনিধিরা নভেম্বরের নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে ট্রাম্পের নাম ঘোষণা করবেন। এ সম্মেলনে ২৪২৯ ডেলিগেট, ২৩২৫ প্লিজ ডেলিগেট এবং ১০৪ জন আনপ্লিজ ডেলিগেটের মধ্যে ১২১৫ জনের সমর্থন পেতে হবে ট্রাম্পকে। এরই মধ্যে সেটি প্রায় নিশ্চিত বলে রিপাবলিকান পার্টির নীতিনির্ধারকরা উল্লেখ করেছেন। উল্লেখ্য, নির্বাচনি বছরের শেষার্ধে দলীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ সম্মেলন ২০২০ সালের ২৪-২৭ আগস্টে ভার্চুয়ালে অনুষ্ঠিত হয়েছে নর্থ ক্যারোলিনার শার্লটি সিটির শার্লটি কনভেনশন সেন্টারে।

এদিকে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সব শীর্ষ নেতাই অভিন্ন বিবৃতিতে ট্রাম্পের নির্বাচনি সমাবেশে বন্দুক হামলার নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ইসরায়েল, ব্রিটেন, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের নেতারা ট্রাম্পের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানোর পাশাপাশি তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন।

সর্বশেষ খবর